প্রতিবেদক : নতুন নির্বাচন কমিশন কীভাবে গঠন করা হবে, তা নিয়ে আলোচনার জন্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এর সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির প্রতিনিধিদল । রোববার বিকাল ৪টা ৩৭ মিনেটে বঙ্গভবনের দরবার হলে হওয়া এই বৈঠকে বিএনপির ১১ সদস্যের নেতৃত্ব দেন বিএনপি চেয়াপারসন খালেদা জিয়া।
বর্তমানে সংসদের বাইরে থাকা এ দলটির সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়েই ইসি গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির এবারের সংলাপ শুরু হল।
বিএনপির প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
খালেদার গাড়ি বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে বঙ্গভবনে পৌঁছালে বঙ্গভবনের অতিরিক্ত সচিব ওয়াহিদুল ইসলাম খান তাকে স্বাগত জানান। সাতটি গাড়িতে করে বিএনপির প্রতিনিধি দলের ১১ সদস্য তার আগেই বঙ্গভবনে প্রবেশ করে।
সংলাপ শুরুর আগে বঙ্গভবনের দরবার হলে এসেই রাষ্ট্রপতি হামিদ বিএনপি নেত্রী খালেদার কুশল জানতে চান। উত্তরে খালেদা জিয়া বলেন, তিনি ‘মোটামুটি’ আছেন।
রাষ্ট্রপতি হামিদ এ সময় তার স্পিকার থাকার দিনগুলোর কথা স্মরণ করে সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা খালেদাকে বলেন, “আগে সংসদে থাকতে তো দেখা হত। এখন তো আমি দূরে থাকি।”
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থাহীন বিএনপি সব রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য ইসি গঠন করতে রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে।
খালেদা জিয়া গত নভেম্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন ইসি ও সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে তার দলের ১৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন, যা সংলাপেও তোলা্ হবে বলে মির্জা ফখরুল ইতোমধ্যে জানিয়েছেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা পর নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সন্ধ্যায় সংবাদ ব্রিফিং করবেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরা হবে।
এর আগে বিকাল ৩টায় গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে রওনা হন খালেদা। বিএনপির দলীয় পতাকা লাগানো ওই গাড়িতে খালেদার সঙ্গে ছিলেন তার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। তবে বঙ্গভবনে পৌঁছানোর পর দরবার হলে থাকার সুযোগ হয়নি তার।
এই বৈঠকের জন্য বঙ্গভবনে বিএনপির পাঠানো প্রতিনিধিদলের তালিকায় তরিকুল ইসলাম ও মির্জা আব্বাসের নামও ছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তরিকুল এবং সিঙ্গাপুরে থাকায় মির্জা আব্বাস সংলাপে উপস্থিত থাকতে পারেননি।
২০১২ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই ‘সার্চ কমিটির’ মাধ্যমে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে এ কমিশনের মেয়াদ শেষে নতুন যে ইসি দায়িত্ব নেবে, তার অধীনেই ২০১৯ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।
এবারও যে রাষ্ট্রপতি ‘সার্চ কমিটি’ করে নতুন কমিশন নিয়োগ দেবেন, সে বিষয়টি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আগেই জানিয়েছিলেন। এরপর চলতি মাসের শুরুতে বঙ্গভবনের কর্মকর্তারা সংলাপের প্রস্তুতি শুরু করেন এবং ১২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন চূড়ান্ত সূচি সাংবাদিকদের জানান।
সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে রাষ্ট্রপতি বসবেন মঙ্গলবার বিকাল ৩টায়। পরদিন বিকাল ৩টায় লিবারেল ডেমোক্রেটি পার্টি (এলডিপি) ও সাড়ে ৪টায় কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ এবং বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় সরকারের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে বসার কথা রয়েছে রাষ্ট্রপতির।
প্রথম পাঁচটি দলের পর চলতি সপ্তাহে আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে আলোচনায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ দিয়ে চিঠি পাঠানো হবে বলে বঙ্গভবনের একজন জানিয়েছেন।