প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের কোন্দল নিরসনে চট্টগ্রাম নগরীর জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বসেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রোববার সকালে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় ‘প্রাতরাশ বৈঠকে’ আগামী তিন মাসের মধ্যে সব ‘অভ্যন্তরীন কোন্দল’ মিটিয়ে ফেলার কথা বলেছেন তিনি।
পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক ছাত্র সংগঠনের নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন, আর কোনো খারাপ খবরের শিরোনামে ছাত্রলীগকে তিনি দেখতে চান না।
মহিউদ্দিনের বাসার ওই আলোচনার সময় বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিনও ছিলেন। চট্টগ্রামে মহিউদ্দিন ও নাছিরের সমর্থক ছাত্রলীগের কোন্দল প্রায়ই সংবাদের শিরোনাম হয়।
বৈঠকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহা. শফিকুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক শামসুল আরেফীন, নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য্য, চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজন উপস্থিত ছিলেন।
তবে মেয়র নাছিরের সমর্থক হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু বৈঠকে ছিলেন না। এমন সময়ে ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বসলেন, যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দরপত্র ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দল চরমে উঠেছে।
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতির দুই মেরুতে থাকা মহিউদ্দিন-নাছিরকে কেন্দ্র করে মহানগর এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগও বিভ্ক্ত। মহিউদ্দিনের বাসায় প্রাতরাশ বৈঠককে ‘রুটিন ওয়ার্ক’ বলেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের, যিনি একসময় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।
নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের আর দুই বছর বাকি। নির্বাচনের জন্য আমরা ‘অল আউট প্রিপারেশনে’ যাচ্ছি। সেজন্য আমি চট্টগ্রাম দিয়ে শুরু করলাম।”
আলোচনার বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে কাদের বলেন, “মহানগর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এসব বিষয়গুলো নিয়ে ঘরোয়া আলোচনা করেছি। এখানে ছাত্রলীগ রিলেটেড কিছু সমস্যা হয়। সমস্যাগুলো যাতে না হয় সেজন্য আলোচনা করেছি। আশা করছি এখানে আমরা এক সাথে কাজ করব এবং একটা টিম ওয়ার্ক গড়ে তুলব।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে টেন্ডার নিয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষের সংঘর্ষে জড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, “ছাত্রলীগকে আর খারাপ খবরের শিরোনামে দেখতে চাই না; নেতৃবৃন্দকে ম্যাসেজ দেওয়া হয়েছে।”
এক প্রশ্নে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দিয়াজ ইফরান চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টিকে ‘কনফিউজিং’ বলেন।
“বিষয়টি পরিষ্কার নয়, ফ্যামিলি বলছে হত্যা করা হয়েছে; পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট বলছে আত্মহত্যা করেছে। সিআইডির পূর্ণ তদন্ত হওয়ার পর বিষয়টি পরিষ্কার হবে।”
আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
“নির্বাচনের আর দুই বছর বাকি। আমরা নিজেদের মধ্যে সমস্যা সমাধান করে ফেলতে চাই।”
আগামী তিন মাসের মধ্যে দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো মেটানোর পাশাপাশি ছয় মাসের মধ্যে সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন করার কথা জানান তিনি।
দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা, অপকর্ম সংশোধন না হলে প্রশাসনিক ও সাংগঠনিকভাবে দমন করা হবে বলে নেতাদের সতর্ক করে দেন ওবায়দুল কাদের।