1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha : Sardar Dhaka
  2. nafij.moon@gmail.com : Nafij Moon : Nafij Moon
  3. rafiqul@mohajog.com : Rafiqul Islam : Rafiqul Islam
  4. sardar@mohajog.com : Shahjahan Sardar : Shahjahan Sardar
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৫ পূর্বাহ্ন

একেকটা বই একেকটা জানালা

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
  • ৩৭৫ বার

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ : বই আমাদের কী উপকার করে, এ প্রশ্নের উত্তর অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের চেয়ে ভালো আর কে দিতে পারেন! তিনি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা, আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, অসাধারণ একজন বক্তা। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের একাদশ শ্রেণির বইপড়া কর্মসূচির উদ্বোধনে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথোপকথনে তিনি বলেছিলেন বই পড়ার উপকারিতার কথা।

তরুণেরা শুধু ‘মুখবই’তেই ডুবে থাকে না। মলাটবন্দী কাগুজে বইও তাঁদের রোমাঞ্চিত করে, ভাবায়।

বলো তো এটা কী? (হাত উঁচু করে দেখিয়ে)। (একজন ছাত্র: হাত।)

বলো তো একজন মানুষ তার নিজের কয় হাতের সমান?

(একজন ছাত্রী: সাড়ে তিন হাতের।)

এখন বলো তো শুধু নিজের হাতের সাড়ে তিন হাত লম্বা একটা ঘর হলে কি আমাদের চলে?

(একজন: চলে।) (সবার হাসি)

বেশ। তাহলে এসো সাড়ে তিন হাত লম্বা একটা লোহার বাক্স তৈরি করে তোমাকে তার মধ্যে ঢুকিয়ে তালা মেরে সারা রাত দাঁড় করিয়ে রাখি। দেখি কেমন লাগে তোমার?

(ছাত্রছাত্রীদের হাসি)

না, সাড়ে তিন হাত ঘর হলে আমাদের চলে না। বলো তো কত বড় ঘর আমাদের দরকার?

(একজন ছাত্রী: অনেক বড় ঘর।)

হ্যাঁ, যে মানুষ যত বড়, তার তত বড় ঘর দরকার। যে রাজা, তার বাঁচার জন্য গোটা রাজ্য লাগে। না হলে তার বাতাসের অভাব হয়ে যায়। তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।

কেবল বড়দের কেন, আমাদের সবারই বড় ঘর দরকার। নিশ্বাস নেওয়ার মতো, নিজেকে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো বড়সড় একটা ঘর। আমরা তো আশরাফুল মাখলুকাত, কত বুদ্ধি, মেধা, আলো, প্রেম, ক্ষমা নিয়েই না আমাদের জন্ম! এমন যারা বড়, তাদের কি ছোট ঘর হলে চলে? এবার আমার একটা কথার উত্তর দাও। কেবল বড় ঘর হলেই কি আমাদের চলে? নাকি সে ঘরের মধ্যে আরও কিছু থাকতে হয়?

(সবাই নিঃশব্দ)

বলো তো যে ঘরের জানালা নেই, তার নাম কী?

(একজন ছাত্র: কবর!)

ঠিক বলেছ। কবরের জানালা নেই। কিন্তু আমরা অত আধ্যাত্মিক ঘরদোর নিয়ে টানাহেঁচড়া করব না। এসো আমরা এমন ঘর খুঁজি যে ঘর সব সময় আমাদের চারপাশে দেখি, অথচ যার জানালা রাখা হয় না—বলো তো কী নাম সেই ঘরের?

(একজন ছাত্র: গুদাম?)

হ্যাঁ, গুদাম। গুদাম। সেই ঘর, যাতে জানালা নেই।

এখন বলো তো গুদামে কি মানুষ থাকতে পারে?

(ছাত্রেরা: না।)

সত্যি ওখানে মানুষ থাকা সম্ভব নয়। যার জীবন আছে, বিকাশ আছে, স্বপ্ন আছে, তার থাকা সম্ভব নয়। ওখানে যা থাকতে পারে, তা মানুষ নয়, মাল। চালের বস্তা, সিমেন্টের বস্তা, আলুর বস্তা, গমের বস্তা। বলো তো কেন মানুষ সেখানে থাকতে পারে না?

(একজন ছাত্রী: আলো নেই বলে।)

হ্যাঁ, আলো নেই। ঠিক। আর?

