রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৩ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে ভর্তি করা হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ জন রোগী ভর্তি করা হয়।
তারমধ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালে দুইজন, ইবনে সিনা দুইজন,স্কয়ার হাসপাতালে একজন,ল্যাবএইডে একজন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে চারজন,ইসলামি ব্যাংক হাসপাতালে একজন ও ইউনাইটেড হাসপাতালে ৬জনকে ভর্তি করা হয়।
বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অর্ধশতাধিক রোগীর অধিকাংশই অভিজাত এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. শাখাওয়াত জানান, জুন মাসে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন পপি (১৫), শামীম (২৩), সাইফুন্নাহার ও কাজী রোকসানা (৩২)।
এরমধ্যে পপি ও শামীম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সাইফুন্নাহার স্যার সলিমুল্লাহ মিটফোর্ড হাসপাতাল ও কাজী রোকসানা সেন্ট্রাল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি বলেন, জুন-জুলাই মাসে ডেঙ্গু মশার প্রজনন মওসুম। এসময় থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে। জমে থাকা বৃষ্টির পানি থাকলে ডেঙ্গু মশার প্রজনন বাড়ে। তাই বাড়ি বা বাড়ির আঙিনার কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন।
রাজধানীর লালবাগ এলাকার বাসিন্দা হাসনাত আলী জানান, কিছুদিন আগে তার স্ত্রী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। প্রথমে সাধারণ জ্বর মনে করলেও পরে রক্ত পরীক্ষা করে জানতে পারেন রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কমে গেছে। ডাক্তারের পরামর্শে পূর্ণ বিশ্রামে থাকার পাশাপাশি তরল পানীয় ও খাবার খেয়ে এখন মোটামোটি সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন মোট ৫শ’৭৩ জন।
গত সপ্তাহে আইসিডিআরবি’র ওয়েভসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ২০০০ সালের পর চলতি বছর ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের ক্লিনিক্যালি রোগ শনাক্ত কিছুটা সময় সাপেক্ষ হওয়ায় আগাম প্রতিষেধক হিসেবে ভ্যাকসিন তৈরির কার্যক্রম চলছে বলে জানা যায়।
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দ্য হু স্ট্রাটেজিক অ্যাডভাইজারি গ্রুপ অব এক্সপার্টস্ (এসএজিএ) বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে বিগত ৬ দশকে মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৩০ গুণ বেড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশে উদ্বেগজনকভাবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
ফলে রোগ প্রতিরোধে নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিন থাকা জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশ্বের মোট ১২৮টি দেশের প্রায় ৩৯কোটি লোক প্রতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে মাত্র ৫ লাখ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয় বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।