1. sardardhaka@yahoo.com : adminmoha : Sardar Dhaka
  2. nafij.moon@gmail.com : Nafij Moon : Nafij Moon
  3. rafiqul@mohajog.com : Rafiqul Islam : Rafiqul Islam
  4. sardar@mohajog.com : Shahjahan Sardar : Shahjahan Sardar
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫০ পূর্বাহ্ন

ইদ্রিস রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড

মহাযুগ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬
  • ২৬১ বার

প্রতিবেদক : একাত্তরে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে রাজাকার বাহিনীর সদস্য মৌলভী ইদ্রিস আলী সরদারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। সোমবার বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে এই রায় ঘোষণা করে। তবে মৌলভী ইদ্রিস আলী সরদার বর্তমানে পলাতক রয়েছে।

রায়ে বলা হয়, প্রসিকিউশনের আনা চার অভিযোগের সবগুলোই প্রমাণিত হয়েছে। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা গুলি করে আসামি ইদ্রিস আলী সরদারের সাজা কার্যকর করতে হবে।

চার অভিযোগের মধ্যে প্রথম অভিযোগে ২০০ জনকে হত্যা এবং দ্বিতীয় অভিযোগে বহু মানুষকে হত্যা, নারীদের নির্যাতনের ঘটনায় ইদ্রিস আলীর সর্বোচ্চ সাজার রায় এসেছে।

আর তৃতীয় অভিযোগে চারজনকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যার ঘটনায় তার আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং চতুর্থ অভিযোগে হিন্দুদের দেশত্যাগে বাধ্য করার ঘটনায় সাত বছরের কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে আদালত।

আসামি ইদ্রিসকে গ্রেপ্তার করে সাজা কার্যকর করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে। এ বিষয়ে প্রয়োজনে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নিতে বলা হয়েছে।

এ মামলায় অভিযুক্ত অপর আসামি মাওলানা সোলায়মান মোল্যা ওরফে সোলায়মান মৌলভী গত ২৫ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ কারণে তার নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

মামলার অভিযোগপত্র্রে বলা হয়, দুই আসামি একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ইদ্রিস তখন ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের স্থানীয় নেতা। আর সোলায়মান প্রথমে মুসলিম লীগ ও পরে জামিয়াতুল উলামায় ই-ইসলামীর নেতা ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তারা যে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়ে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন, তা উঠে এসেছে এ মামলার বিচারে।

আসামির সর্বোচ্চ সাজার রায় আসায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। অন্যদিকে ইদ্রিসের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম বলেছেন, তার মক্কেল আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আত্মসমর্পণ করলে আপিলে খালাস পাবেন বলেই তার বিশ্বাস।

নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের মামলায় রায়ের এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা যায়। তবে পলাতক ইদ্রিসকে সে সুযোগ নিতে হলে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত রায় আসা ২৭টি মামলার ৪৬ আসামির মধ্যে মোট ২৮ যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ সাজার আদেশ হল।

শরিয়তপুরের পালং থানার কাশাভোগ বাজার ও মধ্যপাড়া গ্রামে  গণহত্যা, হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।

শরিয়তপুরের পালং থানার আঙ্গারি বাজার, মালোপাড়া ও রুদ্রকর গ্রামে  চিংড়া গ্রাম এবং গণহত্যা, হত্যা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং হাওলাদার জুট মিলের অস্থায়ী আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যার দায়ে রায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।

মাদারীপুরে আওয়ামী লীগ নেতা শীলেন্দ্র কৃষ্ণ পালের বাড়িতে হামলা, চার পাহারাদারকে নির্যাতনের পর হত্যা, বাড়িতে ভাঙচুরের দায়ে সর্বসম্মত রায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

মাদারীপুরের বিভিন্ন স্থানে পরিকল্পিত দমন-পীড়ন, হত্যা, ধর্ষণ চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে হিন্দুদের দেশত্যাগে বাধ্য করার দায়ে সর্বসম্মত রায়ে ৭ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

এক আসামির মৃত্যু হওয়ায় এবং অন্যজন পলাতক থাকায় আসামিদের অনুপস্থিতিতেই সোমবার এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।

বেলা ১১টার দিকে তিন বিচারক আসন গ্রহণের পর ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক সংক্ষিপ্ত প্রারম্ভিক বক্তব্য দেন।

পরে বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ৪৮৬ পৃষ্ঠার রায়ের সার সংক্ষেপ পড়া শুরু করেন। অপর বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীও এজলাসে উপস্থিত ছিলেন। সবশেষে বিচারপতি আনোয়ারুল হক সাজা ঘোষণা করেন।

ইদ্রিস আলী সরদার

শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতলিয়া ইউনিয়নের পালং থানার পশ্চিম কাশাভোগ গ্রামের ইদ্রিস আলী সরদার স্থানীয় রুদ্রকর নিনমনি হাই স্কুল থেকে ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাস করেন। ওই স্কুলে পড়ার সময়ই তিনি জামায়াতে ইসলামীর তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সঙ্গে যুক্ত হন।

প্রসিকিউশনের তদন্ত সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ইদ্রিস ছাত্র সংঘের স্থানীয় নেতায় পরিণত হন। ছাত্রসংঘের অন্য অনেক নেতাকর্মীর মত তিনিও পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগিতায় গড়ে তোলা রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন এবং যুদ্ধাপরাধে অংশ নেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তিনি জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা।

সোলায়মান মোল্যা

শরীয়ূতপুর পালং থানার কাশিপুর গ্রামের সোলায়মান মোল্যার জন্ম ১৯৩১ সালে। ১৯৬৩ সালে তিনি দাওরা পাস করে মুসলিম লীগে (ফজলুল কাদের) এ যোগ দেন। পরে তাকে পালং থানা মুসলিম লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকও করা হয়।

অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭০ এর নির্বাচনে জামিয়াতুল উলামায় ই-ইসলামীতে যোগ দিয়ে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন সোলায়মান।

মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি নিজের এলাকায় শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠনে নেতৃত্ব দেন এবং পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেন বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে।

মামলা বৃত্তান্ত

শরীয়তপুর সদর উপজেলার স্বর্ণঘোষ গ্রামের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ তালুকদার ২০১০ সালের ১১ মে ইদ্রিস আলী ও সোলায়মান মোল্যাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের আদালতে মামলা করেন। ওই মামলা পরে পাঠানো হয় ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

তদন্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল অনুসন্ধান শেষে ইদ্রিস ও সোলায়মানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। গতবছর ২২ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নিয়ে অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন রাখে।

যুদ্ধাপরাধের চার ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে চলতি বছর ২ মে ইদ্রিস ও সোলায়মানের বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল।

এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে মোট ১৩ জনের সাক্ষ্য শোনে আদালত। আসামিপক্ষে কোনো সাফাই সাক্ষী ছিলেন না।

প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে আদালত গত ২ নভেম্বর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখে।

এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুমের সঙ্গে ঋষিকেশ সাহা ও রেজিয়া সুলতানা চমন শুনানিতে অংশ নেন। তারা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আরজি জানান।

অন্যদিকে পলাতক ইদ্রিসের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসাবে শুনানি করেন গাজী এমএইচ তামিম।

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023 Mohajog