তৈরি পোশাক রফতানিতে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। অচিরেই তা শীর্ষস্থান দখল করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। রোববার এসএমই ফাউন্ডেশন আয়োজিত ফ্যাশন ডিজাইনারদের প্রস্তুতকৃত পোশাক প্রদর্শনী-২০১৬ এর উদ্বোধনকালে তিনি এ আশা প্রকাশ করেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের (পোশাক প্রদর্শনী) উদ্যোগ দেশের তৈরি পোশাক শিল্পখাতের গুণগত মানোন্নয়ন ও মূল্য সংযোজনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। পাশাপাশি এসএমই পোশাক ডিজাইনারদের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজ ও পোশাক বিক্রেতাদের কার্যকর ব্যবসায়িক লিংকেজ স্থাপনেও ভূমিকা হবে অনন্য।
তিনি বলেন, রফতানিমুখী তৈরি পোশাক বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পখাত। রফতানি আয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মূল্য সংযোজন ও জনগণের জীবন মানোন্নয়নে এ শিল্পখাতের ব্যাপক অবদান রয়েছে। সম্প্রতি আমি বিশ্ব বিনিয়োগ ফোরামে যোগ দিতে কেনিয়া সফর করেছি। সেখানে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থার (আঙ্কটাড) মহাসচিব ড. মুখিসা কিটুই এর সাথে আমার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের উদীয়মান তৈরি পোশাক শিল্প অচিরেই বিশ্বের শীর্ষস্থান দখল করবে বলে আঙ্কটাডের মহাসচিব অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
আলোচনাকালে তিনি তৈরি পোশাক শিল্পখাতে বাংলাদেশের বিস্ময়কর অগ্রগতির দৃষ্টান্ত বিশ্বের যে কোনো দেশের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন শিল্পমন্ত্রী।
আমির হোসেন আমু বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প সম্পর্কে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ব ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দের এ ধরনের ইতিবাচক ধারণা শুধু শুধু হয়নি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, উদ্যোক্তাদের দক্ষতা এবং মনোবলের কারণে বিশ্ব মন্দার মাঝেও আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পখাতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এ শিল্প অন্যতম চালিকা শক্তি।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের গার্মেন্ট শিল্প কারখানাগুলোতে ৪০ লাখেরও বেশি শ্রমিক কাজ করছে। এর ৮০ শতাংশই নারী। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ২০২১ সালে এ শিল্পখাতে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বর্তমান সরকার কাজ করছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য দেশেই তৈরি পোশাক শিল্পখাতে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল সৃষ্টির উদ্যোগ জোরদার করা প্রয়োজন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পখাতে কর্মরত জনবলের ৫ শতাংশ পেশাগত, ১৫ শতাংশ দক্ষ, ৩৫ শতাংশ আধা-দক্ষ এবং ৪৫ শতাংশ অদক্ষ জনবল কর্মরত আছে। এছাড়াও এ সেক্টরে এখন প্রায় ৩৮ হাজার কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন এবং পণ্য বিপণনে প্রায় ৩৩ হাজার দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি রয়েছে।
পাশাপাশি ফ্যাশন ডিজাইন, মার্চেন্ডাইজিং, টেক্সটাইল, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, প্রোডাকশন ও কমপ্ল্যায়েন্সসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে দক্ষ জনবলের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি পূরণে এখন থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ, বিদেশি জনবলের ওপর নির্ভর করে কোনো শিল্প টেকসই হতে পারে না।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, নারী ক্ষমতায়ন আমাদের সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গিকার। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জনে আমরা নারীর সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। নারীদের উন্নয়নের মূল স্রোত ধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন তৃণমূল পর্যায় থেকে নারী উদ্যোক্তা তৈরির ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর ফলস্বরূপ বাংলাদেশি অনেক নারী উদ্যোক্তা দেশে-বিদেশে পুরস্কৃত হয়ে এসএমইখাতকে সমৃদ্ধ করেছে।
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই ফ্যাশন ডিজাইন কোর্স আয়োজন ফাউন্ডেশনের ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডের অংশ। এ প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ার্কিং উইথ ফ্যাশন ডিজাইন’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় ইতোমধ্যে ৬শ’ জন ফ্যাশন ডিজাইনারকে প্রশিক্ষিত করেছে। এর মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদার আলোকে হাল ফ্যাশনের পোশাক প্রস্তুত করা সম্ভব হচ্ছে। পোশাকসহ উৎপাদিত এসএমই পণ্যের মূল্য সংযোজনের ক্ষেত্রেও এ প্রশিক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বলেও জনান তিনি।