আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ২০৪০ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী প্রতি চারজনের একজন শিশু চরম পানিসংকটের মধ্যে জীবন যাপন করবে। বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘ভবিষ্যতের তৃষ্ণা: পরিবর্তিত জলবায়ুতে পানি ও শিশু’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৪০ সাল নাগাদ বিশ্বের প্রায় ৬০ কোটি শিশু চরম পানিসংকটপূর্ণ এলাকায় বসবাস করবে।
জলবায়ু পরিবর্তন নিরাপদ পানিস্বল্পতার একটি কারণ হলেও ইউনিসেফ বলছে, পানির উৎসের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অনিবার্য নয়। তবে পানির অপ্রাপ্তির কারণে মারাত্মক জীবনসংকটে পড়বে শিশুরা।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেক বলেন, ‘পানি হলো প্রাথমিক প্রয়োজন, এটি ছাড়া কোনো কিছুই বাড়তে পারে না। অথচ বর্তমানে গোটা বিশ্বে লাখ লাখ শিশু নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে; যা তাদের জীবনকে বিপন্ন করছে। এসব শিশুর স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে, যা পরবর্তী সময়ে তাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করবে। এই সংকট বাড়তেই থাকবে যদি না আমরা এখনই সমষ্টিগত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করি।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বিশ্বের ৩৬টি দেশে চরম পানিসংকট রয়েছে। এর মূল কারণ চাহিদার বিপরীতে নবায়নযোগ্য জোগানের ব্যাপক স্বল্পতা। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও সমুদ্রসীমার উচ্চতা বৃদ্ধি, ব্যাপক বন্যা, খরা ও মেরুতে সঞ্চিত বরফ গলতে শুরু করায় পানির প্রাপ্যতা ও মানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং সেই সঙ্গে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থায়।
জনসংখ্যার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে পানির ব্যবহার। শিল্পায়ন ও নগরায়ণের কারণেও পানির চাহিদা ও ব্যবহারে পরিবর্তন আসছে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় চলা সংঘর্ষের কারণেও শিশুদের জন্য নিরাপদ পানি পাওয়ার বিষয়ে সংকট তৈরি হচ্ছে। আর এসব কারণে শিশুরা নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে শিশুদের মাঝে ডায়রিয়া, কলেরাসহ পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, খরাপীড়িত এলাকার অনেক শিশু সারা দিন পানির খোঁজের অতিবাহিত করে। স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায় না। বিশেষ করে এ ক্ষেত্রে মেয়েশিশুরা রয়েছে সবচেয়ে ঝুঁকিতে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ৬৬ কোটি মানুষ পর্যাপ্ত পানি পায় না। প্রায় ৯৫ কোটি মানুষ শৌচাগার ব্যবহার করে না। পাঁচ বছরের নিচে ৮০০ শিশু প্রতিদিন ডায়রিয়া বা বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে মারা যায়। পানি সংগ্রহ করতে দৈনিক ২০ কোটি ঘণ্টা ব্যয় করে নারী ও মেয়েশিশুরা।
সংস্থাটি মনে করে, বিভিন্ন দেশের সরকারকে পানির পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতেই হবে। সবকিছুর ওপরে রয়েছে শিশুদের ঝুঁকির বিষয়টি। তাই সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
অ্যান্থনি লেক বলেন, ‘পরিবর্তনশীল জলবায়ুতে যারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে, তাদের বিষয়ে কাজ করতে আমাদের পন্থা পাল্টাতে হবে। সবচেয়ে কার্যকর উপায়, আমরা যা করতে পারি, তা হলো তাদের জন্য নিরাপদ পানির সুবিধা সুরক্ষিত করা।’