বাক্সবন্দী হয়ে ঢাকায় এল রোবট ‘সোফিয়া’। সৌদি আরবের নাগরিকত্ব পাওয়া রোবট ‘সোফিয়া’ থাই এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে মঙ্গলবার রাত ১২টা ৩৯ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছেছে।
বুধবার থেকে শুরু হওয়া রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির বড় প্রদর্শনী ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭’। যা ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।
এ তথ্যপ্রযুক্তির মহাযজ্ঞ উদ্বোধন করবে সৌদি আরবের নাগরিক রোবট সোফিয়া। এর সঙ্গে একদিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন এর নির্মাতা ডেভিড হ্যানসন।
মানুষের মতো দেখতে রোবট সোফিয়াকে তৈরি করেছে হংকংভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হ্যানসন রোবটিক্স। রোবটটিকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে সে মানুষের ব্যবহারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে ও শিখতে পারে এবং মানুষের সঙ্গে কাজ করতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, সোফিয়া আগামী ৬ ডিসেম্বর ঢাকায় শুরু হতে যাওয়া দেশের বৃহত্তম তথ্য-প্রযুক্তি সম্মেলন ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের উদ্বোধনীতে উপস্থিত থাকবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে।
পরদিন ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর স্থানীয় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবে সোফিয়া। ‘সোফিয়া’ ইংরেজীতে কথা বলে।
নারী রোবট ‘সোফিয়া’কে সৌদি নাগরিকত্ব দেয়া নিয়ে কেন এত বিতর্ক
এর আগে রোবট নারী ‘সোফিয়া’কে সৌদি নাগরিকত্ব দেয়ার পর সেখানে এখন তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে এই রোবট একজন সৌদি নারীর চেয়েও বেশি অধিকার ভোগ করছে কিনা। সৌদি আরবের রিয়াদ নগরীতে গত সোমবার এক অনুষ্ঠানে এই রোবটটি প্রদর্শন করা হয়।
প্রদর্শনীতে উপস্থিত শত শত প্রতিনিধি রোবটটি দেখে এতটাই মুগ্ধ হন যে সেখানে সাথে সাথেই এটিকে সৌদি নাগরিকত্ব দেয়া হয়। রোবট নারী ‘সোফিয়া’র ছবি এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে শেয়ার হয়।
কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন একজন সৌদি নারীর তুলনায় কিভাবে ‘সোফিয়া’ এত বেশি অধিকার ভোগ করছে। হংকং এর একটি কোম্পানি ‘হ্যান্সন রোবোটিক্স’ সোফিয়া নামের রোবটটি তৈরি করেছে। ‘সোফিয়া’ ইংরেজীতে কথা বলে। কিন্তু তার মাথায় হিজাব বা পরনে আবায়া ‘বোরকা সদৃশ আচ্ছাদন’ নেই। অথচ যে কোন সৌদি নারীকে বাইরে বেরুতে হলে এসব পরেই বেরুতে হয়।
‘সোফিয়া’কে সৌদি নাগরিকত্ব দেয়ার খবরটি দেখে প্রথমত সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশিরভাগ প্রতিক্রিয়া ছিলো বেশ ইতিবাচক। এই খবরটি টুইটারে তিরিশ হাজার বার শেয়ার হয়।
কিন্তু এর পরেই শুরু হয় এটি নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ। ‘সোফিয়া কলস ফর ড্রপিং গার্ডিয়ানশীপ’ অর্থাৎ সোফিয়া তার ওপর অভিভাবকের খবরদারি তুলে নেয়ার দাবি জানাচ্ছে বলে আরেকটি বিদ্রুপাত্মক পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে থাকে।
সৌদি রীতি অনুযায়ী কোন মেয়েকে বাইরে যেতে হলে সাথে অবশ্যই একজন পুরুষ অভিভাবক থাকতে হবে।
অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, সোফিয়ার কোন পুরুষ অভিভাবক নেই, সে আবায়া ‘বোরকা’ পড়ে না, মাথায় কাপড় দেয় না। এটা কিভাবে সম্ভব?
একটি নারী রোবটের অধিকার কি একজন সৌদি নারীর চেয়ে বেশি?
যেরকম দ্রুততার সঙ্গে ‘সোফিয়া’কে সৌদি নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছে সেটি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে।
সাংবাদিক মুর্তজা হোসেন লিখেন, ‘যে ‘কাফালা’ শ্রমিকরা তাদের প্রায় পুরোটা জীবন এখানে কাটাচ্ছেন তাদেরও আগে এই রোবট সৌদি নাগরিকত্ব পেয়ে গেল?’
ব্রিটিশ-লেবানীজ সাংবাদিক কারিম চাহায়েব লিখেন, ‘লাখ লাখ মানুষ যখন রাষ্ট্রবিহীন নাগরিক হিসেবে ধুঁকছে, তখন একটি রোবট সৌদি নাগরিকত্ব পেল।’
রোবট বর্তমান যুগে একটি অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্র, একটি কিতৃম মানুষ। যা মানুষের থেকে কয়েক গুন বেশি দ্রুত কাজ করতেপারে।
কিন্তু বিশেষ মহলে প্রশ্ন আছে ‘এর বিচার-বিবেচনা কি মানুষের মত।’