(একজন ছাত্র: বাতাস নেই বলে।)

হ্যাঁ, বাতাস নেই। আর?—

(একজন ছাত্রী: বাতাসের চলাচল নেই বলে।)

তোমাদের সব কথা ঠিক, সব সত্যি। আসলে চারপাশের আলো-ঝলমল বিপুল পৃথিবীটাই যে নেই ওর মধ্যে! চারপাশের দৃশ্যের জগৎ, রূপের জগৎ, আলোর জগৎ, মুক্তির জগৎ—কিছুই নেই। এ ঘর বদ্ধ। এ ঘরে জানালা নেই। অথচ এই যে বিরাট ঘরটায় এই মুহূর্তে তোমরা বসে আছ, কত জানালা দেখেছ এর? মনে হয় যেন জানালাই আছে ঘরটাতে, দেয়ালই নেই। কেন এত জানালা এতে? বলো তো একটা জানালা দিয়ে আমরা কী পাই? তাকাও না আমার ডান পাশের এই জানালা দিয়ে। কী দেখছ?

(একজন ছাত্র: একটা দৃশ্য।)

হ্যাঁ। গাছপালা, একটা পুকুরের খানিকটা আর একটা ছোট্ট মাঠ। এবার তাকাও পরের জানালা দিয়ে। একই দৃশ্য দেখছ কি? নাকি সম্পূর্ণ নতুন কিছু?

(ছাত্রেরা: সম্পূর্ণ নতুন।)

এবার তাকাও ওই জানালায়। আগের দৃশ্যগুলোই দেখছ, নাকি আরও নতুন কিছু?

(কয়েকজন ছাত্রছাত্রী: আরও নতুন কিছু।)

এবার তাকাও না সব কটি জানালা দিয়ে। কী দেখা যাচ্ছে? সারা বিশ্ব, তাই না?

হ্যাঁ, সারা পৃথিবী। তোমরা যাতে প্রাণখুলে এখানে বাঁচতে পারো, তার রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ সবকিছু জীবনের ভেতরে আহরণ করতে পারো, তাই এই ঘরে এত জানালা। গুদামের ভেতরে এই বিপুল বিশ্বজগৎ নেই। তাই সেখানে মানুষ বাঁচে না।

তোমরাই বলেছ বাঁচার জন্য বড় ঘর দরকার। বড় ঘর মানে কী? বড় ঘর মানে আলো-বাতাস-জানালা-দরজা-বিশ্বচরাচরওয়ালা একটা ঘর। এই ঘর বহু অনিন্দ্য জিনিস দিয়ে আমরা বানাতে পারি।

যেসব অনবদ্য জানালা দিয়ে আমরা জীবনের ঘর সুন্দর আর খোলামেলা করতে পারি, বই তার একটা। ওই যে জানালার কথা বললাম, আমরা কি একেকটা বইকে অমনি একেকটা জানালার সঙ্গে তুলনা করতে পারি?

(একজন ছাত্র: পারি!)

কীভাবে?

একেকটা জানালার মতো একেকটা বইও আমাদের আলাদা আলাদা জগৎ দেখায়।

ঠিক বলেছ। ধরো, প্রাচীন মিসরের ওপর একটা বই পড়লাম। কী হলো তখন? আমাদের চোখের সামনে প্রাচীন মিসর, ফারাও, পিরামিড আর মমির জগৎটা জ্বলজ্বল করে উঠল। যদি ক্যাপ্টেন কুকের ভ্রমণকাহিনি পড়ি, তবে তাঁর ভ্রমণপথ, অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার, প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপ, স্থানীয় অধিবাসীদের হাতে তাঁর মৃত্যু—এসব ছবি চোখের ওপর জ্বলজ্বল করে উঠল। যদি চাঁদের অভিযানের গল্প পড়ি, তবে মহাশূন্যচারী, নভোযান, চাঁদের পিঠে মানুষের অবতরণ—এমন ছবিগুলো আমাদের চোখের সামনে জেগে উঠল। এমনিভাবে আমরা যদি এক এক করে এক হাজার বা পাঁচ হাজার বই পড়ে ফেলতে পারি, তবে কী হবে? আমাদের জীবনটা এক হাজার বা পাঁচ হাজার বড় উজ্জ্বল জানালাওয়ালা এক বিশাল খোলামেলা বিশ্ব হয়ে যাবে। আমরা একটা বিশাল বিচিত্র পৃথিবীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকব। বইয়ের এই অসম্ভব ক্ষমতার কথা তোমরা ভুলো না।

সূত্র: সময় প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের বক্তৃতাসংগ্রহ (দ্বিতীয় খণ্ড) এর ‘ব্রাক্ষ্মণের বাড়ির কাকাতুয়া’ থেকে সংগৃহীত

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023 Mohajog