1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha : Sardar Dhaka
  2. nafij.moon@gmail.com : Nafij Moon : Nafij Moon
  3. rafiqul@mohajog.com : Rafiqul Islam : Rafiqul Islam
  4. sardar@mohajog.com : Shahjahan Sardar : Shahjahan Sardar
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১৯ অপরাহ্ন

হঠাৎ চড়া ডলার, বাড়ল আমদানি ব্যয়

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৭
  • ২৫৩ বার

প্রতিবেদক: খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপ গত ফেব্রুয়ারিতে ১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার মূল্যের ছোলা আমদানির জন্য বিলম্ব ঋণপত্র (ডেফার্ড এলসি) খোলে। গত ২৬ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে ছোলাবোঝাই জাহাজটি ১৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় পৌঁছায়। এখন জাহাজ থেকে ছোলা খালাস চলছে। খালাস শেষ হওয়ার পর ডলার কিনে আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে হবে।

ঋণপত্র খোলার সময় আমদানি পর্যায়ে প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ছিল ৭৮ টাকা ৭৫ পয়সা, গতকাল তা ৮৫ টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটিকে এখন আমদানি হিসাবের চেয়ে বাড়তি টাকা পরিশোধ করতে হবে। এভাবে শুধু বিএসএম গ্রুপ নয়, ভোগপণ্য আমদানিতে বিলম্ব ঋণপত্র খুলে বিপাকে পড়েছেন আরও অনেক ব্যবসায়ী।

বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের এক চালানেই ৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা বেশি বিল পরিশোধ করতে হবে। ছোলা আমদানিতে কেজিপ্রতি ৪ টাকা বেশি খরচ পড়ছে। গম আমদানিতে কেজিপ্রতি এক থেকে দেড় টাকা বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে।’

রোজা আসন্ন। বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে। সরবরাহ ব্যবস্থাও ভালো ছিল। কিন্তু দেশের মধ্যে ডলারের দাম হঠাৎ করে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় আগামী রোজার বাজার নিয়ে এখন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বন্দরে আসা সব ধরনের পণ্যের আমদানি খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

যোগাযোগ করলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গত রাতে মুঠোফোনে এ বিষয়ে বলেন, ‘এই সময়ে হঠাৎ ডলারের দাম বেড়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক। কিছু ব্যবসায়ী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেছেন যে ডলারের দাম বাড়লে পণ্যমূল্যও বাড়বে।’

তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আশা করছি বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু একটা উদ্যোগ নেবে এবং ডলারের মূল্যও ঠিক হয়ে যাবে।’

 ব্যাংকগুলোর সূত্রগুলো বলছে, ভোগ্যপণ্য আমদানি করতে ব্যবসায়ীরা সাধারণত বিলম্ব ঋণপত্র খুলে থাকেন। এর মাধ্যমে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খোলার পর ১৮০ দিন পর্যন্ত বিল পরিশোধের সুযোগ পান তাঁরা। যে সময়ে বিল পরিশোধ করা হবে, ডলারের বিনিময় হারও ধরা হয় ওই সময়ের। একইভাবে পণ্য আমদানিতে ‘বায়ার্স ক্রেডিট’ সুবিধাও নিয়ে থাকেন অনেক ব্যবসায়ী। এর মাধ্যমে দেশের আমদানিকারকেরা বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নেন। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় কোনো ব্যাংকের গ্যারান্টি থাকতে হয়। এরপর স্থানীয় ব্যাংক ওই ব্যবসায়ীর নামে ঋণ সৃষ্টি করে। বিদেশি মুদ্রায় ঋণ পরিশোধের সময় ডলারের বিনিময় হারও ধরা হয় ওই সময়ের। ফলে যেসব ব্যবসায়ী বিলম্বে দায় পরিশোধের সুবিধা নিয়েছেন, তাঁরা পড়েছেন বিপাকে।

পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ হালিম চৌধুরী বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রায় আয় কম, এমন কয়েকটি ছোট ব্যাংক বড় আকারের ঋণপত্র খুলেছিল। বিল পরিশোধের সময় অন্য ব্যাংক থেকে ডলার নিতে গিয়ে তারা দাম বাড়িয়ে ফেলেছে। এর ফলে ডলারের দাম বেড়ে গেছে। যাতে করে পণ্য আমদানিতেও খরচ বেড়ে গেছে। আমরা ডলারের দাম কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’

ব্যাংকগুলোর তথ্যমতে, আমদানি দায় মেটাতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিদেশি খাতের ব্যাংক এইচএসবিসি গতকাল প্রতি ডলারের জন্য নিয়েছে ৮৪ টাকা ৯৪ পয়সা। গত পয়লা মার্চে যা ছিল ৮০ টাকা। একইভাবে আন্তব্যাংক গড় লেনদেনে গতকাল প্রতি ডলারের দাম ৮০ টাকা ছাড়িয়েছে। গত পয়লা মার্চে যা ছিল ৭৯ টাকা ৪০ পয়সা।

রোজার সময়ে ভোজ্যতেল ও চিনির চাহিদা সাধারণত বেশি থাকে। ডলারের দাম বাড়ার প্রভাব নিয়ে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা গতকাল বলেন, এ সপ্তাহে ভোজ্যতেল ও চিনির কয়েকটি চালানের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা হয়েছে। ঋণপত্র খোলার সময় ৭৮ টাকা ৬০ পয়সা দরে যে ডলার পাওয়া যেত, এখন আমদানি বিল পরিশোধ করার সময় কিনতে হয়েছে ৮৪ টাকা ১০ পয়সা। ভোজ্যতেল ও চিনিতে প্রতি কেজিতে খরচ বেড়েছে সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা। ডলারের দাম বাড়ার কারণে শুল্ক-কর ও ব্যাংকঋণের সুদের হারেও প্রভাব ফেলছে। সব মিলিয়ে পণ্য আমদানিতে ৭ থেকে ৮ শতাংশ খরচ বেড়েছে।

রোজার সময় খেজুরের চাহিদা থাকে অনেক বেশি। ডলারের দাম বাড়ায় এবার প্রতি কেজি খেজুর আমদানিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। আলজেরিয়া থেকে কনটেইনারে ৭৫ টন খেজুর আমদানি করেছে খাতুনগঞ্জের ফারুক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। গত ২৫ নভেম্বর ঋণপত্র খোলার সময় ব্যাংকে ডলারের দাম ছিল ৭৯ টাকা ৫০ পয়সা। ২০ এপ্রিল বেসরকারি ডিপো থেকে এই খেজুর খালাস করে নেন আমদানিকারক। কোম্পানির কর্ণধার মো. ফারুক আহমেদ বলেন, ‘গত সোমবার ৮৫ টাকা ২০ পয়সা দরে কিনে ৫২ হাজার ডলার পরিশোধ করেছি ব্যাংকে। ঋণপত্র খোলার সময় যে দর ছিল তার চেয়ে এখন ডলারপ্রতি ৫ টাকা ৭০ পয়সা বেশি দিতে হয়েছে। এতে প্রতি কেজি খেজুরে খরচ বেশি পড়েছে প্রায় ৪ টাকা।’

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বিশ্ববাজারে বেশির ভাগ রোজার পণ্যের দাম স্থিতিশীল। তবে শুধু ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় নিত্যপণ্য আমদানিতে কেজিপ্রতি ১ থেকে ৩ টাকা দাম বেশি পড়ছে। ডলার ভাসমান মুদ্রা হলেও যাতে অস্থিতিশীল না হয়, সে জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023 Mohajog