প্রতিবেদক : রাষ্ট্রের কোনো অঙ্গ বিভাগ বা সংস্থার সমালোচনা করছেন না জানিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, রাষ্ট্রের প্রতিটি সংস্থা অন্য সংস্থার ওপর আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। শুধু সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলোই নয়, রাষ্ট্রের বিভাগগুলোও এ প্রতিযোগিতার বাইরে নেই। কেবল বিচার বিভাগই এর ব্যতিক্রম।
শনিবার জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন ২০১৬-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সম্মেলন চলছে।
তিনি আরো বলেন, যারা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকে, তাদের মধ্যে এ আধিপত্য বিস্তারের প্রবণতা বেশি মাত্রায় প্রতীয়মান হয়। কিন্তু বিচার বিভাগ কখনো এ প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি এবং করবেও না।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা বরং সব সময় রাষ্ট্রের বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। আর এর জন্য শাসনতন্ত্র আমাদের ওপর যতটুকু দায়িত্ব ও ক্ষমতা অর্পণ করেছে, আমরা শুধু ততটুকুই করব। আমি আশা করব, রাষ্ট্রের অন্যান্য বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান বিচার বিভাগকে সেভাবেই সহযোগিতা করবে।’
তিনি আরও বলেন, আদালত ওয়ারেন্ট ইস্যু করার পর পুলিশ অপরাধীদের গ্রেফতার করলেও সাক্ষী হাজির করতে না পারার কারণে মামলা আটকে থাকে। ফৌজদারি আইনের ১৭১ (২) উপধারায় বলা আছে, সাক্ষী হাজির করা পুলিশের কাজ।
নিম্ন আদালতের বিচারকদেরকে উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি বলেন, সঠিক সময়ে মামলার সাক্ষী হাজির না হলে মামলা রিলিজ করে দিবেন। সংবিধান ৩৫ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচার লাভের অধিকার রয়েছে।
দেশের বিভিন্ন আদালতের বিচারকদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায় যে, সাক্ষী হাজির না করার ফলে ফৌজদারি মামলা অযথা বিলম্ব হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭১(২) ধারা অনুযায়ী সাক্ষী হাজির করার দায়িত্ব পুলিশের। অপরাধীদের গ্রেফতার করার চেয়ে সবচেয়ে কঠিন কাজ সৎ ও দক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রতিবেদন দাখিল করতো, সাক্ষীদের আদালতে উপস্থিত নিশ্চিত করে প্রকৃত অপরাধীর সাজা নিশ্চিত করা। আমাদের দেশে পুলিশ প্রশাসন অপরাধীদের গ্রেফতার করার ব্যাপারে যতটা পারদর্শী, কিন্তু সাক্ষী উপস্থিতির ক্ষেত্রে ততটা পারদর্শী নয়।
সে কারণে মামলার ফলাফল প্রচণ্ডভাবে হতাশাজনক হয়। এক্ষেত্রে আমি বিচারকদেরকে Criminal Rules and Orders Vol. I- ও-এর Chapter 33 এর Rules 638(2) ও (3) এর নির্দেশনা অনুসরণ করার জন্য বলবো। তারা Kamar Ali v. Abdul Mannaf, 39 DLR (HCD) 319 এবং Ges Md. Taher Uddin v. Abul Kashem & Others, 37 DLR (HCD) 107 মামলায় উল্লেখিত নীতিমালা অনুসরণ তথা all process exhaust করে ফৌজদারি কার্যবিধির 265H অনুযায়ী আসামিকে খালাস দিতে পারেন। সব প্রসেস জারি করার পরও সাক্ষী হাজির না হলে ম্যাজিস্ট্রেটরা ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪৯ ধারায় মামলার কার্যক্রম বন্ধ করতে পারেন। মনে রাখতে হবে এই পুরাতন মামলা আমাদের জন্য যেমন বিড়ম্বনার তেমনি বিচার প্রার্থীর কাছেও এগুলো বোঝা।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম।