রিজার্ভ থেকে চুরি হয়ে যাওয়া টাকার একটি অংশ দ্রুত দেশে ফেরত আনা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই টাকার পরিমাণ প্রায় ১২২ কোটি। আজ মঙ্গলবার সংসদ ভবনে সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক লিখিতভাবে জানায়, ফিলিপাইনের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অং চুরি হয়ে যাওয়া টাকা থেকে ১৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের কাছে জমা দিয়েছেন। বাংলাদেশকে এই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য কাউন্সিল ও কিম অং আদালতে আবেদন করলে গত ১ জুলাই আদালত তা বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেন। পরে ফিলিপাইনের স্থানীয় আইন অনুযায়ী সেই দেশের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আবেদন করেছে। এখন আদালত আদেশ দিলেই বাংলাদেশ ১২২ কোটি টাকা ফেরত পাবে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮১ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৮৪৮ কোটি টাকা) চুরি করা হয়। পরে এই টাকা ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের চারটি হিসাবে জমা হয়। সেখান থেকে টাকা ক্যাসিনোতে চলে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক কমিটিকে জানিয়েছে, অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজাল ব্যাংককে ২১ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৬৮ কোটি টাকা) জরিমানা করেছে।
বৈঠক শেষে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধারের বিষয়ে তাদের অগ্রগতির প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তারা মনে করে, ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজাল ব্যাংককে জরিমানা করায় জালিয়াতির সঙ্গে ব্যাংকটির জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া পুরো টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
কমিটির আগের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংককে ফরাসউদ্দিনের করা তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছিল। তবে আজকের বৈঠকে তারা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেনি। জানতে চাইলে মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন যে তাঁরা নিজেরাই এখনো প্রতিবেদনটি পাননি। এটি অর্থমন্ত্রীর কাছে জমা আছে।
এর আগে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি একাধিকবার ব্যাংকের ঋণের সুদের হার এক অঙ্কে (দশের নিচে) নামানোর সুপারিশ করেছিল। এই সুপারিশ কার্যকর না হওয়ায় আজকের বৈঠকে কমিটির পক্ষ থেকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংককে সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে।
কমিটির সভাপতি শওকত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন ও মুহিবুর রহমান মানিক উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন ব্যাংক ও আর্থিক বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরসহ অন্য কর্মকর্তারা।