প্রতিবেদক : এক যুগ আগে খুলনায় সাংবাদিক মানিক চন্দ্র সাহাকে হত্যার ঘটনায় নয় আসামির যাবজ্জীবন সাজার রায় দিয়েছে আদালত, খালাস পেয়েছেন দুইজন। বুধবার খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম এ রব হাওলাদার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিদের সবাইকে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দিতে হবে। ওই অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে আরও এক বছর করে কারাভোগ করতে হবে তাদের।
একই ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় দশ আসামির সবাইকে খালাস দিয়েছেন বিচারক।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এনামুল হক জানান, হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন পাওয়া নয় আসামির মধ্যে সুমন ওরফে নুরুজ্জামান, আলী আকবর ওরফে শাওন, বুলবুল ওরফে বুলু ও আকরাম ওরফে বোমারু আকরাম রায়ের সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
পাঁচ আসামি সাত্তার ওরফে ডিসকো সাত্তার, সাকা ওরফে সাখাওয়াত, বেল্লাল, সরো ওরফে সরোয়ার ও মিঠুন পলাতক। এ মামলার ১১ আসামির মধ্যে আবদুল হাই ইসলাম ওরফে কচি ও ওমর ফারুক ওরফে কচি খালাস পেয়েছেন। তাদের মধ্যে আবদুল হাই কারাগারে ছিলেন, আর ফরুক পলাতক।
মানিক সাহার স্ত্রী খুলনায় মেটার্নিটি হাসপাতালে চাকরি করেন। তাদের বড় মেয়ে নাতাশা যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতক পাশ করে সেখানে চাকরি করছেন। ছোট মেয়ে পর্শিয়াও যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতক পড়ছেন।
মানিকের ছোট ভাই প্রদীপ সাহা সাংবাদিকদের বলেন, “আমি আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা আশা করেছিলেন। হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থ যোগানদাতাদের সাজা হয়নি। এই রায়ে আমি সন্তুষ্ট নই ।”
অন্যদিকে এই রায়ে ‘ন্যায়বিচার পাননি’ মন্তব্য করে আসামিপক্ষের আইনজীবী মামুনুর রশিদ বলেছেন, তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
হত্যা মামলার ১১ আসামির মধ্যে আবদুল হাই ইসলাম ওরফে কচি বাদে অন্য সবাই বিস্ফোরক মামলারও আসামি ছিলেন। তাদের সবাই বেকসুর খালাস পেয়েছেন বলে এনামুল হক জানান।
একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক মানিক ছিলেন দৈনিক সংবাদ ও বিবিসির প্রতিনিধি। এক সময় খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতির দায়িত্বও তিনি পালন করেন। ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি খুলনা প্রেসক্লাবের কাছে ছোট মির্জাপুরের রাস্তায় বোমা হামলায় নিহত হন মানিক।
হত্যাকাণ্ডের দুদিন পর খুলনা সদর থানার এসআই রণজিৎ কুমার দাস হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। এর ছয় মাসের মাথায় ২০০৪ সালের ১০ জুন দশ জনকে আসামি করে হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে পুলিশ অধিকতর তদন্ত করে। ২০০৭ সালের ২ ডিসেম্বর সম্পূরক অভিযোগপত্রে আসামির তালিকায় আরও একজনের নাম যোগ হয়।
অন্যদিকে ২০০৭ সালের ১৯ মার্চ দশ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক আইনের মামলায় অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা।
শুনানি চলার মধ্যেই মামলা দুটি খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে গত এপ্রিলে খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হয়।
৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে আদালত রায়ের দিন ঠিক করে দেয়।
আইনজীবী এনামুল জানান, বিস্ফোরক মামলার অভিযোগপত্রে ১৯ জনকে সাক্ষী করা হলেও তাদের মধ্যে ১৩ জন আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দেন।
“বিস্ফোরক আইনের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বিচারক আসামিদের খালাসের রায় দেন।”
আর হত্যা মামলায় ৬১ জনকে সাক্ষী করা হলেও তাদের মধ্যে ৪৯ জন সাক্ষ্য দেন বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী।