নদীবেষ্টিত দ্বীপাঞ্চল মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নটির চতুর্দিক ঘিরে রেখেছে আড়িয়াল খাঁ নদী। এ ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের ৫০০ বছরের নৌপথ চলার দুর্ভোগ দূর করতে আড়িয়াল খাঁ নদীর উপর হবিগঞ্জ ও শম্ভূক সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
জানা গেছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের ধুরাইল ইউনিয়নটির চতুর্দিকে আড়িয়াল খাঁ নদী। ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে এ ইউনিয়নটিতে দ্বীপাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। আদি নিবাস প্রায় ৫০০ বছর। এ ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ শত শত বছর ধরে খেয়া নৌকা ও ট্রলারযোগে আড়িয়াল খাঁ নদী পাড়ি দিয়ে উপজেলা ও জেলা শহরসহ ঢাকার সঙ্গে যাতায়াত করে আসছে। তবে এতে চরম ভোগান্তিতেই পড়তে হয় এই এলাকার মানুষদের।
রাত ৮টার পর নদীতে আর খেয়া নৌকা থাকে না। রাতে কেউ অসুস্থ বা বিপদগ্রস্ত হলে একমাত্র সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা করেই নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না হওয়ায় এখানকার ছেলে মেয়েদের বিয়ে দেয়া-নেয়া নিয়েও ভোগান্তি রয়েছে। যথাসময়ে খেয়া নৌকা না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের ঠিক সময়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বা শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হওয়া নিয়েও পড়তে হয় বিপাকে।
এই এলাকার মানুষের শত শত বছরের দুর্ভোগ দূর করার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান ও নূর-ই-আলম লিটন চৌধুরী এমপির বলিষ্ঠ ভূমিকায় বর্তমান সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে মাদারীপুরের ত্রিভাগদী-জিসি-মিঠাপুরহাট-হবিগঞ্জহাট-শেখপুর-মোল্লারহাট সড়কের হবিগঞ্জ আড়িয়াল খাঁ নদীর উপর ৬৩ কোটি ৯৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা এবং শিবচরের শম্ভূক আড়িয়াল খাঁ নদীর উপর ৭০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫২০ মিটার দৈঘ্যের দুইটি সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে মীর আক্তার ও তানতিয়া ওটিবিএল নামের দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
শম্ভূক ব্রিজটির নির্মাণ কাজ ১৩ আগস্ট ২০১৩ সালে শুরু হয়ে শেষ হয় ১২ ফেব্রুযারি ২০১৬ তারিখ এবং হবিগঞ্জ সেতুর নির্মাণ কাজ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখ শুরু হয়ে শেষ হবে চলতি বছরের ১৫ ডিসেম্বর।
ধুরাইল ইউনিয়নের উত্তর বিরঙ্গল গ্রামের অখিল চন্দ্র মন্ডল জানান, কলেজের পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় খুব ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়। কারণ যথাসময়ে খেয়া নৌকা না পেলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। হবিগঞ্জের ব্রিজটি চালু হলে মহাসঙ্কটের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
একই ইউনিয়নের বৈরাগীর হাট গ্রীন চাইল্ড কিন্ডার গার্টেনের অধ্যক্ষ জালালুর রহমান মুন্সী জানান, বর্ষাকালে খরস্রোতা আড়িয়াল খাঁ নদী পারাপার নিয়ে সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়েছে।
ধুরাইল ইউনিয়নের চাছার গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আ. খালেক হাওলাদার জানান, নদীবেষ্টিত এ এলাকার জনগণ মহাদুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে শত শত বছর যাবত বসবাস করে আসছে। হবিগঞ্জ ও শম্ভূক এলাকায় যে এত বড় দুইটি ব্রিজ নির্মাণ হবে তা কোনো দিন কল্পনাও করতে পারিনি। দুর্ভোগ লাঘবের জন্য শেখ হাসিনার সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।
ধুরাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মজিবর রহমান মৃধা জানান, ৫০০ বছরেরও অধিক সময় ধরে ধুরাইল ইউনিয়নের জনগণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত ছিল। আড়িয়াল খাঁ নদীর উপর ২টি ব্রিজ নির্মাণ করায় ধুরাইল ইউনিয়নের জনেণের ভাগ্যের চাকা খুলে গেছে এবং ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে।
মাদারীপুর এলজিইডির বিদায়ী নির্বাহী প্রকৌশলী নির্মল কুমার বিশ্বাস জানান, বাংলাদেশ সাউথ ওয়েস্টার্ন রুরাল ডেভলেপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় মাদারীপুর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের হবিগঞ্জ ও শিবচরের শম্ভূক আড়িয়াল খাঁ নদীর উপর দুইটি ব্রিজের কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে।
শিবচরের ৫২০ মিটার শম্ভূক ব্রিজের কাজ ইতোমধ্যেই সমাপ্ত হয়েছে এবং হবিগঞ্জ ব্রিজের হালনাগাদ কাজের অগ্রগতি হচ্ছে ৭০ ভাগ। আগামী ডিসেম্বরে এ কাজটা সমাপ্ত হবে। ব্রিজ দুইটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে শিবচর তথা ঢাকা এবং পদ্মা ব্রিজের এপ্রোজের সঙ্গে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপন হবে এবং ঢাকার সঙ্গে দূরত্ব অনেক কম হবে।
মাদারীপুরের হবিগঞ্জ ও শম্ভূক সেতু দুইটি চালু হলে ধুরাইল ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী কয়েক ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ ফিরে পাবে নতুন জীবন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ এবং কৃষি ক্ষেত্রে ঘটবে আমূল পরিবর্তন প্রত্যাশায় রয়েছেন লাখো মানুষ।