সারিয়াকান্দি থেকে: তখন ভর দুপুর। রৌহদহ গ্রামের একটি বাড়ি থেকে এক নারীর কান্নার শব্ধ শোনা যাচ্ছিলো। টিনের ছাউনি ও ঘেরা বিশিষ্ট বাড়িটির অবস্থান যমুনা থেকে কিছুটা পশ্চিমে। গাছপালা থাকার কারণে নৌকা নিয়ে বাড়িটির কাছে ভেড়া গেলো না।
সঙ্গে ছিলেন আবুল কালাম আজাদ নামের একজন প্রবীণ ব্যক্তি। তিনি জানালেন, যমুনার করাল গ্রাসে এই নারী সর্বস্ব হারিয়ে ফেলেছেন। ঘর ছাড়া তার কিছুই নেই। সবকিছু বানের পানিতে ভেসে গেছে। আর খাবার সামগ্রী পচে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই পানিবন্দি হয়ে ঘরে কান্না করছেন। তবে তিনি তার নাম বলতে পারেন নি।
হিংস্র যমুনার করাল গ্রাসে সারিয়াকান্দি উপজেলার লাখো নারী-পুরুষ সর্বস্ব হারিয়ে এরকম বিলাপ করছেন। কিন্তু তাদের দেখার কেউ নেই। যে যেখানে পারেন আশ্রয় নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে এ উপজেলা গঠিত। এর মধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে ৯টি ইউনিয়ন। এতে প্রায় ৯০টি গ্রামের প্রায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এখনো বানভাসি মানুষ বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া বিভিন্ন আসবাবপত্র নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসছেন। এক্ষেত্রে তারা কাঠের তৈরী নৌকা ও কলাগাছের ভেলা ব্যবহার করছেন। আবার অনেকেই কোমর পানিতে নেমে ভিজে কিছু কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আসছেন আশ্রয় নেওয়া স্থানে।
রেহেনা, পারভীন, সামাদ, ওমর আলীসহ একাধিক ভুক্তভোগী বাংলানিউজকে জানান, গেল দেড় মাসে যমুনা তাদের তিনদফা গ্রাস করেছে। এরমধ্যে তৃতীয় দফায় যমুনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তাদের সবার বসতবাড়ি সম্পূর্ণরূপে তলিয়ে গেছে। হিংস্র যমুনা তাদের সবকিছু লুটেপুটে নিয়েছে। মাথা গোঁজার ঠাঁইকুটু কেড়ে নিয়ে তাদের পথে বসিয়ে দিয়েছে।
তারা জানান, বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় যে যার মত উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু ঘরে খাবার নেই বললেই চলে। এতে করে তাদের চরম কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। আর বৃষ্টি হলে তো কোনো কথাই নেই। তখন কষ্টের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।