যুক্তরাষ্ট্রে গত এক মাসের বেশি ধরে চলা অচলাবস্থা বা শাট ডাউন থেকে বেরিয়ে আসতে শুক্রবার মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের বরাদ্দ ছাড়াই এক সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে রাজি হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্প এতে স্বাক্ষর করলেই দেশটিতে গত ৩৫ দিন ধরে চলা শাট ডাউন পরিস্থিতির অবসান হবে বলে জানিয়েছে কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা।
তবে ওই চুক্তিতে মেক্সিকোর সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণে তিনি যে অর্থ বরাদ্দ দাবি করেছিলেন তা মেনে নেয়া হয়নি।
যদিও এর আগে ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, তার দেয়াল নির্মাণের দাবি মেনে নেয়া না হলে বছরের পর বছর ধরে চলবে এই অচলাবস্থা। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য ৫.৭ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
কিন্তু শুক্রবার হোয়াইট হাউস থেকে দেয়া এক ঘোষণায় ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আজ গর্বের সঙ্গে এ ঘোষণা দিচ্ছি যে শাট ডাউন কাটিয়ে উঠতে আমরা একটি সমঝোতায় পৌঁছেছি এবং ফেডারেল সরকারের কার্যক্রম পুনরায় চালু হতে যাচ্ছে।’
ওই ঘোষণায় ট্রাম্প আরো বলেন, তিন সপ্তাহের অচলবস্থার অবসানে স্বল্প সময়ের মধ্যে আমি ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আগামী তিন সপ্তাহের জন্য আমাদের সরকার খুলতে একটি বিলে স্বাক্ষর করতে চলেছি। আমি সবাইকে এই মর্মে নিশ্চিয়তা দিচ্ছি যে, ফেডারেল সরকারের সব কর্মচারীরা দ্রুত তাদের বেতন পাবেন।’
মেক্সিকো সীমান্তে দেয়ালের নির্মাণের বরাদ্দ নিয়ে ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত বিরোধের জেরে গত ২১ ডিসেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের অধিকাংশ কার্যক্রম। ইতিমধ্যে এই শাট ডাউন বা অচলাবস্থা অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে।
দেয়াল নির্মাণে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না পেলে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও সম্প্রতি এক জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, ৬৯ ভাগ আমেরিকান এই প্রাচীর নির্মাণকে অত্যাবশ্যকীয় মনে করছেন না। আর এই অচলাবস্থার জন্য প্রেসিডেন্টকেই দুষছেন সে দেশের লোকজন।
এদিকে শাট ডাউনের কারণে এক মাসের বেশি সময় ধরে বেতন পাচ্ছেন না যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের এক-চতুর্থাংশ বিভাগ ও সংস্থার আট লাখের বেশি কর্মী। এসব কর্মীদের অর্ধেক এখনো কাজে আসছেন।
কারারক্ষী, বিমানবন্দরকর্মী এবং এফবিআই এজেন্টসহ আরও অনেকগুলো সরকারি সংস্থার কর্মীরা তাদের নতুন বছরের প্রথম বেতন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ নিয়ে বিক্ষুব্ধ কর্মীদের সড়কে নেমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা গেছে।
বেতন না পাওয়া সরকারি কর্মীদের জন্য চলতি মাসের গোড়ার দিকে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি ফুড ব্যাংকের পক্ষ থেকে পাঁচটি পপ-আপ মার্কেট চালু করা হয়েছে।
বেতন দিতে না পারায় নিরাপত্তারক্ষীরা কাজে আসছেন না। যে কারণে ব্যস্ততম মিয়ামি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি পুরো টার্মিনাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শাট ডাউনের কারণে কর্মী সঙ্কটের মুখে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দেশের প্রায় অর্ধেক ন্যাশনাল পার্ক, স্মৃতিসৌধ ও ঐতিহাসিক স্থান। চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে বন্ধ হয়ে গেছে ট্রি ন্যাশনাল পার্ক।
সূত্র: আল জাজিরা