1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha : Sardar Dhaka
  2. nafij.moon@gmail.com : Nafij Moon : Nafij Moon
  3. rafiqul@mohajog.com : Rafiqul Islam : Rafiqul Islam
  4. sardar@mohajog.com : Shahjahan Sardar : Shahjahan Sardar
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০১ অপরাহ্ন

সুলতান কাবুসের মৃত্যু ও একটি রহস্যময় খাম

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২০
  • ২৮০ বার

দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর ধরে অসুস্থ থাকার পর শুক্রবার রাতে হঠাৎ করেই মারা গেলেন ওমানের স্বৈরশাসক সুলতান কাবুস বিন সাঈদ আল সাঈদ (৭৯)। তার মৃত্যুতে দেশটিতে ব্যাপক রাজনৈতিক শূন্যতার তৈরি হয়েছে। কেননা তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। আর তিনি উত্তরাধিকারী হিসাবে কাউকে মনোনী করার কথা ঘোষণাও করেননি। তবে তিনি একটি খাম রেখে গেছেন যা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছে গোটা ওমানবাসী। তাদের কাছে এটি হচ্ছে চরম রহস্যময় একটি খাম। কেননা খামের ভিতরে রাখা এক চিরকুটেই নাকি নিজের উত্তরাধিকারি অর্থাৎ দেশের ভাবি শাসকের নাম লিখে রেখে গেছেন কাবুস।

বাবাকে সরিয়ে ক্ষমতায়

সুলতান কাবুস ১৯৪০ সালের ১৮ নভেম্বর ওমানের উত্তরাঞ্চলীয় দোফার প্রদেশের সালাহ নামক এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি উচ্চশিক্ষা লাভ করেন ভারতে। এরপর সামরিক প্রশিক্ষণ নেন জার্মানিতে। ইউরোপে সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফেরেন ১৯৬৪ সালে। ওমানে ফেরার মাত্র ৬ বছরের মাথায় এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন সুলতান কাবুস। তার ক্ষমতায় আসাটা খুব মসৃণভাবে হয়নি। কেননা ব্রিটিশ সকারের সহায়তায় নিজের বাবা সাঈদ বিন তৈমুরকে ক্ষমতাচ্যুত ও বন্দি করেই তিনি সিংহাসনে বসেন।

ক্ষমতায় আসার পরই অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিকে আধুনিকায়ণের কাজ শুরু করেন। তার দীর্ঘ পাঁচ দশকের শাসনামলে ওমান একটি আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। তবে দেশের রাজনৈতিক সংস্কারের কোনো চেষ্টাই তিনি করেননি। বরং দেশে সব ধরনের রাজনৈতিক দল ও তাদের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে নিজের একনায়কত্ব শাসনের পথ নিষ্কণ্টক করে তুলেছিলেন। সেখানে কেউ সুলতানের বিরুদ্ধে মুখ খোলার চেষ্টা করলেই তাকে বন্দি করা হতো। অর্থাৎ বিরাধী কণ্ঠ রোধ করতে বরাবরই সক্রিয় ছিলেন কাবুস। ফলে ২০১০ সালের গোড়াতে যে আরব বসন্তের আঘাতে কেঁপে উঠেছিলো মিশরে, লিবিয়া, সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ইয়েমেনসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্য, তার কোনো ছোঁয়া লাগেনি ওমানে। এতটাই প্রতাপশালী শাসক ছিলেন কাবুস। তার ভয়ে রাজপ্রাসাদের কোনো সদস্য পর্যন্ত তার সমালোচনা করার সাহস পেতেন না। যে কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড রয়েছে তার।

