মাসুদ হাসান রিদম,ঢাকা: নাশকতার শঙ্কায় দেশের সবগুলো কারাগারে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।শুক্রবার রাত থেকে এ অ্যালার্ট জারি করা হয় বলে জানা গেছে।
কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে এ অ্যালার্ট জারি করা হয়।একই সঙ্গে কারাগারে থাকা বন্দিদের খাবার, কারাগারে আসা কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। কারাগারে দর্শনার্থীরা তল্লাশির পর বন্দিদের সঙ্গে কেউ দেখা করতে পারবেন।এ ছাড়া কারা ফটকের সামনে বহিরাগত কেউ ঘোরাফেরা করতে পারবে না। কারাগারের ভেতরে-বাইরে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা যদি দায়িত্বে অবহেলা করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দর্শনার্থী তল্লাশির সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে অভ্যন্তরীণ নজরদারিও। যেসব সেলে জঙ্গিদের রাখা হয়েছে সেসব সেলে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর প্রক্রিয়াও চলছে। এখন বন্দি জঙ্গিদের মা, বাবা, ভাই, বোন ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। পরিবারের যারা দেখা করতে আসেন তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে নিশ্চিত হয়ে তবেই দেখা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তাদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা কী কথা বলে তা জানার জন্য গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও উপস্থিত থাকছেন সাক্ষাৎ কক্ষে।
কারা সূত্র জানায়, দেশের ৬৮টি কারাগারে প্রায় ৭০ হাজার বন্দি রয়েছে। গত মে মাস পর্যন্ত দেশের কারাগারগুলোতে জঙ্গি বন্দি ছিল ৬৬৫ জন। যার সঙ্গে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তারকৃত ৩৭ জঙ্গিও যোগ হচ্ছে। বন্দিদের মধ্যে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১ হাজার ৪৮ জন যার মধ্যে ২১ জন জঙ্গি। এদের মধ্যে দু’জনের রায় হয় ১০ বছর আগে কিন্তু এখনো কার্যকর হয়নি।
জানা গেছে, গত বছর জুনে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজিবি) শীর্ষ নেতা মাওলানা মাঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। ওই সময় তিনি তার অনুসারী মাওলানা মাইনুল ইসলাম ওরফে মাহিম ওরফে নানা ওরফে বদিউলকে একটি চিঠি পাঠান। সেই চিঠি উদ্ধার করেছিল র্যাব। সম্প্রতি চট্টগ্রামে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার পর বুলবুল নামে এক জেএমবি সদস্যের জবানবন্দিতেও কারাগার থেকে চিঠিতে নির্দেশনা দেয়ার তথ্য মিলেছে।
আরেক কারা কর্মকর্তা জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে অন্যতম জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আলাদা কক্ষে একা রাখা হচ্ছে। কাশিমপুর, চট্টগ্রাম কারাগারেও জঙ্গি নেতাদের আলাদা কক্ষে রেখে নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। প্রত্যেক জঙ্গিকে আলাদা করে পৃথক কক্ষে রাখা সম্ভব না হওয়ায় এখন নেতাদের আলাদা করা হচ্ছে।
কারা অধিদফতরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, দেশের সকল কারাগারের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। প্রতিদিন কারাগারের ভেতরে ও বাইরে বৃদ্ধি করা হয়েছে দৃশ্যমান টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি।
সূত্র জানায়, যে ২১ জন জঙ্গির ফাঁসির দ- হয়েছে তাদের মধ্যে ২০০৬ সালে হয়েছে ২ জনের। ২০০৮ সালে ৩ জন, ২০১২ সালে ১ জন ২০১৩ সালে দ- পেয়েছে ১১ জন। ২০১৪ সালে ফাসির দ- পেয়েছে ৫ জন।
এদিকে রেড অ্যালার্ট জারি হওয়ার পর শুক্রবার গভীর রাত থেকে কারাগারের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সাদাপোশাকে গোয়েন্দাদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ জেলার কারাগারগুলোতে পোশাক পরিহিত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এসব সদস্য কারা ফটকের সামনে অপরিচিত বা সন্দেহজনক কাউকে মনে হলে তার দেহ তল্লাশি করছেন।পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ অ্যালার্ট অব্যাহত থাকবে।