1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha : Sardar Dhaka
  2. nafij.moon@gmail.com : Nafij Moon : Nafij Moon
  3. rafiqul@mohajog.com : Rafiqul Islam : Rafiqul Islam
  4. sardar@mohajog.com : Shahjahan Sardar : Shahjahan Sardar
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন

কিস্তি ও সুদে যাচ্ছে ঋণের বড় অংশ

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২০
  • ৩০৫ বার

করোনাকালীন নতুন অর্থবছরের (২০২০-২১) প্রথম দুই মাস কিছুটা ভাটায় ছিল উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ ও সহায়তা। তবে প্রথম প্রান্তিক শেষে তাতে ভালোই প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। অক্টোবর পর্যন্ত উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর অর্থছাড় বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। তবে, এ সময় বড় অঙ্কের অর্থ গেছে আগের নেওয়া ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধে। এ সময় দাতাদের নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানিয়েছে, জুলাই-অক্টোবর সময়ে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে তাদের প্রতিশ্রুত ঋণের মধ্যে মোট ১৭১ কোটি ১১ লাখ ৬০ হাজার ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ, দেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা (এক ডলারে ৮৪ টাকা ধরে)। গেল বছরের জুলাই থেকে অক্টোবরে ছাড় হয়েছিল ১৪৩ কোটি ৩৭ লাখ

ডলার বা ১২ হাজার ৪৩ কোটি টাকা।। সে হিসাবে গেল বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ বা ২৭ কোটি ডলার বা সোয়া ২ হাজার কোটি টাকা বেশি ছাড় হয়েছে।

এ দিকে নতুন ঋণ প্রাপ্তির মধ্যেও পুরোনো ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। চার মাসে ঋণের সুদ ও আসল বাবদ বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হয়েছে ৬৫ কোটি ডলার বা প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণের আসল বাবদ ৪৬ কোটি ৯৬ লাখ ৪০ হাজার ডলার ব্যয় হয়েছে। আর সুদ দিতে হয়েছে ১৮ কোটি ৩ লাখ ডলার বা দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি। গেল অর্থবছরের একই সময়ও বাংলাদেশকে ৪৬ কোটি ৩২ লাখ ডলার আসল ও ১৬ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের সুদ শোধ দিতে হয়েছে।

করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে গেল অর্থবছরে বিদেশি ঋণ-সহায়তা বাবদ ৭২৭ কোটি ডলার বা ৬১ হাজার কোটি টাকার বেশি ছাড় করেছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এদিকে বাজেটের আকার যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে ঋণের পরিমাণ। বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ঋণ ছাড়ের অপেক্ষায়ও রয়েছে। এতে দিন দিন বাড়ছে পরিধোশের চাপও।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে। গত বাজেটের যা ছিল ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা, যদিও পরে সংশোধন করে ৫২ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা করা হয়। ২০১৮-১৯ সালে বাজেটেও মোট বৈদেশিক ঋণ ছিল মাত্র ৪৪ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। আবার এ বছর বাজেটে বৈদেশিক ঋণে সুদ পরিশোধের লক্ষ্য ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের ছিল ৪ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বৈদেশিক সুদ পরিশোধের লক্ষ্য ছিল ৩ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। ২ বছরের ব্যবধানে ২ হাজার ১০২ কোটি টাকা অতিরিক্ত বৈদেশিক সুদ পরিশোধ করতে হবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ মুহূর্তে বিদেশি ঋণ বাংলাদেশের জন্য তেমন আশঙ্কাজনক নয়। সঠিকভাবে, সঠিক খাতে ব্যবহার করতে পারলে; তা দেশি ঋণের চেয়েও ভালো। এছাড় এখন বাংলাদেশের ঋণ গ্রহণের সক্ষমতাও বেড়েছে। অপর দিকে এখনও যেসব ঋণ পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো তুলনামূলক কম সুদ ও সহজ শর্তেই রয়েছে। তবে, এসব ঋণের গ্রেস পিরিয়ড পার হলে তা পরিশোধের চাপ তৈরি করতে দেশের অর্থনীতিতে। এর বিকল্প রয়েছে সরকারের বিকল্প আয় ও সঞ্চয় বৃদ্ধি। এজন্য গঠনমূলক প্রকৃয়ার মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কেন না, বাজেটে আয় ও ব্যয়ের গাণিতিক হিসাব করা হয়। আয়ের প্রধান উৎস রাজস্বে ঘাটতি হলেই ব্যয়ের উপচ চাপ ফেলবে। দেশি বা বিদেশি ঋণের মাধ্যমেই এ চাপ সামাল দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ঋণের সুদ-আসল পরিশোধের চাপ বাড়লে আমাদের বাৎসরিক পরিকল্পনায় কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে। আবার বাৎসরিক পরিকল্পনা মাফিক বৈদেশিক সহায়তা না মিললেও দেশি উৎস থেকে ধার বাড়িয়ে দিতে হবে। তাই এটা বাড়াটা এক দিকে ভালোই। কারণ, অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদের হারও অনেক বেশি। আবার আমাদের ঋণের সক্ষমতাও বেড়েছে। তাই ঋণ নিতে বিশেষ করে নমনীয় ঋণ নিতে আপাতত সমস্যা নেই। তবে ভবিষ্যতে সমস্যা বাড়তে পারে। তাই রেভিনিউ বাড়ানোর বিকল্প নেই। তা এখনই হয়ত সম্ভব না। তবে পরিকল্পনা নিতে হবে, যাতে আগামীতে যেন অর্থের আরও বড় জোগান রাজস্ব থেকে আসে। কারণ, আমাদের রাজস্ব আয় তুলনামূলন বেশ কম। অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক ঋণের চেয়ে দেশীয় সম্পদ বা আয় অনেক ভালো। কারণ, আমাদের রাজস্ব আয়ের বেশ বড় অংশই সুদের পেছনে ব্যয় হয়। এটা আর বাড়তে দেওয়া ঠিক হবে না।

