প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে ‘জাতীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ-২০১৬’ এর উদ্বোধীন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “অনেক কষ্ট করেই কিন্তু আজকে আমরা এ জায়গায় এসেছি। কাজেই এখানে সবাই একটু সাশ্রয়ী হবে সেটাই আমি আপনারদেরকে আহ্বান জানাব।”
দৈনন্দিন কাজে নানাভাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানির অপচয় হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা কিন্তু অনেকভাবে বিদ্যুতের অপব্যবহার করি। কাজেই এই ক্ষেত্রে আমি চাই-অভিভাবক, শিক্ষক থেকে শুরু করে সকলের; যেমন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববদ্যালয় বা অফিস আদালত, সর্বক্ষেত্রেই আপনারা যদি একটু সাশ্রয়ী মনোভাব নেন, সবাই যেন একটু বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হন।
“কারণ উৎপাদনে যথেষ্ট খরচ হয়। বিদ্যুতের অপব্যবহার যেন না হয়। প্রত্যেকের মাঝে এই মানসিকতা থাকতে হবে যে, বিদ্যুতটা আমারই সম্পদ, আমি এটাকে রক্ষা করি বা সাশ্রয় করি। কাজেই সেই সাশ্রয় করার জন্য আমি সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।”
এসময় প্রধানমন্ত্রী ঘর থেকে বের হওয়ার সময় নিজেই লাইট বন্ধ করেন জানিয়ে বলেন, “নিজের কাজ নিজে করতে লজ্জার কিছু নেই।”
জাতীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ জনগণকে এসবের অপচয় রোধসহ সাশ্রয়ী ব্যবহারে উৎসাহিত করবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
গত আট বছরে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন প্রায় তিনগুণ বেড়ে প্রায় নয় হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। এসময়ে প্রায় ৮০টি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হওয়ায় উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট।
২০০৮ সালে বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ৪৭ শতাংশ, যা গত আট বছরে এক কোটি ১৪ লাখ নতুন সংযোগের মাধ্যমে ৭৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু বিদ্যুতের ব্যবহার ঘণ্টায় ২২০ কিলোওয়াট থেকে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ঘণ্টায় ৪০৭ কিলোওয়াট হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিতরণে সিস্টেম লস ১৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ থেকে ১০ দশমিক ৯৬ শতাংশে নেমে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ উৎপাদনে বহুমুখী জ্বালানির ব্যবহারে সরকারে পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি জানান, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বর্তমানে নয় হাজার ৮৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আটটি কয়লাভিত্তিক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এছাড়াও রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ চলছে; যেখান থেকে ২০২৪ সাল নাগাদ উৎপাদন শুরুর আশা করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা গ্যাসের উৎপাদন বাড়ার কথাও উল্লেখ করে বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত নতুন তিনটি গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। গ্যাসের গড় উৎপাদন দৈনিক এক হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে বেড়ে বর্তমানে দৈনিক দুই হাজার ৭৪০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে।
এছাড়া এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনসহ নানাভাবে গ্যাস আমদানির পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সংকট মেটাতে প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
২০২১ সালের মধ্যে সবার কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কথা পুর্নব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নেপালের জ্বালানি মন্ত্রী জনার্দন শর্মা।