প্রতিবেদক : বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা নিজেদের ‘জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সক্ষম’ করে গড়ে তুলবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার ঢাকা সেনানিবাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যবৃন্দ তাদের দক্ষতা, দেশপ্রেম, নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির জন্য আরও অনেক সাফল্য বয়ে আনবে।
“আমি আশা করি, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আপনারা নিজেদের গড়ে তুলবেন এবং জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণে সর্বতভাবে সক্ষম হবেন।”
প্রধানমন্ত্রী বিমান বাহিনীর সদস্যদের ‘দক্ষ ও আদর্শ’ বিমানসেনা হিসেবে গড়ে ওঠার তাগিদ দেন এবং জনগণের ‘কষ্টার্জিত অর্থের’ বিনিময়ে সংগ্রহ করা যুদ্ধ উপকরণের ‘কার্যকর ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণে’ আরও বেশি যত্নবান হতে নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, “শুধু দেশে নয়, বিদেশের মাটিতেও আপনারা যত্নবান থাকবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।”
শেখ হাসিনা বলেন, বিমানবাহিনীর সদস্যরা ইতোমধ্যে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে দেশের জন্য ‘গৌরব ও সন্মান’ বয়ে এনেছেন।
এ বাহিনীর আধুনিকায়নে সরকারের নেওয়া উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আধুনিকায়নের মাধ্যমে বিমান বাহিনী দেশ ও জাতির উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আরও সক্রিয় অবদান রাখতে সক্ষম হবে।”
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ঘাঁটিতে পৌছানোর পর বিমান বাহিনীর প্যারেড পরিদর্শন করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু ঘাঁটিকে তিনি ন্যাশনাল স্টান্ডার্ড প্রদান করেন।
এই ঘাঁটির ‘গৌরবময়’ অতীতের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “বিমানঘাঁটি বঙ্গবন্ধু একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এই ঘাঁটিটি মিত্র বাহিনীর বিমান পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।”
স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতার নির্দেশে এই ঘাঁটির পুনর্গঠন ও উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও তিনি মনে করিয়ে দেন।
২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল এই ঘাঁটির নাম রাখা হয় বঙ্গবন্ধু ঘাঁটি। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সর্ববৃহৎ যুদ্ধবিমান ঘাঁটি।
শেখ হাসিনা বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে, আকাশ প্রতিরক্ষা এবং শত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধে এই ঘাঁটির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিমানবাহিনীর এই ঘাঁটিটি ঢাকা তথা বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষার মূল ঘাঁটি হিসেবে আজ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।”
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিচালনায় এই ঘাঁটি প্রত্যক্ষ সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে এবং জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় অসামরিক প্রসাশনকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় এই ঘাঁটির ‘পারদর্শিতা’ প্রশংসিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আকাশযুদ্ধে সুসজ্জিত বঙ্গবন্ধু ঘাঁটি বাংলাদেশের আকাশসীমাকে শত্রুমুক্ত ও নিরাপদ রাখতে সম্পূর্ণভাবে সক্ষম বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।”
শেখ হাসিনা এ সময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ এবং তাতে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অংশগ্রহণের কথা স্মরণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে সীমিত যুদ্ধাস্ত্র নিয়েও পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে আকাশযুদ্ধে অংশ নেওয়ার ‘গৌরবের’ কথা তিনি অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এই সাহসিকতার কথা বাঙালির ইতিহাসে চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
“একটি স্বাধীন জাতির আকাশসীমাকে নিরাপদ ও শত্রুমুক্ত রাখাই সেদেশের বিমানবাহিনীর মূল দ্বায়িত্ব। বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান ও সামরিক কৌশলগত দিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিধি ও সম্ভাবনার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল একটি আধুনিক, পেশাদার ও শক্তিশালী বিমানবাহিনী গঠন করা।… বঙ্গবন্ধুর সময় থেকেই এই বাহিনীর আধুনিকায়ন শুরু হয়।”
আর বর্তমান সরকারও ফোর্সেস গোল ২০৩০ এর আলোকে বিমানবাহিনীকে একটি আধুনিক ও প্রতিরোধক ক্ষমতাসম্পন্ন বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় তুলে ধরেন।