সাধারণ বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ১০ বছরের রেয়াতকালসহ ২০ থেকে ৪০ বছর সময় পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের সুযোগ থাকে। তাই ঋণ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিশোধ করতে হয় না। কিন্তু পূর্বের নেওয়া ঋণের রেয়াতকাল শেষে তা শোধের সময় শুরু হয়। তাই দিনে দিনে বাড়ছে বৈদেশিক ঋণ, বাড়ছে সুদ পরিশোধের চাপ। তবে, বৈদেশিক ঋণ একদিকে বাড়ছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাও কয়েকগুণ বেড়েছে। বাংলাদেশ কখনও খেলাপিও হয়নি। ঋণ পরিশোধ সক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে উন্নয়ন সহযোগীরা ঋণ দেওয়ার জন্য আগ্রহী।

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, এ মুহূর্তে বৈদেশিক সহায়তা বাড়ার অন্যতম কারণ কোভিডবিষয়ক কিছু বাড়তি সহায়তা। এতে এখন তো আমরা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে নয় বরং বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা থেকে ঋণ নিই। এ ঋণের সুদের হার খুব বেশি থাকে না। আবার দেশি ঋণের সুদ বিদেশি ঋণের তুলনায় অনেক বেশি। তাই সুদ খুব বড় ইস্যু নয়। যদি যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায় তাহলে বিদেশি ঋণ বাড়লেও অসুবিধা নেই। কারণ, যে কোনো দেশেই আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারে। কিন্তু বিনিয়োগ সঠিকভাবে করতে হবে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে উৎপাদন বাড়বে, অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। তবে সবচেয়ে ভালে বিকল্প হতে পারে দেশি উৎস থেকে আয় বাড়ানো। এক্ষেত্রে সরাকরি ও বেসরকারি দুই খাতেই সঞ্চয় বাড়াতে হবে। সরকারি সঞ্চয় বাড়াতে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে, অপচয় কমাতে হবে, অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় কমাতে হবে। উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বেসরকারি খাতেও সঞ্চয় উৎসাহিত করতে হবে। এতে সুদের চাপেও পড়তে হবে না।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রতি বছর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বড় অ্েকর ঋণ ও অনুদান দিয়ে থাকে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো। দেশের প্রধান উন্নয়ন সংস্থার মধ্যে রয়েছে জাইকা, বিশ্ব ব্যাংক, এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এশিয়ান অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি)। এছাড়া বিভিন্ন দেশের উন্নয়ন সংস্থা থেকেও বাংলাদেশ ঋণ নিয়ে থাকে।

ইআরডির হিসাব মতে, এ বছরের প্রথম চার মাসে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা কর্তক মোট অর্থছাড়ের মধ্যে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ রয়েছে ১৬৫ কোটি ৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার। একই সময়ে বাংলাদেশ ৬ কোটি ২ লাখ ৯০ হাজার ডলার অনুদানও পেয়েছে। তবে অনুদানের পরিমাণ গেল বছরের চেয়ে কমেছে। গেল বছর একই সময় ১০ কোটি ১১ লাখ ডলার অনুদান ও ১৩৩ কোটি ২৫ লাখ ডলার ঋণ পেয়েছিল বাংলাদেশ।

এ দিকে ইআরডির হিসাব বলছে বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে দাতাদের কাছ থেকে কিছু নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতিও মিলেছে। এ সময় বাংলাদেশ ১২৩ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার ডলারের নতুন বা ভবিষ্যত সহায়তার পাওয়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করেছে। এর মধ্যে ১৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার ঋণের প্রতিশ্রুত এবং ১০৪ কোটি ৮ লাখ ডলার অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দাতা সংস্থাগুলো। তবে বছরের ব্যবধান তুলনায় উন্নয়ন সহযোগীতের প্রতিশ্রুতির পরিমাণ কমেছে। সেই প্রতিশ্রুতিতে অনুদানের পরিমাণও কিছুটা বেড়েছে। গেল বছরের প্রথম চার মাসে ৯ কোটি ৭৩ লাখ ডলার অনুদান ও ২১২ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের ঋণ মিলে মোট ২২২ কোটি ২৭ লাখ ডলারের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল উন্নয়ন সংস্থাগুলো।

অর্থবছরের প্রথম চার মাসে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর মধ্যে বড় দাগে সবচেয়ে বেশি ৬৪ কোটি ৭১ লাখ ডলার ছাড় করেছ জাইকা। এরপর ৩৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার ছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক। এডিবি ২৪ কোটি ৬৬ লাখ ডলার, চায়না ২৪ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, রাশিয়া ৮ কোটি ৪৭ লাখ ডলার এবং ভারত ৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার ছাড় করেছে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023 Mohajog