বছর পাঁচ-ছয়েক আগেও দুই মৌসুমভিত্তিক সবজি উৎপাদন করা হতো। গ্রীষ্মকালে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউসহ শীত প্রধান সবজি পেতে মুখাপেক্ষী হতে হতো আমদানি করা সবজির ওপর। দামও ছিল চড়া।
এখন আর শীত বা গ্রীষ্মকালীন ‘প্রধান’ সবজি বলে কিছু নেই। বারমাসই মিলছে সব ধরনের তরতাজা সবজি। দামও তুলনামূলক কম।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বারমাসই সব ধরনের সবজি পাওয়ায় দেশের সব শ্রেণির মানুষ সবজির চাহিদা কমবেশি পূরণ করতে পারছেন। পাশাপাশি সবজি চাষিদেরও আয় বাড়ছে।
সোমবার (১৮ জুলাই) দিনগত রাতে দেশের প্রধান কাঁচাপণ্যের পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারের পাইকার, আড়তদার, বিক্রেতা ও সবজি চাষিরা এ তথ্য জানান।
রাত তিনটার দিকে প্রায় ৩০ বছর ধরে সবজিসহ কাঁচাপণ্যে পাইকারি কেনাবেচার সঙ্গে থাকা আসাদুজ্জামান, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন সবজি গ্রীষ্মকালে আমদানি নির্ভর ছিল। কোল্ডস্টোর থেকেও কিছু আসতো। কিন্তু মান তেমন ভালো হতো না। এখন সব তরতাজা।
পাশেই থাকা ২০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সবজির পাইকার ইদ্রিস চৌকিদার জানালেন, বছরের প্রতিটি সময়ই সব ধরনের সবজি ক্রেতারা কিনতে পারেন। হয়তো দু’একটা সবজি নাও পাওয়া যেতে পারে। গত কয়েক বছরে সবজির বাজারের বিরাট পরিবর্তন হয়েছে।
পাইকারি এ বাজার ঘুরে দেখা যায়, শীতপ্রধান সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, মুলা বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এর পাশাপাশি অন্যান্য সবজি করলা, কাকরোল, চিচিংগা, ঝিঙ্গাসহ বিভিন্ন সবজি রয়েছে বাজারে।
আগে বছরে একবার লাউ বিক্রি করতেন ময়মনসিংহের শেরপুর থেকে আসা লাউ চাষি মোতালেব। গত চার বছর ধরে সারা বছরই লাউয়ের জোগান দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
মোতালেব বলেন, শীতকালে পরিমাণে অনেক বেশি ও ভালো মানের লাউয়ের চাষ হয়। গরমের সময়ে তুলনামূলক কম ভালো হয়, কিন্তু দাম বেশি। আর বারমাস লাউ বিক্রি করতে পারায় আগের চেয়ে অনেক বেশি আয়ও বেড়েছে।
দুই যুগ ধরে সবজির ব্যবসা করেন এমন অন্তত ১৫ জন পাইকার ও খুচরা সবজি বিক্রেতা জানান, ক্রেতাদের মাঝে সবজি কেনার আগ্রহও অনেক বেড়েছে। দাম একটু বেশি হলেও নতুন সবজি কমবেশি সবাই কেনেন। এখন আর আমদানি করা বা কোল্ডস্টোরের পুরনো সবজির দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না।
দেশে সবজি চাষের পরিসংখ্যানও বেশ সমৃদ্ধ। বিশ্বে সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তবে এখনো সবজি গ্রহণের দিক দিয়ে তেমন এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বারমাস সবজি উৎপাদনের ফলেই দেশে সবজি চাষে বিপ্লব ঘটেছে।