আজ ২০১৭ সালের প্রথম দিন। অসীমের পানে মহাকালের যে যাত্রা, সেখানে সূচিত হল আরেকটি মাইলফলক। এই যে মহাকালের যাত্রা, সেখানে একেকটি বছর আসে নতুন উদ্দীপনা, নতুন প্রেরণা নিয়ে। আমরা মুছে ফেলি গত হয়ে যাওয়া বছরের গ্লানি, উৎসাহ খুঁজে পাই সুখকর ঘটনাগুলো থেকে, তারপর এগিয়ে যাই অগ্রগতির দিকে।
কেমন কেটেছে আমাদের বিদায়ী বছরটি? প্রতি বছরের মতো গত বছরেও আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ, আশা-নিরাশার দোলায় দুলেছি আমরা। তবে সুখকর ঘটনায় হৃদয় পুলকিত হওয়ার চেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় হৃদয় ভারাক্রান্তই হয়েছে বেশি। বিদায়ী বছর দেশে বেশ ক’টি সন্ত্রাসী হামলা ছাড়াও আঘাত এসেছে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর। এসব ঘটনা আতংক জাগিয়ে তুলেছে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর মানুষের মনে।
বিদায়ী বছর অনেক বিশিষ্টজনকে হারিয়েছি আমরা। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, কবি শহীদ কাদরী ও রফিক আজাদ, নারী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ নূরজাহান বেগম, শিক্ষাবিদ মনিরুজ্জামান মিয়া, অর্থনীতিবিদ মাহবুব হোসেন, চিকিৎসক ডা. এমআর খান, রাজনীতিক অজয় রায় ও আসম হান্নান শাহ। তাদের সবার পরিবারের প্রতি রইল আমাদের সমবেদনা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হারিয়েছি কিউবার কিংবদন্তিতুল্য বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রো, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতীয় লে. জেনারেল জ্যাকব, বিশ্ববিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীসহ আরও অনেককে।
বিদায়ী বছরজুড়ে দেশে আলোচনার শীর্ষে ছিল জঙ্গিবাদ। ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এ জঙ্গি হামলার ঘটনায় নিহত হয় ১৭ বিদেশীসহ ২০ জনেরও বেশি ব্যক্তি। এ ঘটনায় দুজন পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। এর পরপর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদ জামাতের অদূরে জঙ্গি হামলার ঘটনায় নিহত হয় আরও কয়েকজন। এ দুই জঙ্গি হামলা দেশে জঙ্গি তৎপরতার ধারণায় নতুন মাত্রা যোগ করে। উদঘাটিত হয় ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার প্রমাণ। এ দুই ঘটনার পর আইনশৃংখলা বাহিনী জোরালো জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু করে এবং এতে বেশ সাফল্যও মেলে। তবে বিদায়ী বছর দেশে জঙ্গিবাদ বিস্তারের যে আলামত রেখে গেছে, তা নতুন বছরের জন্য বিশেষ সতর্কবার্তা বটে।
অর্থনীতি ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের একটি ইতিবাচক ঘটনা হল জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার রেকর্ড ৭.০৫ শতাংশে উন্নীত হওয়া। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার একটি নির্দেশক হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে অর্থনীতি ক্ষেত্রে সবচেয়ে নেতিবাচক ঘটনা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, যা দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। বিনিয়োগে স্থবিরতা বিদায়ী বছরেও অব্যাহত ছিল।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিদায়ী বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জনমত জরিপের বিপরীতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ী হওয়া। তার এ নির্বাচন সেদেশে বসবাসকারী অভিবাসী, মুসলমান ও অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মনে উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর নতুন বছর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় সেদিকে তাকিয়ে থাকবে মানুষ।
২০১৭ সালে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি কেমন হবে, তা এ মুহূর্তে বলা কঠিন। আমরা আশা করব, নতুন বছরটি দেশবাসীর জন্য নিয়ে আসবে স্বস্তিদায়ক খবর। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বই পারেন বড় কোনো সুখবর উপহার দিতে। শুভবুদ্ধি দ্বারা পরিচালিত হয়ে তারা নতুন বছরটিকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলবেন- এটাই প্রত্যাশা। স্বাগত ২০১৭।