প্রতিবেদক : ঢাকার বনানীতে স্বাধীনতা বিরোধী মোনায়েম খানের যে বাড়িটির বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল করার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক।
সব যুদ্ধাপরাধীর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবিতে শনিবার বনানীতে এক মানববন্ধনে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আনিসুল বলেন, “মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের দাবির প্রতি আমি একমত।
“আমরা এই দাবির প্রতি সম্পূর্ণভাবে সমর্থন জানাচ্ছি। এখানে মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ মানুষের জন্য একটি হাসপাতাল করা হবে।”
একাত্তরে মুক্তিবাহিনীর হামলায় নিহত মোনায়েম খানের উত্তরাধিকাররা বানানীর ওই বাড়ি সংলগ্ন সরকারি ১০ কাঠা জমি দখল করে রেখেছিলেন, যা গত ৩ নভেম্বর উচ্ছেদ করে উত্তর সিটি করপোরেশন।
সেসময় মেয়র আনিসুল চিহ্নিত এই স্বাধীনতাবিরোধীর বাড়ির বরাদ্দ বাতিলে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এরপর গত বুধবার গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন জানান, বাড়িটির বরাদ্দ বাতিলার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেছিলেন, “ওইটা ক্যানসেল হয়ে গেছে। আমি বলে দিয়েছি, যে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে,তার প্লট বাতিল হবে।
“সেটা গণপূর্তের প্লটই হোক,রাজউকেরই হোক। সেটা বাতিল। আপনারা সেইটা ক্যানসেল করে দেন,আমরা মন্ত্রণালয় থেকে ক্যানসেল করে দেব।”
উচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থার সুযোগ নিয়ে কেউ যেন রাস্তাঘাট দখল করে রাখতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রধান বিচারপতির প্রতি অনুরোধ জানান মেয়র।
তিনি বলেন, “আমি দেখছি হাজার হাজার বিঘা জমি একটি স্থিতাবস্থার সুযোগ নিয়ে দখল করে আছে। প্রধান বিচারপতির কাছে আমাদের দাবি, একটি আলাদা কমিশন গঠন করুন। যেসব জমি প্রভাবশালীরা আটকে রেখেছে, সেগুলো মুক্ত করে দিন।
“আমি মেয়র হয়ে দেখছি ঢাকা শহরের হাজার হাজার বিঘা জমি প্রতাপশালী-প্রভাবশালী লোকেরা দখল করে রেখেছে। গরীব হকাররা রাস্তা দখল করলে তাদের তাড়ানো যায়। কিন্তু বড়লোকরা পুলিশকে তাড়ানোর ক্ষমতা রাখে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সেই যুদ্ধে নেমেছে।”
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্র, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, বাংলাদেশ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সমিতি, প্রজন্ম ৭১, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ মোর্চা, যুদ্ধাপরাধ গণবিচার মঞ্চ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন এবং আমরা মু্ক্তিযোদ্ধার সন্তান এ মানববন্ধন করে।
মানববন্ধনে নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির জানান, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের কয়েকটি রায়ে যুদ্ধাপরাধীদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তা শহীদ পরিবারকে দিতে হবে। কিন্তু এ বিষয়ে আইন না থাকায় এটা তারা দিতে পারছেন না। এজন্য আইন সংশোধনের দাবি জানান তিনি।
“গত তিন বছর ধরে আমরা বলছি আইন সংশোধন করুন। এদের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে শহীদ পরিবারের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে। কারণ এরা হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি দখল করে রেখেছে, শহীদ পরিবারগুলো রাস্তায় ভিক্ষা করছে। এটা বাংলাদেশে মেনে নিতে পারছি না।”
“যারা বাংলাদেশ চায়নি, তাদের জমি কেন বাংলাদেশে থাকবে”-এ প্রশ্ন তোলেন শহীদ ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে নুজহাত চৌধুরী।