দেশের ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলার মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেছিল জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ(জেএমবি)। এরপর থেকেই আত্মঘাতী হামলার মাধ্যমে নিজেদের শক্তির জানান দেয় সংগঠনটি। সে সময় জেএমবির ভারপ্রাপ্ত আমির ও প্রধান মাওলানা সাঈদুর রহমান গ্রেফতার হওয়ায় অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল জেএমবি। গত এক বছরে আবারো ঘুরে দাঁড়ায় সংগঠনটি। নতুন করে হত্যাযজ্ঞ ও নাশকতা শুরু করে তারা। তবে জেএমবি এখন দুই গ্রুপে বিভক্ত। দুই গ্রুপের দুই মতাদর্শ আর এজেন্ডা নিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে তারা।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিট সূত্র জানায়, দেশে গত এক বছরে যতগুলো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে তার বেশিরভাগই জেএমবির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তবে বর্তমানে জেএমবি দুইভাগে বিভক্ত। দুটি গ্রুপই বিভিন্ন নামে নাশকতা করছে।
সূত্র জানায়, দুই গ্রুপের মধ্যে প্রথমটিতে মাওলানা সাঈদুর রহমানের অনুসারীদের। তারা পীরদের টার্গেট করে হত্যা করে। কখনো আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা আবার কখনো আনসার-আল-ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। তাদের অঙ্গসংগঠন হতে চায় তারা। তাই যে কোনো হত্যাকাণ্ডের পর আন্তর্জাতিক সংগঠনকে দিয়ে দায় স্বীকার করায়। এই গ্রুপে ৪০-৪৫ সদস্য সক্রিয় রয়েছে। এদের বেশির ভাগ নিম্নবিত্ত পরিবারের। ইসলামিক নেতা ও উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী, গোপীবাগের কথিত পীর লুৎফর রহমান ও বাড্ডার খিজির খান হত্যার সঙ্গে এ গ্রুপটি জড়িত।
অর্থ সংগ্রহের জন্য গ্রুপটি ব্যাংক ডাকাতিসহ চুরি-ছিনতাইয়ের কাজে লিপ্ত। এই গ্রুপের শীর্ষ নেতা মো. জাহিদ হোসেন সুমনকে (বোমারু মিজান) পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। বর্তমানে সে ভারত থেকে নির্দেশনা দিচ্ছে বলে ধারণা গোয়েন্দাদের।
পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল এ কে এম শহীদুল হক বলেন, দেশে আইএসের দৃশ্যমান কোনো অস্তিত্ব নেই। বর্তমানে জেএমবি দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নাশকতা ঘটাচ্ছে। পুরনো গ্রুপটি মাজারপন্থীদের হত্যায় জড়িত। ভিন্ন মতাদর্শের আরেকটি গ্রুপ নতুনভাবে সংগঠিত হয়েছে। তারা বিদেশিদের হত্যা করছে।
জেএমবির নতুন গ্রুপ নিউ-জেএমবি নামে পরিচিত। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, এই গ্রুপের সদস্যরা মাওলানা সাঈদুর রহমানের মতাদর্শবিরোধী। সদস্যদের বেশির ভাগ উচ্চবিত্ত, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। তারা জীবনে অন্তত একবার মালয়েশিয়া, আফগানিস্তান, তুরস্ক, সিরিয়া, লিবিয়া ছাড়াও পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোতে ঘুরতে কিংবা পড়াশোনা করেছে।
‘নিউ জেএমবি’র সদস্যদের টার্গেট মূলত বিদেশিরা। মুসলমানদের ওপর খ্রিস্টান ও ইহুদিদের অত্যাচার, নির্যাতনের ভিডিও দেখিয়ে তাদের মগজ ধোলাই করা হয়েছে। এরা আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটসের (আইএসের) মতাদর্শী। তাদের আইএসের তৈরি বিভিন্ন ভিডিও দেখে কথিত জিহাদে উৎসাহী করা হয়। নতুন এই জেএমবি দেশে বিদেশি হত্যাসহ হোসেনি দালানে হামলা ও গুলশান হামলার মতো বড় হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি গোয়েন্দাদের।
গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, নতুন এই জেএমবি সংগঠক ও প্রধান তামিম আহমেদ চৌধুরী। সাংগঠনিক নাম শেখ আবু ইব্রাহীম। তার জন্ম কানাডায়। বাবার বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজারে। বিশ্বের কয়েকটি গণমাধ্যম তামিমকে আইএস-বাংলাদেশের প্রধান হিসেবে উল্লেখ করেছে।
পুলিশের দাবি, গুলশান হামলার পূর্বে তামিম নিহত জঙ্গিদের নিয়ে বৈঠক করেছে। হামলার দিন জঙ্গিদের নানা বিষয়ে ব্রিফ করেছে। তামিমকে গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড বলে দাবি করছে পুলিশ।
কে বা কারা কিংবা কোন মহল নতুন এই জেএমবির পৃষ্ঠপোষকতা করছে এ বিষয়ে পুলিশের সিটি ইউনিটপ্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, আগের মতো কোনো শক্তিশালী মহল থেকে তারা পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে না। জেএমবির নতুন সদস্যরা নব্য জেএমবি সংগঠিত করছে। তারা যাতে সংগঠিত হতে না পারে পুলিশ সে লক্ষ্যে কাজ করছে।