পাবনার রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, রাশিয়ার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটি নির্মিত হচ্ছে। আর এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বও রাশিয়া করবে।
শনিবার দুপুরে বাংলাদেশের স্বপ্নের এই প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাই উদ্বোধন করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও এই প্রকল্পের নির্মাতা রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী ইউরি ইভানোভিচ বরিসভ যৌথভাবে এর কাজ উদ্বোধন করেন। এরপর সেখানে এক আলোচনায় বক্তব্য দেন তারা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়ার যে সর্বশেষ জেনারেশন থ্রি প্লাস প্রযুক্তি রিঅ্যাক্টর, সেটা দিয়ে এটা তৈরি হচ্ছে। বর্জ্য কীভাবে ব্যবস্থাপনা করা হবে সে দায়িত্বও রাশিয়া নিয়েছে। এই দিক থেকে আমি মনে করি কারও আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই।যেকোনো দুর্যোগে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করা, এটাকে রক্ষণাবেক্ষণ করা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সংস্থাসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আলাদা একটা ইউনিট গড়ে তুলছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা কথা নিশ্চিত করতে চাই। কারণ, আমাদের কোনো কাজ করতে গেলে কিছু কিছু মহল থাকে তারা নানা ধরনের ভয়, ভীতি সৃষ্টি করে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। এখন অনেক আধুনিক প্রযুক্তি এসে গেছে। যার ফলে এখানে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হবে, সেটা আমি মনে করি না।’
রাশিয়া এবং ভারতে এটমিক এনার্জি কমিশন অ্যান্ড রেগুলেটরি বডি বাংলাদেশের বিজ্ঞানী, আমাদের ইঞ্জিনিয়ারদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘প্রতিনিয়ত এই ট্রেইনিং কার্যক্রম চলছে, এটা অব্যাহত থাকবে।’
এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের জন্য যে গর্বের, সেটাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা পরমাণু ক্লাবে যোগ দেব, এটা বড় কথা। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে আমরা স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করেছি বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে। আর পরমাণু শক্তি আমরা শান্তির জন্য ব্যবহার করব। সেটাও ৩৩তম দেশ হিসেবে আমরা পরমাণু শক্তির দেশ হিসেবে নিজেদের আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ পেলাম। এই অগ্রযাত্রাটা অব্যাহত থাকুক, সেটাও আমরা চাই।’
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাশিয়া সফর করে সেখানে ২০০ মেগাওয়াটের একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে আলোচনা করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে তার মৃত্যুর পর আটকে দেয়া হয় সেই উদ্যোগ। এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সেখানে ৬০০ মেগাওয়াটের একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর এটি আর এগিয়ে নেয়নি।
২০১০ সালের ২১ মে পারমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ও রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে চুক্তি হয় মস্কোতে। আর ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর দুই হাজার চারশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার দুটি চুল্লি নির্মাণে রাশিয়ার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ।
২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী প্রথম ইউনিটের মূল নির্মাণ কাজের (এফসিপি) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। চুক্তি অনুসারে এটি নির্মাণের জন্য সাড়ে পাঁচ বছর সময় পাবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। সে অনুযায়ী ২০২৩ সালের জুনে কেন্দ্রটির এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট এবং ২০২৪ সালের এপ্রিলে একই ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট চালু হওয়ার কথা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত, আমাদেরকে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, সে কাজও আমরা শুরু করেছি। তার কিছু ড্রাফট করা হয়েছে।’