1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha : Sardar Dhaka
  2. nafij.moon@gmail.com : Nafij Moon : Nafij Moon
  3. rafiqul@mohajog.com : Rafiqul Islam : Rafiqul Islam
  4. sardar@mohajog.com : Shahjahan Sardar : Shahjahan Sardar
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ন

যুদ্ধাপরাধ: বিচারের মুখে গফরগাঁওয়ের ১১ জন

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
  • ৪০১ বার

প্রতিবেদক : একাত্তরে যুদ্ধাপরাধ মামলায় ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের ১১ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহের গফরগাঁও থানা বর্তমানে পাগলা থানার নিগুয়ারী ইউনিয়নের সাধুয়া ও টাঙ্গাব ইউনিয়নের রৌহা গ্রামে হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের মতো যুদ্ধাপরাধের সাতটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।

সোমবার ঢাকার ধানমণ্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে ৪৮তম তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার সময় এসব তথ্য তুলে ধরেন সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক হান্নান খান।

তিনি বলেন, “প্রায় তিন বছর তদন্ত করে আমরা এই ১১ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছি। আজকেই এটি প্রসিকিউশনে জমা দেওয়া হবে।”

এই ১১ আসামি একাত্তরে রাজাকার বাহিনীর সদস‌্য ছিলেন। এদের মধ্যে পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন বলে হান্নান খান জানান। এদের মধ‌্যে মো. খলিলুর রহমান (৬২) জাতীয় পার্টির সমর্থক।

গ্রেপ্তার আসামিদের মধ‌্যে মো. সামসুজ্জামান ওরফে আবুল কালাম, মো. রইছ উদ্দিন আজাদী জামায়াতে ইসলামীতে যুক্ত ছিলেন। আব্দুল মালেক আকন্দ ওরফে আবুল হোসেন বিএনপিতে সক্রিয় ছিলেন বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তারা।

মো. আব্দুল্লাহ রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও ডানপন্থি রাজনীতিরই সমর্থক বলে হান্নান খান জানান।

সংবাদ সম্মেনে তদন্তের নানা দিক তুলে ধরে তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সানাউল হক।

তিনি জানান, এ মামলার তদন্ত শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর। শেষ হয়েছে চলতি মাসের ১৬ তারিখে।

এ মামলায় তদন্তকালে ৬০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হলেও ২৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এছাড়া জব্দ তালিকার সাক্ষী আরও দুজন।

সানাউল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় চারজনকে হত্যা ও ৯ জনকে আটক করে নির্যা্তনের অভিযোগ রয়েছে গ্রেপ্তার পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে।

মামলাটি তদন্ত করেছেন সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম।

এক প্রশ্নের জবাবে সানাউল বলেন, “তদন্তকালেই এ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতক আসামিরা দেশে আছে বলেই মনে হয়। তাদের গ্রেপ্তার চাওয়া হয়েছে।”

এই আসামিরা স্বাধীনতার পর গফরগাঁও থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বসবাস শুরু করে এবং এক পর্যায়ে ওই সব এলাকাতেই স্থায়ী হন বলে তদন্ত কর্মকর্তারা জানান।

আসামিদের বিরুদ্ধে ৪ অভিযোগ

অভিযোগ-১

১৯৭১ সালের ১৬ অগাস্ট (৩০ শ্রাবণ ১৩৭৮ বাংলা) বেলা আনুমানিক ১২টার দিকে গ্রেপ্তার ৫ জন ও অভিযুক্ত অন্য ৬ জন আসামিসহ ১০/১২ জন রাজাকার ময়মনসিংহ জেলার সাবেক গফরগাঁও বর্তমানে পাগলা থানার নিগুয়ারী ইউনিয়নের সাধুয়া গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাহাবুদ্দিন ওরফে খোকা খান, স্বাধীনতার সপক্ষের নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালি হাশেম খান, আনিসুর রহমান খানদের বাড়ি ঘেরাও করে।

