গ্রীষ্মের ধুলোয় একরাশ জল ঢেলে নামে বর্ষা। আষাঢ়ের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি করে বর্ষারানী এখন শ্রাবণের সংসারে। আকাশে ধূসর-নীলাভ মেঘমালা। যখন-তখন ঝরে ঝুমঝুম বৃষ্টি। স্বচ্ছ প্রকৃতিও নিজেকে সাজিয়ে নিচ্ছে বর্ষার ফুলে ফুলে। বাতাসের গায়ে কদম, কামিনী আর বকুলের সৌরভ। বৃষ্টি নামলে নদী, খাল ও পুকুরে তালে তালে নেচে ওঠে শাপলা আর কচুরিপানার দল।
কদম
বর্ষার অন্যতম প্রতীক কদমফুল। বৃষ্টি বাতাসে কদম ফুলের ঘ্রাণ। কদমের হলুদ ও সাদা পাপড়িতে লেগে থাকা বৃষ্টির ফোঁটা ছড়ায় হীরের আলো। কদম ফুলের আদি নিবাস চীন, মালয় ও ভারতের উষ্ণ অঞ্চলে।
কচুরিপানা
বর্ষায় নদী, খাল-বিল ও জলাশয় টইটুম্বুর হয়ে যায়। তখন নতুন জলে শোভা পায় কচুরিপানার বেগুনি রঙের ফুল। দ্রুত বংশবৃদ্ধিকারী কচুরিপানা বর্ষাকালে আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে জলাতে। কচুরিপানার আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। আমাদের দেশে কচুরিপানা আসে ১৮শ’ শতাব্দীর শেষের দিকে।
কামিনী
বৃষ্টির ভেজা রাতে কামিনী ফুলের ঘ্রাণ পৌঁছে যায় বাড়ি বাড়ি। সারাবছর ফুল ফুটলেও বর্ষায় এই গাছ আরও সজীব হয়ে ওঠে। সাদা পাপড়ির ফুলটি বড় হয় ০.৪৭ থেকে ০.৭০ ইঞ্চি পর্যন্ত।অলকানন্দা
হলদে মোমের মতো পেলব হলুদ অলকান্দা। বৃষ্টির সময় গাছ ভরে যায় সোনারঙা অলকানন্দা ফুলে। বৃষ্টিধোঁয়া বাতাসে মনের আনন্দে দুলতে থাকে তারা। যেনো অনুরণ ছাড়াই বেজে চলেছে অবিরাম ঘণ্টা।
শাপলা
বর্ষার সকালে সাদা শাপলার মায়া ছড়িয়ে পড়ে বাংলার জলে। আমাদের দেশে সাদা বা গোলাপি রঙের শাপলা বেশি চোখে পড়লেও বেগুনি, লাল ও নীল রঙের শাপলাও রয়েছে। এই ফুল দিনের বেলা ফোঁটে।
বকুল
প্রশস্ত বকুল গাছের নিচে বিছানো বকুল ফুলের সারি। হিম বাতাসের গায়ে মেখে বকুলের সুগন্ধ। বকুল ফুল পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। তারার মতো দেখতে বকুল ফুলের মালা গেঁথে ঘরে রাখার প্রচলন অনেক আগেকার।
ঝুমকোলতা
প্রকৃতিতে এদের আগমন ঘটে বর্ষাকালে। তবে থাকে প্রায় সারাবছর। ঝড়ো বৃষ্টির পর যখন প্রকৃতি সতেজ হয়ে ওঠে তখন সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দেয় লাল, বেগুনি ঝুমকোলতা। পৃথিবীতে প্রায় অর্ধশত প্রজাতির ঝুমকোলতা রয়েছে।
টগর
বনে বর্ষা বার্তা পৌঁছে গেলে ঝোঁপের আড়ালে লুকোনো টগর গাছে ফোটে দুধসাদা ফুল। সবুজ পাতার বুকে জানান দেয় নিজের শুভ্রতার বাণী। সারা বিশ্বে প্রায় ৪০ প্রজাতির টগর রয়েছে। তবে আমাদের দেশে মোট চার প্রজাতির টগর ফুল দেখা যায়।