প্রস্তাবিত বাজেটে যেভাবে ভ্যাট ও ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাবে বলে মনে করেন বক্তারা।
বুধবার (১৫ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সিএ ভবনে বাজেটে অর্থ আইনের পরিবর্তনের ওপর আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আয়করের বিষয়ে বেশ কিছু অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে ফাঁকি বাড়ে।
প্রস্তাবিত বাজেট ব্যবসাবান্ধব হয়নি উল্লেখ করে তারা বলেন, বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হয়, বাজেটে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। এসব সিদ্ধান্তে আদায় বাড়বে না। বরং মামলা-মোকদ্দমা বাড়বে। এ ধরনের ইস্যুগুলো রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার।
আইসিএবি’র সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবীরের সঞ্চালনায় আইসিএবি আয়োজিত সেমিনারে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, এনবিআরের প্রথম সচিব শব্বির আহমদ, আইসিএবি’র প্রেসিডেন্ট কামরুল আবেদিন, হিসাববিদ নেসার আহমদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিএ ফার্ম স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার স্নেহাশীষ বড়ুয়া। তিনি সরকারের বাজেটের সবগুলো দিক নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করেন। তার প্রতিবেদনে বাজেটের দুর্বল দিকগুলো তুলে ধরেন।
একই সঙ্গে নতুন অর্থবছরের বাজেটে কোম্পানির নূন্যতম কর প্রস্তাবিত ০.৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে আগের মতো ০.৩ শতাংশ করা, রপ্তানির উৎসে কর ০.৮ শতাংশে নামিয়ে আনা, ভ্যাট সংক্রান্ত আপিলে শর্ত হিসেবে ৫০ শতাংশ অর্থ জমার বিধান বাতিল করে তা আগের মতো ১০ শতাংশ করা, বিনিয়োগকারীদের কর রেয়াতের বিধান আরো সহজ করাসহ বেশকিছু সুপারিশ করেন।
এ সময় বাজেটে আয়কর বিষয়ক নতুন সিদ্ধান্ত করদাতার আগের আয়ের ওপর প্রয়োগের সমালোচনা করেন বক্তারা। তারা বলেন, এটি ভবিষ্যতমুখী হওয়া উচিত।
উদাহরণ টেনে এবার করদাতার বিনিয়োগের বিপরীতে আয়কর রেয়াতের সুবিধা কমানোর ইস্যুটি উল্লেখ করে তারা বলেন, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে করদাতার বিগত আয় বছরের ওপর প্রয়োগ করা হবে। অথচ ওই সময়ের বিনিয়োগ সুবিধা বিবেচনায় করদাতারা বিনিয়োগ করেছেন। এখন অনেক প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবীদের কাছ থেকে বাড়তি কর কেটে নেওয়া হবে। এটি সঠিক বিচার নয়।
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান আইসিএবি’র প্রস্তাব নিয়ে বাজেট পাশের আগে ফের আলোচনার আশ্বাস দেন। তবে তিনি বলেন, কর কেউ পছন্দ করে না। কিন্তু সরকারকে তা আদায় করতেই হয়। আমাদের উদ্দেশ্য হলো, করদাতাকে কম কষ্ট দিয়ে এ কর আদায় করা।
তিনি বলেন, এতোদিন আমরা আবদ্ধ ছিলাম। বিদেশিদের সহায়তায় আমাদের চলতে হতো। কিন্তু বর্তমান সরকার এ আবদ্ধ অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসেছে। ১৬ কোটি মানুষকে সেবা দেওয়ার প্রত্যয়ে মাঠে নেমেছে। পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তাই দেশের উন্নয়নে করের হার একটু বেশি বাড়ানো প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এনবিআরের প্রথম সচিব শব্বির আহমদ বলেন, নতুন অর্থ রাজস্ব আয়ের বিশাল লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রাকে বাস্তবায়ন করতে কর আইনের অনেক পলিসির পরির্বতন করা হবে।
তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরে নূন্যতম ৩ লাখ করদাতা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাড়ানো হবে টিআইএনধারীদের সংখ্যাও।