1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha : Sardar Dhaka
  2. nafij.moon@gmail.com : Nafij Moon : Nafij Moon
  3. rafiqul@mohajog.com : Rafiqul Islam : Rafiqul Islam
  4. sardar@mohajog.com : Shahjahan Sardar : Shahjahan Sardar
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০১ অপরাহ্ন

ঢাবি প্রশাসনের আস্কারায় বেপরোয়া ছাত্রলীগ: ভিপি নুর

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২০
  • ২৯২ বার

ছাত্রলীগের সঙ্গে হ্যান্ডশেইক না করলে হলে থাকা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নূর।

তিনি বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোকে মিনি ক্যান্টনমেন্ট বানিয়ে রেখেছে। ছাত্রলীগের সঙ্গে হ্যান্ডশেইক না করলে হলে থাকা যায় না। ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিং না করলে হলে থাকা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনই তো ছাত্রলীগকে লাইসেন্সটা দিয়েছে যে, হল তারা চালাবে। খুবই লজ্জিত যে, তারা শিক্ষক না কি? বেতন নিচ্ছেন হলের হাউজ টিউটর, এক একজন প্রভোস্ট একটা করে বাংলো ইউস (ব্যবহার) করেন। অথচ হল চালায় ছাত্ররা।

বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ৩৫ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্র সমাবেশে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। হল প্রশাসন থাকতেও কী করে ছাত্রলীগ হল চালায় সেই প্রশ্ন তুলে তিনি হল প্রভোস্টদের সমালোচনা করেন।

প্রভোস্টদের উদ্দেশ্য করে ভিপি নুরুল হক বলেন, এই মিয়া, আপনে আছেন কী জন্য? পাবলিকের টাকা নিচ্ছেন লজ্জা করে না? আপনার ছেলে-মেয়েকে ওই টাকা খাওয়াচ্ছেন, তাদেরকে পড়াশুনা করাচ্ছেন; এটা হারাম। এটা পাবলিকের সাথে বেঈমানি।কারণ পাবলিক আজকে ভ্যাট দিচ্ছে, ট্যাক্স দিচ্ছে যে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ছেলে মেয়ে পড়বে। আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করছেন না। আপনারা রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করছেন।

ছাত্রত্ব শেষ হবার পরেও যারা হলে থাকে, তারাই বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়ায় দাবি করে ডাকসুর ভিপি বলেন, প্রথম বর্ষ থেকে বৈধ সিট দিতে হবে। হল থেকে অছাত্র, বহিরাগতদের বিতাড়িত করতে হবে। কালকের ঘটনায় যারা জড়িত তিনজনেরই ছাত্রত্ব শেষ। বলা হয়ে থাকে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেছে, হলে থেকে মাদক ব্যবসা, পলাশীতে চাঁদাবাজি, ফুল মার্কেটে চাঁদাবাজি, কিংবা ওই কাটাবনে চাঁদাবাজি- এসব ধান্দা-ফান্দা করে হলে বসে। রেগুলার ছাত্ররা খুব কম এগুলো চিন্তা-ভাবনা করে। তারা পড়াশুনা প্লাস (সাথে) পলিটিক্স (রাজনীতি) করে। এ জন্য আমরা বারবার বলছি এই অছাত্র-বহিরাগতদের হল থেকে বের করতে হবে।

ছাত্রলীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে আপনারা দেখেছেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক চকলেট নিয়ে গেছেন। পরে আবার হাতুড়ি হেলমেট নিয়ে হামলা করেছেন।তারা যখন ভালোবেসে বুঝাইতে চাইছে, তখন ছেলেপেলে তো জানে যে, ওরা ভন্ড, ওদের মুখে মধু অন্তরে বিষ। ওরা বলবে তোমাদের দাবি আমরা সরকারের কাছে তুলে ধরব। আমরা তো সরকারের অঙ্গ সংগঠন, তাই মেনে নেবে। কিন্তু ওরা (আন্দোলনকারী ছাত্ররা) বলেছে, আমরা কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেখেছি। সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলার পরেও সেখান থেকে তিনি সরে গেছেন।

শিক্ষাঙ্গন থেকে সন্ত্রাস প্রতিরোধে দৃঢ়তা এবং সৎসাহস প্রয়োজন এমন মন্তব্য করে নুরুল হক বলেন, আমাদের একটা জিনিস খুবই প্রয়োজন সেটা হচ্ছে- দৃঢ়তা এবং সৎসাহস। প্রায় ৭৩টা ডিপার্টমেন্ট আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। (প্রতিটি বিভাগে) এভারেজ (গড়ে) ১০০ করে ছাত্র ভর্তি হয় বা কিছু কম বেশি। প্রত্যেকটা ডিপার্টমেন্টে ১০ জন করে সাহসী ছাত্র কি নেই! আপনাদের ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র অধিকার পরিষদ বা ডাকসু ভিপির সমর্থক হতে হবে না। আপনারা একটা দাবি তোলেন যে, আমি আমার যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি। কোনো ছাত্রলীগ বা কোনো ছাত্র সংগঠনের পদলেহন করে নয়। সুতরাং আমার একটা বৈধ সিট আমি চাই। এই দাবিটা কি তুলতে পারেন না আপনারা?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে যে নির্যাতন এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম হচ্ছে সেখানে প্রশাসনের সরাসরি হস্তক্ষেপ রয়েছে, এমন দাবি করে তিনি বলেন, প্রমাণ থাকার পরও বিচার না করার মধ্য দিয়ে তা প্রকাশ পায়। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনগুলো অন্যায় করলে টুঁ শব্দ পর্যন্ত করে না এ প্রশাসন। অথচ জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থীদের এমন ভয়াবহ নির্যাতন করার পর প্রশাসন বলে কিছু হয়নি ‌‘সামান্য হৈচৈ’ হয়েছে। এ হচ্ছে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র। আমাদের উপর হামলা করলো ছাত্রলীগ নেতারা। কিন্তু প্রক্টর তাদেরকেই ফোন করে আমাদেরকে দেখতে বলে। ডাকসু এবং হলে যে হামলা হয়েছে সেটা পরিকল্পিতভাবে ভিন্নমত দমনের লক্ষ্যে সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠন এমন সন্ত্রাসী কার্যক্রম ঘটিয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে বলতে চাই অনেক হয়েছে এবার আপনাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করুন, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। না হলে ছাত্রসমাজ আপনাদের ছাড়বে না।

