প্রতিবেদক : শেষ হচ্ছে আরও একটি বছর। এই বছরে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল সরকারি ও ব্যাংকের চাকরিতে। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি খাতের চাকরিতেও চাহিদাও ছিল বেশি।
এই বছরে ঠিক কত লোকের নতুন করে কর্মসংস্থান হয়েছে, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও এই খাত-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি বলছেন এই বছরে প্রত্যাশিত কর্মসংস্থান হয়নি। তবে আসছে নতুন বছরে আরও লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে এ বছরে সরকারি ছয়টি ব্যাংকে ২৫টি পদে প্রায় আট হাজার লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। সামনের বছর এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর্মসংস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ বলেন, এ বছর সরকারের আইসিটি ডিভিশনে ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তিতে বেসরকারি খাতে লক্ষাধিক লোকের চাকরি হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণের ফলে কয়েক হাজার লোকের চাকরি হয়েছে। কল সেন্টারে এখন ৩০ হাজার মানুষ চাকরি করছেন। আগামী বছর এই খাতে আরও ২০ হাজার তরুণ-তরুণী যুক্ত হবেন। কয়েক বছরের মধ্যে এই খাত থেকে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। সামনের বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অন্তত এক থেকে দেড় লাখ তরুণের চাকরি হবে বলে মনে করেন তিনি। এ ছাড়া এই খাতে বাংলাদেশ রোল মডেল হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মানবসম্পদ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্রো এন এক্সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুখ্য পরামর্শক এম জুলফিকার হোসেন বলেন, এ বছর কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী খাত ছিল পোশাকশিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি খাত, বিভিন্ন পণ্য প্রস্তুতকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। এই চারটি খাত থেকে ৫০ শতাংশ কর্মসংস্থান হয়েছে। এ ছাড়া ওষুধশিল্প খাত, হাসপাতাল ও ব্যাংক খাতেও অনেক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। আগামী বছরেও এসব খাতে কর্মসংস্থান বেশি হবে বলে মনে করেন তিনি।
চাকরির ওয়েব পোর্টাল ডটকমের হেড অব বিজনেস রিদওয়ান-উল হক বলেন, তাঁরা চাকরির বাজার নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, সবচেয়ে বেশি চাকরির আবেদন জমা পড়েছে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে, সেটা বড় বা ছোট যেকোনো পদে। এর পরপর সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংকে তরুণদের আগ্রহ ছিল বেশি। এসব চাকরির সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা ও নিরাপত্তা ভালো বলেই তরুণেরা এই চাকরি খোঁজেন। সামনের বছরেও এসব ক্ষেত্রে আগ্রহ অব্যাহত থাকবে বলে মনে করেন তিনি। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন চাকরি, ই-কমার্স, কল সেন্টার, গার্মেন্টস সেক্টর, পণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান, গাড়ি, সাইকেল, মোটরসাইকেল তৈরির কারখানায় কাজের সুযোগ তৈরি হবে।
চাকরির অনলাইন পোর্টাল বিডি জবসের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার প্রকাশ রায় চৌধুরী বলেন, ২০১৬ সালে অর্থনৈতিক অগ্রগতি যেমন বেড়েছে, সে অনুপাতে চাকরির ক্ষেত্র তৈরি হয়নি। টেলিকম বা বেসরকারি ব্যাংকে সেভাবে জনবল নিয়োগ করা হয়নি। বড় বড় প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ হয়েছে কম। তবে সবচেয়ে বেশি লোকের নিয়োগ হয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের (এসএমই) প্রতিষ্ঠানে বলে মনে করেন তিনি। যেহেতু এই বছর বিভিন্ন প্রত্যাশিত খাতে নিয়োগ হয়েছে কম, সেই ধারণা থেকে বলা যায়, সামনের বছর লোক নিয়োগের পরিমাণ বাড়বে।
খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কর্মসংস্থানের একটা বড় অংশের চাকরি হয়েছে কারিগরি ও গার্মেন্টস সেক্টরে। এখানে স্বল্প শিক্ষিত মানুষের চাকরি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তবে কত জন নিয়োগ হয়েছে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা পাওয়া যায় না বলে এই খাত সম্পর্কে কোনো ধারণাও পাওয়া যায় না। ফলে এই খাতটির তথ্য অপ্রকাশিত থেকে যায়।
মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ ও করপোরেট কোচের মুখ্য পরামর্শক যিশু তরফদার বলেন, এই বছরে সবচেয়ে বেশি লোকের নিয়োগ হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে। সামনের বছরেও এই খাতে লোক নিয়োগ হবে বেশি। তিনি আরও বলেন, যেসব তরুণ সফটওয়্যার ও প্রোগ্রামিংয়ে দক্ষ, তাঁদের বসে থাকতে হচ্ছে না।
তবে এ বছর মানবসম্পদ বিষয়ে আগ্রহ বাড়ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ সোসাইটি ফর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের সভাপতি ও আইসিডিডিআরবির প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা মো. মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবসম্পদ বিষয়ে পড়াচ্ছি। সেখানে দেখা যাচ্ছে, এই বিষয়ে আগ্রহ বাড়ছে। এ ছাড়া এ-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণেও মানুষের উপস্থিতি বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। এখন বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগকে আরও সুসংগঠিত করছে বলে সেখানে দক্ষ জনবলের প্রয়োজন হচ্ছে। তাই বলা যাচ্ছে, এই বিষয়ে যথেষ্ট কাজের ক্ষেত্র আছে এবং তা দিন দিন বাড়ছে।