বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অর্ধেকটাই প্রায় জামায়াত! কেননা, জোটে থাকা নাম ও সাইনবোর্ড সর্বস্ব রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অন্তত ৭টিই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জামায়াতের অর্থায়নে চলে।
সূত্রমতে, জোটের শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির শতভাগ অর্থের যোগানদাতা জামায়াত। দলটির অফিস ভাড়া, স্টাফদের বেতন, সভা-সেমিনার, মিছিল-মিটিং ও ব্যানার-পোস্টার ছাপানোসহ যাবতীয় খরচ বহন করে জামায়াত।
ফলে দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নামসর্বস্ব দল ‘বাংলাদেশ লেবার পার্টি’ পুরানা পল্টনে বিশাল এক ফ্ল্যাট বাড়ি মোটা অংকের টাকায় ভাড়া নিয়ে এতোদিন তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল।
কিন্তু জামায়াত সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ভবন মালিকের আপত্তির কারণে সম্প্রতি ওই অফিস ছাড়তে হয়েছে দলটিকে। এখন নয়াপল্টনের একটি পুরনো ভবনে এক রুম ভাড়া করে কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছে বাংলাদেশ লেবার পার্টি।
সূত্রমতে, দলটির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তফিজুর রহমান ইরান দল পরিচালনার জন্য প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা পান জামায়াতের কাছ থেকে। এ কারণে জোটের কোনো শরিক দল জামায়াতের সমালোচনা করলে বা জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগে বিএনপিকে পরামর্শ দিলে ডা. ইরান এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানকে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির একজন যুগ্ম মহাসচিব বাংলানিউজকে বলেন, শুধু লেবার পার্টি নয়, ২০ দলীয় জোটের বেশিরভাগ দলই জামায়াতের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়।
জোটের আরেক শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এখন পুরোপুরি জামায়াতনির্ভর হয়ে পড়েছে। দলটির যাবতীয় খরচ জামায়াতই বহন করে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কোণঠাসা হয়ে পড়া জামায়াত প্রকাশ্যে কোনো সভা-সেমিনার ও কর্মসূচি পালনের সুযোগ না পাওয়ায় জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধানই তাদের হয়ে কথা বলছেন। বিনিময়ে জামায়াতের কাছ থেকে পাচ্ছেন আর্থিক সহযোগিতা।
শফিউল আলম প্রধান , ‘কেউ যদি স্ব:প্রণোদিত হয়ে অর্থায়ন করতে চায়, নিতে সমস্যা কোথায়? এ খবরে যারা খুশি হতে চান, খুশি হোন। আর যারা কষ্ট পেতে চান, তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, আগে বলা হতো র’ এর টাকায় চলি। তারপর বলা হলো, পাকিস্তানের টাকায়। এখন বলা হচ্ছে, জামায়াতের টাকায়। তবে যে যাই বলুক, রাজনৈতিক কমিটমেন্ট থেকে আমি একচুলও সরে আসিনি’।
২০১৪ সালের জুন মাসে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হক দলবলসহ বিএনপি নেতৃ্ত্বাধীন জোট থেকে বেরিয়ে যান। পরে জোটের অখণ্ডতা রক্ষায় গাইবান্ধা জেলা কল্যাণ পার্টির সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামকে দিয়ে নতুন আরেকটি ন্যাপ ভাসানী গঠন করা হয়।
সূত্রমতে, এই ‘ন্যাপ ভাসানী’ও পুরোপুরি জামায়াতনির্ভর। নামসর্বস্ব এ দলটির যাবতীয় খরচ বহন করছে জামায়াত। অফিস ভাড়া থেকে শুরু করে ঢাকায় অবস্থান, যাতায়াত, হাত খরচসহ কোনো কিছু নিয়েই ভাবতে হয় না ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যানকে।
গত ০৭ জানুয়ারি বিএনপি নেতৃ্ত্বাধীন জোটের তৃতীয় বৃহত্তম দল ইসলামী ঐক্যজোট আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে জোট থেকে বের হয়ে যায়। ওই দিনই অ্যাডভোকেট আব্দুর রাকিব ও মাওলানা আব্দুল করিমকে দিয়ে গুলশানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আরেকটি ইসলামী ঐক্যজোট গঠন করা হয়। নবগঠিত এই ইসলামী ঐক্যজোটও চলছে জামায়াতের অর্থায়নে।
সুতরাং জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে নানা মহল থেকে জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও জোটের অখণ্ডতা রক্ষায় বিএনপির পক্ষে এই মুহূর্তে জামায়াত ছাড়া সম্ভব নয়। তবে কৌশলগত কারণে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় ঐক্যের বাইরে রাখা হতে পারে জামায়াতকে।