দুপুরের রুপ। গ্রাম বালিকার মতো উড়ু উড়ু করছিল। ক্ষণিক দাঁড়াচ্ছে, আবার উড়ছে। চঞ্চলতা তার আপাদমস্তক। তখনও শুভ্রতায় ভরা। সাদায় সাদায় অঙ্গ সাজিয়ে পাহাড়কে জড়িয়ে ধরছে। নিমিষেই উড়াল দিয়ে আবার অন্য পাহাড়ে মিলে যাচ্ছে।
মেঘ বালিকা। পাহাড়ের সঙ্গেই তার মিতালি। পাহাড়েই তার বাস। মেঘ বালিকা রাঙ্গামাটির সাজেক ভেলির পাহাড়কে সাজায় মন মাধুরী দিয়ে।
রৌদ্র দুপুর। মেঘেরা তখন পাহাড়ের কোলে বসেছে। সবুজের কোলে সাদা মেঘেরা হাসতে হাসতে লুটে পড়ছে। সাদা-সবুজের মাখামাখিতে প্রকৃতি তার অপরূপ সৌন্দর্য্য মেলে ধরছে। এ পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে ও পাহাড়ে চোখ রাখলে মনে হবে যেন শরৎ-এর কাশবন। মনে হবে কোনো নদী চরের কাশবন তার ফুলে ফুলে হাতছানি দিচ্ছে।
দুপুর গড়িয়ে বিকাল আসতেই রূপের পরিবর্তন। সাদা মেঘে তখন খানিকটা কালো ভর করেছে। যেন প্রজাপতির পাখায় সাদা-কালোর মেলবন্ধন। সময় গড়াতেই মেঘে কালো রূপের আধিক্য। বাতাসে মেঘেরা ধেয়ে আসলেও শান্তির বার্তা দিয়ে গেল। বৃষ্টির আগমনী বার্তা। বাতাসে হাত নেড়ে পর্যটকদের অনেকেই তখন মেঘের উপস্থিতি পরখ করছিল। শিশির কণার পরশে গা ভিজিয়ে মেঘেরাও জানান দিচ্ছিল বৃষ্টি আসছে। পর মুহূর্তেই ঝুম বৃষ্টি। সাজেকের পাহাড় চূড়ায় তখন মেঘ-বৃষ্টি আর পর্যটকের মিলনমেলা।
অসহনীয় গরম উবে গেছে আরও আগেই। তবুও অমন বৃষ্টিতে ভিজতে কার না মন চায়? বৃষ্টির সঙ্গে ক্ষণে ক্ষণে বিজলীর ঝলক। গুড় গুড় মেঘের ডাক।
তবে তা ভ্রমণ পিয়াসী পর্যটক মনে বাঁধ সাজতে পারেনি। বৃষ্টিতে মন মেলাতে পর্যটকরা কটেজ ছেড়ে পাহাড় চূড়ায়। প্রশান্তির সুবাতাস সকলের দেহ-মনে। বাদল ভেজা বিকাল না ফুরাতেই সন্ধ্যা নামিয়ে দিয়ে মেঘেরা বিদায় নিল। বিদায় নিয়েছে বৃষ্টিও। রাত না হতেই রাতের আঁধার নেমে এল পাহাড়ের গায়ে। ঝিঁঝিঁ পোকা আর জোনাকিরা তখন পাহাড় পাহারায়।
সাজেকে পাখ-পাখালির ডাকে ভেঙ্গে যায় রাতের নিস্তবতা। পূব পাহাড়ের আড়াল থেকে সূর্য তখন উঁকি দিচ্ছে। ততক্ষণে পাহাড়ীরাও বেড়িয়ে পড়েছে কর্মযজ্ঞে। স্নিগ্ধতা আর শুভ্রতার পসরা সাজিয়ে ফের উড়ে উড়ে আসেছে মেঘ বালিকারা। ফের সবুজ পাহাড়গুলো বরফের চাদরে ঢেকে দিচ্ছে তাদের হেয়ালি মনে।