দীর্ঘ অসুস্থতা

কিন্তু এতকিছুর পরও নিজের পতন ঠেকাতে পারেননি কাবুস। আসলে তিনি হেরে যান প্রকৃতির কাছে, আক্রান্ত হন মরণব্যাধী ক্যানসারে। ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো তার ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার কথা শোনা যায়। এরপর তিনি দফায় দফায় ইউরোপের উন্নত দেশ বেলজিয়াম ও জার্মানিতে চিকিৎসা নেন। জার্মানিতে চিকিৎসা নেয়ার পর ২০১৫ সালের মার্চে রাজধানী মাসকাটে ফিরে আসেন। এরপর থেকে তাকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি। তিনি পুরোপুরি নির্ভৃতে চলে যান। এমনকি কোনো পাবলিক অনুষ্ঠানেও দেখা যেত না সুলতানকে। গত ৩ ডিসেম্বর উপসাগরীয় দেশগুলোর সংগঠন গালফ কোপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) বার্ষিক সম্মেলনেরও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। তার অবর্তমানে ওমান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির উপ প্রধানমন্ত্রী

চিকিৎসার অজুহাতে দীর্ঘদিন ধরে তার লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা নিয়ে দেশটির ৪৫ লাখ জনগোষ্ঠীর মনে নানা প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে । গতবছর চিকিৎসার জন্য ফের জার্মান যান সুলতান কাবুস। সেখানে দীর্ঘ আট মাস চিকিৎসা শেষে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দেশে ফিরেছিলেন তিনি। এর কিছুদিন পরেই তার মৃত্যুর খবর শোনা গেলো। সুলতান কাবুস।

রহস্যময় সেই খাম

সুলতান কাবুসের মৃত্যুর পর আন্তর্জাতিক অঙ্গণে যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে তা হলো, তার স্থলাভিষিক্ত কে হচ্ছেন। কেননা তার কোনো সন্তান সন্ততি কিংবা ভাই নেই। তবে তার বেশ কয়েকজন চাচাতো ভাই আছেন। তবে তাদের ভিতর থেকে কেউ ওমানের সুলতান হচ্ছেন কিনা সেটিও নিশ্চিত নয়। ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে নিজের উত্তরাধিকার ঘোষণার জন্য দেশের উত্তরাধিকার প্রক্রিয়া সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন সুলতান কাবুস। যদিও তিনি কাকে নিজের উত্তরাধিকার মনোনীত করেছেন সেটি কখনও প্রকাশ করেননি। জানা যায়, তিনি একটি খামে ওমানের ভাবি সুলতানের নাম লিখে রেখে গেছেন। তার নির্দেশ ছিলো, তিনি মারা যাওয়ার আগে যেনো সেটি খোলা না হয়। অবশেষে এসেছে সেই রহস্যজনক খামটি খোলার দিন।

সংবিধান অনুয়ায়ী ওমানের সুলতান হওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি শর্ত রয়েছে। যেমন: তাকে রাজ পরিবারের সদস্য হতে হবে, মুসলিম ধর্মাবলম্বী হতে হবে এবং তাকে অবশ্যই ওমানের নাগরিক হতে হবে।

স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওমানে এমন ৮০ জনেরও বেশি ব্যক্তি আছেন যারা নিজেদের কাবুসের বৈধ উত্তরাধিকারী হিসাবে দাবি করতে পারেন। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন ওমানের উপ প্রধানমন্ত্রী আসাদ বিন তারিক। আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বিশেষ করে পশ্চিমা ও আরব দেশগুলোর সঙ্গে ভালো লিয়াঁজো থাকায় ৬৫ বছর বয়সী তারিককে ২০১৭ সালে এই পদে নিযুক্ত করা হয়। অনেকের অনুমান, সেই রহস্যময় খামে হয়তো তার নামই লিখে রেখে গেছেন সুলতান কাবুস। তবে আসল সত্য জানতে হলে আমাদের আরো কিছুদিন অরো কিছুদিন অপেক্ষ করতে হবে।

সুলতান কাবুসের মৃত্যুতে ওমানে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। তিন দিন পর দাফন করা হবে তার লাশ। মৃত সুলাতানের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তিনদিন ধরে তার মরদেহ রাজ দরবারে রেখে দেয়া হবে। তার দাফন কার্য শেষ করার পরই খোলা হবে সেই রহস্যময় খামটি।

আল জজিরা ও মিডল ইস্ট আই অবলম্বনে

 

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023 Mohajog