1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha : Sardar Dhaka
  2. nafij.moon@gmail.com : Nafij Moon : Nafij Moon
  3. rafiqul@mohajog.com : Rafiqul Islam : Rafiqul Islam
  4. sardar@mohajog.com : Shahjahan Sardar : Shahjahan Sardar
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪০ পূর্বাহ্ন

তিনি বেঁচে থাকবেন মুক্তির পথ অন্বেষায়

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৭
  • ৩৫৩ বার

রাশেদ খান মেনন : ১৪ বছর আগে ২০০৩ সালের ১৭ জানুয়ারি চলে গেলেন কমরেড অমল সেন। তাঁর ভক্ত-অনুরাগীদের আফসোস, কেন তিনি শতবর্ষী হলেন না। সে রকমই আশা ছিল অনেকের। কিন্তু জীবন তার নিজের নিয়মেই চলে। তার ওপর কারও হাত নেই। প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম অনুসারেই তাঁকে চলে যেতে হয়েছে। কিন্তু পেছনে ফেলে গেছেন পরিপূর্ণ এক জীবন। সেটা কেবল এক সাধারণ জীবন ছিল না। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ছিল তাঁর এই জীবন।
তাঁর কৈশোরের কথাই যদি ধরা যায়, তাহলে দেখা যাবে, এক কিশোর দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য কী পরিমাণ সাহস নিয়ে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন। সেই স্কুলে পড়া অবস্থাতেই তিনি যোগ দিয়েছিলেন ‘অনুশীলন’ সমিতিতে।
আবার যৌবনেই তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে এসে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন কৃষকদের সংগঠিত করার কাজে। আর এ কারণেই নিজ ঘর ছেড়েছিলেন। অবস্থান নিয়েছিলেন ওই কৃষকের সর্বনিম্ন অংশের বাড়িতে।
এই কৃষক সংগঠন করতে গিয়ে গড়ে তোলেন কৃষকের তেভাগা আন্দোলন। আর যশোর-নড়াইলের এই তেভাগা আন্দোলনও উত্তর বাংলার তেভাগা আন্দোলনের চেয়ে বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে ভিন্ন। যশোর-নড়াইলের এই কৃষক আন্দোলন কৃষকের অর্থনৈতিক দাবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, ওই আন্দোলন বিস্তৃত হয়েছে ওই অঞ্চলের কৃষকদের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায়, সমাজজীবনের পরিবর্তনে।
‘নড়াইলের তেভাগা সংগ্রামের সমীক্ষায় কমরেড অমল সেন লিখেছেন, ‘তেভাগা আন্দোলনের ফলাফলের দিক দিয়ে নড়াইলের তেভাগা সংগ্রামকে বলা চলে একক ব্যতিক্রম।… একমাত্র নড়াইল অঞ্চলেই তেভাগার অর্থনৈতিক দাবির দিকটাকে ছিনিয়ে নিতে পেরেছিল তেভাগার সংগ্রাম।’
যশোর-নড়াইলের তেভাগা সংগ্রামের দিকে দেখলে দেখা যায় যদিও ওই আন্দোলন ব্রিটিশ রাজের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ফল লাভ করতে পারেনি, তবে সংগঠিত কৃষকের সংগ্রামের প্রচণ্ড শক্তির দিকটি সাধারণভাবে কৃষকের মধ্যে এবং ব্যাপক জনগণের মধ্যে প্রত্যক্ষভাবে এই বিষয়টি উন্মোচিত করেছিল যে রাষ্ট্রশক্তি ও সামাজিক প্রতিপত্তিবানদের তুলনায় তারা অধিক শক্তিমান। এবং তাদের মোকাবিলায় কৃষকের শক্তি বিজয় অর্জন করতে পারে।

কেবল এই উপলব্ধিই নয়, কৃষকের আন্দোলনের মুখে যখন রাষ্ট্রশক্তি পিছু হটেছে, তখন প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এমনকি বিচার-আচার সর্বক্ষেত্রেই কৃষকেরা সক্ষম। ব্রিটিশ শাসকেরা ভারত ছেড়ে যাওয়ার সময় তাকে দুই ভাগে বিভক্ত করার যে কাজটি সম্পন্ন করেছিল, তার সামনে কৃষকের রাজনৈতিক শক্তি বিকশিত হতে পারেনি, বরং সমগ্র আন্দোলনকেই পিছু হটতে হয়েছে। কিন্তু তার মধ্য দিয়ে যশোর-নড়াইলের তেভাগা সংগ্রামের যে বিশেষ বৈশিষ্ট্য তা হলো, ভারত বিভক্তকালীন তীব্র সাম্প্রদায়িকতার সময়ও এখানের তেভাগা অঞ্চল তাতে ভেসে যায়নি। এক অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনায় ওই অঞ্চলের মানুষ এতই উদ্বুদ্ধ ছিল যে ভারত বিভক্তির সময়কার দাঙ্গার প্রকোপ ওই অঞ্চলে কোথাও পড়েনি।

কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা, অমল সেনের নেতৃত্বাধীন ওই তেভাগার সংগ্রাম ওই অঞ্চলের কৃষকের জীবনে সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। অমল সেনের নিজের ভাষাতেই ওই কৃষকেরা নিজেদের খুঁজে পেয়েছিলেন—‘They found themselves’। যুগ-যুগান্তর ধরে স্তূপীকৃত সংস্কারের জঞ্জাল থেকে এক ঝটকায় মুক্ত হয়ে নিজেদের মানবিক সত্তার হীরকখণ্ডটি উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল।

কমরেড অমল সেন তাঁর যৌবনের দিনগুলোর এই সংগ্রামের ঐতিহ্যকে বহন করেছেন সারা জীবন ধরে। ভারত-পাকিস্তান দেশভাগের পর সহযোদ্ধা কমরেড এবং নিকটাত্মীয়রা সব দেশ ছাড়লেও তিনি দেশ ছাড়েননি। পাকিস্তানের ২৪ বছরের ১৯ বছর তিনি কাটিয়েছেন কারাগারে। সেখান থেকে যে কয়বার মুক্তি পেয়েছেন আবার আত্মনিয়োগ করেছেন একই কাজে। এবার কেবল কৃষকের নড়াইলেই নয়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কঠিন কঠোর সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন তিনি।

বিশেষ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বাম কমিউনিস্টদের মধ্যে যে বিভ্রান্তি চরম সর্বনাশের পথে ঠেলে দিয়েছিল এ দেশের অগুনতি নতুন প্রজন্মের তরুণ কমিউনিস্টদের, তার বিরুদ্ধে একরোখা লড়াইয়ে তিনি কেবল তাঁর বড় অংশকেই নয়, স্বাধীনতার পরপরই একত্র করেছিলেন কমিউনিস্টদের বিভিন্ন গ্রুপকে একই পার্টির পতাকাতলে। তারই ধারাবাহিকতায় কমিউনিস্ট ঐক্যের প্রতীক হিসেবে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।

বয়সের কারণে সভাপতির দায়িত্ব থেকে অবসর নেওয়ার পরও পার্টি ও পার্টি কমরেড কেবল নন, এ দেশের বাম আন্দোলন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কাজ ও তাঁর নেতা-কর্মীদের ব্যাপারে সব সময় খোঁজ নিতেন, পরামর্শ দিতেন।

এ দেশের মুক্তির পথ অন্বেষায় তিনি যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন। তাঁর ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

রাশেদ খান মেনন: সভাপতি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী।

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023 Mohajog