বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা জানান।
তিনি বলেন, “ভালো কথা। আমরা তাদের কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়েছি, কর্মসূচিকে সমর্থনও করছি।”
বিএনপি আলাদা কর্মসূচি নিয়ে নামবে কি না- প্রশ্নে ফখরুল বলেন, “আমরা মাঠে নেমে বিরোধিতা করব কি না- সেটা নির্ভর করবে সরকারের আচরণের ওপরে। কারণ আমরা একটা দাবি জানিয়েছি, আমরা অপেক্ষা করব, সেই দাবির প্রতি তারা (সরকার) কীভাবে রেসপন্স করছে।”
এর আগে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রামপাল প্রকল্পটি ‘দেশবিরোধী’ দাবি করে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সুন্দরবনের কাছ থেকে অন্য এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।
ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে রামপালে যে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে, তা বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ হুমকিতে ঠেলে দেবে দাবি করে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে বাম দলগুলো।
বিরোধিতার জবাবে সরকার বলছে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দূষণের মাত্রা ন্যূনতম রেখেই এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে, যা সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করবে না।
রামপালে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবিতে গত ২০ অগাস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি থেকে ২৪ নভেম্বর থেকে ‘চল চল ঢাকা চল’ এবং ২৬ নভেম্বর ঢাকায় ‘মহাসমাবেশের’ কর্মসূচি দেয় তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটি।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মির্জা ফখরুল সকালে সংগঠনের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের নেতৃত্বে নেতৃবৃন্দকে নিয়ে জিয়ার কবরে ফুল দেন। এরপর তারা প্রয়াত নেতার আত্মার মঙ্গল কামনায় মোনাজাত করেন।
মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, “মুক্তিযোদ্ধারা আজকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করে শপথ নিয়েছেন যে, তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করা, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা, মানুষের সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষা করা- তা করবে।”
খালেদা জিয়ার রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধিতার প্রতিক্রিয়ায় বুধবারই এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, “খালেদা জিয়া রাজনৈতিকভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য কোনো ইস্যু না পেয়ে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতা করছেন।
“বাম সংগঠনগুলোর রামপাল ইস্যু; তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টিকে থাকা যায় কি না দেখছেন। এই অযৌক্তিক ইস্যু নিয়ে টিকে থাকার কোনো সুযোগ নেই।”
এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব ফখরুল বলেন, “আওয়ামী লীগ যে কোনো বিষয়কে ডাইভার্ট করার জন্য যে প্রচেষ্টা, সেটাই করছে। বিএনপি এবং বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়া সবসময় বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের পক্ষে কাজ করেছেন, করছেন।
“তিনি দেশের মানুষের পক্ষে আন্দোলন করেছেন, তাদের স্বার্থকে তুলে ধরেছেন। এই স্বার্থ রক্ষার স্বার্থে আমাদের সুন্দরবন, যেটা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সেটাকে রক্ষা করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া রামপাল থেকে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।”
বিএনপি কোনো অবস্থাতেই দেশে আরও বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ার বিপক্ষে নয় জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “বিএনপি চেয়ারপারসন স্পষ্ট করে বলেছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র আরও বেশি নির্মাণ হউক, সেটা আমরা চাই। কিন্তু সেটা কোনো অবস্থাতেই সুন্দরবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নয়।
“আমাদের অনেক জায়গা আছে, অনেক বিকল্প পথ আছে কিন্তু সুন্দরবনের কোনো বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, এদেশের মানুষ একমত যে, সরকারের উচিৎ রামপাল থেকে সেই বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প সরিয়ে নেওয়া”
২০ দলীয় জোটের নেতাদের পাশে রেখে বুধবার নিজ কার্যালয়ের ওই সংবাদ সম্মেলনে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবি জানালেও কোনো কর্মসূচি দেননি খালেদা জিয়া।
‘সুন্দরবন রক্ষা’ ইস্যুতে বিএনপি কর্মসূচি দেবে কি না- জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব বলেন, “এটা নির্ভর করবে সরকার কীভাবে রেসপন্স করছে। সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করবে বিএনপির আচরণ।”
রামপালে ওই প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের ‘জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান পরিষ্কার’ হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
“এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, আওয়ামী লীগ জাতীয় স্বার্থে বিরুদ্ধে এই কাজটি করছে। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে, জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই কাজটি করছে। সুতরাং তারা বিভিন্ন রকম কথা বলে জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নিতে চাচ্ছে।”
এ সময় অন্যদের মধ্যে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহসান, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, মুক্তিযোদ্ধা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান উপস্থিত ছিলেন।