1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha : Sardar Dhaka
  2. nafij.moon@gmail.com : Nafij Moon : Nafij Moon
  3. rafiqul@mohajog.com : Rafiqul Islam : Rafiqul Islam
  4. sardar@mohajog.com : Shahjahan Sardar : Shahjahan Sardar
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪২ পূর্বাহ্ন

হাওরে মরেছে ৪১ কোটি টাকার মাছ

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৭
  • ৩৯৬ বার

প্রতিবেদক : হাওরের পানিদূষণে প্রায় ৪১ কোটি টাকার ১ হাজার ২৭৬ টন মাছ মারা গেছে। এ ছাড়া মারা গেছে ৩ হাজার ৮৪৪টি হাঁস। পানিতে অক্সিজেন একেবারেই কমে যাওয়ায় এবং অ্যামোনিয়া ও অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে মাছ মারা গেছে।

সোমবার মৎস্য অধিদপ্তর হাওরের পরিস্থিতি নিয়ে এসব তথ্য জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এক প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। হাওরের পানিতে ধানগাছ পচার কারণে সেখানে প্রাকৃতিক খাদ্য প্লাঙ্কটন তৈরি হওয়ায় এবার মাছের পোনা আগাম অবমুক্ত করা গেলে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে—এ কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ। তিনি বলেন, ‘সকালে আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদনটি পাঠিয়েছি।’ হাওরের এমন বিপর্যয়ের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বছর মার্চ মাসের আগাম বৃষ্টির কারণে হাওর অঞ্চলে সৃষ্ট বন্যায় নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় আগাম বন্যা দেখা দেয়। আগাম বন্যায় হাওর অঞ্চলের ধানখেত তলিয়ে যাওয়ায় কাঁচা ধানগাছ ও ধানের থোড়ে পচন ধরে। এতে হাওরের পানি ধীরে ধীরে দূষিত হয়ে পড়ে এবং এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে হাওরে মাছের মড়ক দেখা দেয়। তবে পানিতে ইউরেনিয়ামের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

জমিতে কীটনাশক ছিটানোর কারণে পানি দূষিত হয়েছে কি না, জানতে চাইলে সৈয়দ আরিফ আজাদ বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত নই। বিষয়টি পরীক্ষা করতে গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছে। পাঁচ-ছয় দিন পর ওই প্রতিবেদন পাওয়া গেলে বোঝা যাবে।’

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১৭ এপ্রিল মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এবং মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা নেত্রকোনা জেলার ডিঙ্গাপোঁতা হাওর পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের সময় হাওরের পানি পরীক্ষা করে দেখা যায়, পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা ছিল শূন্য দশমিক শূন্য ১ থেকে শূন্য দশমিক ৮ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন), যা স্বাভাবিক মাত্রার (৫ থেকে ৮ পিপিএম) চেয়ে আশঙ্কাজনকভাবে কম। একই সঙ্গে অ্যামোনিয়ার পরিমাণও ছিল শূন্য দশমিক ৪ থেকে শূন্য দশমিক ৬ পিপিএম, যা অস্বাভাবিক। অ্যামোনিয়ার লিথাল মাত্রা পাওয়া গেছে শূন্য দশমিক ২ পিপিএম। দেশের অন্যান্য হাওরেও একই সময়ে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ শূন্য দশমিক ৫ থেকে ১ দশমিক ৫ পিপিএম এবং অ্যামোনিয়ার পরিমাণ শূন্য দশমিক ৫ থেকে শূন্য দশমিক ৮ পিপিএম পাওয়া গেছে। পিএইচের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক শূন্য থেকে ৬ দশমিক শূন্য পর্যন্ত, যা সহনীয় পর্যায়ের (৬.৫ থেকে ৮.৫) নিচে ছিল।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পানির এমন রাসায়নিক উপাদান মাছের জীবনধারণের জন্য মোটেও অনুকূল ছিল না। ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকা পরিদর্শনের সময় অনেক মৃত মাছ মুখ খোলা অবস্থায় দেখা যায়। এ ছাড়া মাছের ফুলকা ছেঁড়া অবস্থায় ছিল। এভাবে মৃত্যু প্রমাণ করে, অক্সিজেনের মারাত্মক ঘাটতি ছিল। সার্বিক দিক পর্যালোচনায় প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে বোঝা যায়, হাওরের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের অস্বাভাবিক ঘাটতি এবং অ্যামোনিয়ার বৃদ্ধির কারণে মাছের ব্যাপক মড়ক হয়েছে। মাঠপর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, হাওরে পানিদূষণে এ পর্যন্ত ১ হাজার ২৭৬ টন মাছ এবং ৩ হাজার ৮৪৪টি হাঁস মারা গেছে। মৃত মাছের মূল্য প্রায় ৪১ কোটি টাকা।

এই পরিস্থিতি এবার মাছের উৎপাদনে প্রভাব ফেলবে কি না, জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, সে রকম আশঙ্কা নেই। দেশে মোট ৩৯ লাখ টন মাছ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ২৭৬ টন মাছ মরে যাওয়ায় তা তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। তিনি জানান, হাওরের পানির গুণাগুণ উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যে মৎস্য অধিদপ্তর আট লাখ টাকা ব্যয়ে পানিতে চুন, জিওলাইট ও অক্সিফ্লু প্রয়োগ করেছে। এ ছাড়া গত তিন-চার দিনের বৃষ্টিতে হাওরের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ক্রমে বাড়ছে।

এবার মাছের উৎপাদন আরও বাড়বে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাওরের পানিতে ধানগাছ পচার কারণে সেখানে প্রাকৃতিক খাদ্য প্লাঙ্কটন তৈরি হওয়ায় অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এতে পানিতে প্লাঙ্কটনের প্রাচুর্য বৃদ্ধি পাবে। এ অবস্থায় হাওরে মাছের পোনা আগাম অবমুক্ত করা হলে খাদ্য প্লাঙ্কটন খেয়ে মাছ সহজেই বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। একই সঙ্গে আগাম বৃষ্টির কারণে হাওরের পানি চলে আসায় এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত মাছ বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। ফলে হাওরে মাছের উৎপাদন অন্যবারের চেয়ে বেশি হবে বলে আশা করা যায়। এতে হাওরে ইতিমধ্যে মাছের যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

হাওরের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা শূন্য দশমিক শূন্য ২ পিপিএমে নেমে এসেছে। স্বাভাবিক অবস্থায় যা থাকে ৫ থেকে ৮ পিপিএম। ছবিটি মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদের সৌজন্যে পাওয়া।
হাওরের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা শূন্য দশমিক শূন্য ২ পিপিএমে নেমে এসেছে। স্বাভাবিক অবস্থায় যা থাকে ৫ থেকে ৮ পিপিএম। ছবিটি মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদের সৌজন্যে পাওয়া।
মৎস্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, পানির গুণাগুণ উন্নয়নের ফলে জলাশয়গুলোতে বর্তমানে গড় পিএইচ ৭ দশমিক শূন্য পিপিএম, অক্সিজেন ৫ দশমিক শূন্য পিপিএম এবং অ্যামোনিয়া শূন্য দশমিক ১ থেকে শূন্য দশমিক ৫ পিপিএম পর্যন্ত পাওয়া গেছে, যা পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে কিছু সময় প্রয়োজন হবে। ২২ এপ্রিল মাছ মারা যাওয়ার আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি ২২-২৩ এপ্রিল সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওর এবং মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরের পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করে বর্তমানে তা প্রায় স্বাভাবিক পাওয়া গেছে এবং মাছের জন্য তা ক্ষতিকর নয়।

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023 Mohajog