ছাত্র ফেডারেশনের এই ছাত্র সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিরা ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি, ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি রাহাত আহমেদ, সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক জাহিদুল আলম, সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য জাহিদ রায়হান তাহরাত লিওন, সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারুক হাসান ও শ্রমিক নেতা বাচ্চু মিয়াসহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

চার দফা দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে নির্যাতনের শিকার মুকিমের পাশে দাঁড়িয়েছেন তার নিজ বিভাগ ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থীরা। বিভাগের অন্তত তিন শতাধিক শিক্ষার্থী বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে নির্যাতনকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। আগামী রোববার এই ঘটনার বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যায় উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেবেন তারা।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বিভাগটির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কবিতা বলেন, আমাদের বন্ধু মুকিমসহ চারজন ছাত্রকে নিষ্ঠুরভাবে মারা হয়েছে। সে শিবির করে নাকি অন্য কোনো দল করে সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। তাকে মারার অধিকার কারো নেই। সে যদি কোনো অপরাধ করে থাকে, তাহলে সেটার বিচারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আছে।

মানববন্ধন থেকে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে চার দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো- এক. যারা মুকিমের উপর অন্যায়ভাবে পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দেয়া; দুই. একটা নিরাপদ ক্যাম্পাস, যেখানে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ ও স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা যাবে এবং রাজনৈতিক মতের প্রতিফলন ঘটানো যাবে; তিন. আবাসিক হলগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, প্রথম বর্ষ থেকেই হলে সিট বরাদ্দ দিতে হবে; এবং চার. সিট বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে।

সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্যের মানববন্ধন

অন্যদিকে হামলার সুষ্ঠু বিচারের দাবি এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন করেছে সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য। ১২ টি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সন্ত্রাস বিরোধী ছাত্র ঐক্য নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়তে মানববন্ধন করে চার দফা দাবি জানিয়েছে। ৪ দফা দাবি নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য যে মানববন্ধন করেছে। দাবিগুলো হলো : এক. নির্লজ্জ, ব্যর্থ প্রক্টরের পদত্যাগ। দুই. হলে হলে গেস্টরুম, গণরুমের নামে যে নির্যাতন করা হয় তা বন্ধ করা এবং ১ম বর্ষ থেকে বৈধ সিটের ব্যবস্থা করা। তিন. ডাকসু, জহুরুল হক হল সহ সমস্ত হামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা করা। চার. সকলের জন্য নিরাপদ, ভয়হীন ক্যাম্পাস গঠন করা।

এই মানববন্ধনে অংশ নিয়ে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, আমি আওয়ামী প্রশাসন এবং সরকারকে বলব, ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরুন, অন্যথায় আপনাদের গদি ছাড়ার কারণ হবে এই সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ হলে হলে গেস্টরুম, গণরুম, নেতাকে প্রটোকল দেয়ার প্রোগ্রামের নাম করে যে দাসপ্রথা শুরু করেছে, তার বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে সচেতনভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। অন্যথায় এ বিশ্ববিদ্যালয়কে সন্ত্রাসমুক্ত, নিরাপদ ক্যাম্পাস গঠন করা কখনো সম্ভব নয়।

বিভন্ন ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় অসংখ্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে সেই তদন্ত কমিটি গুলোর দৃশ্যমান পদক্ষেপ আমরা কখনো দেখিনি। কোনো নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে একটি তৎক্ষনাৎ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় যেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নিশ্চুপ হয়ে যায়।এর পরে সেই তদন্ত কমিটির কোন কাজ আমরা দেখি না।

মানববন্ধন শেষ করে সন্ত্রাস বিরোধী ছাত্র ঐক্য পরিষদের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় তাদেরকে- শিক্ষা, সন্ত্রাস একসাথে চলে না শিক্ষা, ছাত্রলীগ একসাথে চলে না জহুরুল হলে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে শোনা গেছে।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে চার শিক্ষার্থীকে রুম থেকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন চালায় হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শিবির সন্দেহে তাদেরকে কয়েক দফায় হাতুড়ি ও ডিসের তার দিয়ে নির্যাতন করার পর পুলিশে দেয়া হয়। পরদিন মঙ্গলবার বিকেলে শাহবাগ থানা থেকে মুচলেকা রেখে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। ঘটনার বিচারের দাবিতে থানা থেকে ছাড়া পেয়েই রাজু ভাস্কর্যে অনশনে বসেছেন নির্যাতনের শিকার এক শিক্ষার্থী।

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023 Mohajog