তখন রাজাকারদের দেখে ভয়ে পালানোর সময় আসামিরা স্বাধীনতা সপক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র আবুল হাশেম খান ও আনিছুর রহমান খানকে নির্যাতন করে। রাজাকাররা তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে এবং আসামিরা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাহাবুদ্দিন ওরফে খোকা খানকে অপহরণ করে আটক করে নিগুয়ারী ইউনিয়নের নিগুয়ারী বাজার ত্রিমোহনী রাজাকার ক্যাম্প নিয়ে ৭ (সাত) দিন অবৈধভাবে ওই রাজাকার ক্যাম্পে আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন করে ২৩ আগস্ট ১৯৭১ (বাংলা ৬ ভাদ্র ১৩৭৮) রাতে কোনো সময় হত্যা করে লাশটি নদীতে ফেলে দেয়।

অভিযোগ-২

১৯৭১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর (৫ আশ্বিন ১৩৭৮) দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে আসামিরা এবং কয়েকজন পাকিস্তান আর্মির সদস‌্য পাগলা থানাধীন টাঙ্গাব ইউনিয়নের রৌহা গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ও স্থানীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা নূর হোসেন ব্যাপারীর বাড়ি ঘেরাও করে। তারা বাড়িতে এবং সামনের দোকান ঘর লুটপাট করে নূর হোসেন ব্যাপারীসহ আটজনকে নির্যাতন করতে করতে বারইহাটি বাজারে রাজাকারদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। টাকা নিয়ে কয়েকজনকে ছেড়ে দিলেও নূর হোসেন ব্যাপারীকে আটক রেখে ওই রাতে কালিবানার নদীর ঘাটে (চরহী ঘাট) নিয়ে গুলি করে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেয়।

অভিযোগ-৩

১৯৭১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর (৭ আশ্বিন ১৩৭৮) আছরের নামাজের পর আসামিরা পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর ৪/৫ জন সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে পাগলা থানার সাধুয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদের (মৃত) বাবা স্বাধীনতার পক্ষের স্থানীয় সংগঠক জৈধর খান ওরফে তারু খাঁর বাড়িতে লুটপাট চালানোর পর অগ্নিসংযোগ করে। জৈধর খাঁ ও তার ভাই জমধর খাঁকে ত্রিমোহনী বাজারে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। ক‌্যাম্পে আটকে রেখে নির্যাতনের পর ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে তাদের গুলিতে হত‌্যা করে লাশ সুতিয়া নদীতে ফেলে দেয় আসামিরা।

অভিযোগ-৪

১৯৭১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর (১০ আশ্বিন ১৩৭৮ বাংলা) সকাল ৯/১০ টার দিকে আসামিরাসহ আরও ১০/১২ জন রাজাকার পাগলা থানার সাধুয়া গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ধনাঢ্য ব্যক্তি তৈয়ব আলী সরকারের বাড়ি ঘেরাও করে তাকে ও তার মুক্তিযোদ্ধা ছেলেকে খোঁজ করে না পেয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। দুদিন পর তৈয়ব আলী সরকারসহ তিনজনকে ধরে রে পাত্থার বিলের ঘাটে রাখা রাজাকারদের নৌকায় তোলা হয়। তখন ৪ হাজার টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে একজনকে ছেড়ে দেয়, একজনকে অমানবিক নির্যাতন করে মৃতপ্রায় অবস্থায় বিলের পাড়ে ফেলে দেয়। তৈয়ব আলী সরকারকে সাধুয়া পাত্থার বিলের পানিতে চুবানো হয়। মৃতপ্রায় অবস্থায় নৌকায় তুলে রাজাকাররা হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে তাকে জখম করে। এরপর লাথি মারতে মারতে নৌকা থেকে বিলে ফেলে দেয়। তিন দিন পর তৈয়ব আলী সরকারের লাশ বিলে ভেসে উঠলে স্থানীয়রা লাশ পারিবারিক করবস্থানে দাফন করে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023 Mohajog