‘জাতীয়করণের চেষ্টা করা হবে’ কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড সচিবের এমন আশ্বাসে অনশন ভাঙ্গলেন ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকরা।
মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশনরত ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকরা এই ঘোষণা দেন। এর আগে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড সচিব উপস্থিত হয়ে অনশনরত শিক্ষকদের সাথে বৈঠক করেন।
এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মাদ্রাসা জাতীয়করণে দাবিতে আমরণ অনশনে টানা ৭ম দিনে ১৭৮ জন ইবতেদায়ি শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের অনশন কর্মসূচিস্থলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তীব্র শীতে ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক নেতারা এ তথ্য জানান।
বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির ব্যানারে গত ১৫ দিন ধরে অবস্থান ও সাতদিন ধরে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরা।
কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী এবং শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে আন্দোলনরত মাদ্রাসা শিক্ষক নেতাদের বৈঠক সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। রোববার সচিবালয়ে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের শিক্ষামন্ত্রীর কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে জাতীয়করণের দাবিতে আমরণ অনশনরত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়।
এ সময় শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমি চেষ্টা করছি, বিষয়টি নিয়ে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেও যাব। তাই শিক্ষকদের অনশন ভেঙে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেছি। কিন্তু এ বিষয়ে তারা কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির মহাসচিব কাজী মোখলেসুর রহমান বলেন, আলোচনায় কোনো আশ্বাস পাইনি আমরা— তাই অনশন চালিয়ে যাব। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি পূরণের বিষয়ে অনশনরত শিক্ষকদের সামনে গিয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।
নিবন্ধিত সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়িী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে ১ জানুয়ারি থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন মাদ্রাসার শিক্ষকরা। কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়ায় ৯ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন তারা। রোববার ছিল এ অনশনের ষষ্ঠ দিন।
এদিকে, রোববার শিগগিরই নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিভুক্ত হবে –তবে সেখানে কয়েকটি শর্ত থাকবে জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
সবশেষ ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করে সরকার। এরপর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি বন্ধ ছিল।
নতুন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা সম্প্রতি আন্দোলনে নামেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পর নতুন করে এমপিও দিতে উদ্যোগী হয় সরকার।
এদিকে, তীব্র শীতের মধ্যে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিবন্ধন পাওয়া সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচির পালন করছেন মাদ্রাসা শিক্ষকরা।
গত ১ জানুয়ারি থেকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
প্রসঙ্গত, দেশে নিবন্ধিত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা রয়েছে ১৮ হাজার ১৯৪টি—তবে চালু আছে ১০ হাজারের মতো, এসব মাদ্রাসায় শিক্ষক আছেন প্রায় ৫০ হাজার। তবে এর মধ্যে ১ হাজার ৫১৯টি মাদ্রাসার ৬ হাজার ৬৭৬ জন শিক্ষক সরকার থেকে ভাতা পান—এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকরা পান মাসে আড়াই হাজার টাকা ও সহকারী শিক্ষকরা ২ হাজার ৩০০ টাকা।