ধর্ম ডেস্ক : শেষ বিচারের দিন প্রতিটি মানুষ তার দুনিয়ার কর্মফল অনুযায়ী ন্যায্য প্রতিদান পাবেন। প্রত্যেক মানুষের পার্থিব জীবনের চুলচেরা হিসাব হবে পরকালীন জীবনে। যে দুনিয়ায় সৎকাজ করে ইহকাল ত্যাগ করেছেন, আল্লাহ তার প্রতিফলের নিশ্চয়তা বিধানে চিরস্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং যারা অন্যায়-পাপাচার করে মন্দআমলের সঙ্গে পরলোকগমন করেছেন, তাদের জন্য রয়েছে ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির স্থান জাহান্নাম।
তাই দুনিয়ার বুকে কোনো ধরনের অন্যায়-অপকর্ম করা চলবে না; একমাত্র আল্লাহকে পূর্ণাঙ্গভাবে ভয় করে সতর্কতার সঙ্গে জীবন পরিচালনা করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে সৎকর্ম করে সে নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে এবং কেউ মন্দকর্ম করলে তার প্রতিফল সে-ই ভোগ করবে। তোমার প্রতিপালক তার বান্দাদের প্রতি কোনো প্রকার জুলুম করেন না।’ -সূরা হামিম সিজদা: ৪৬
হাশরের দিন আল্লাহতায়ালা মানুষের পাপ-পুণ্যের ফয়সালা করবেন এবং যার যার দুনিয়ার কর্মফল অনুযায়ী নিখুঁত নিক্তিতে বিচার করবেন। যারা অন্যায়-অপরাধে নিজকে নিয়োজিত রাখবে এবং পাপাচারে লিপ্ত থাকবে, প্রতিফলস্বরূপ তিনি তাদের কঠিনতম শাস্তির ভয়াবহ কষ্টে নিপতিত রাখবেন।
আর যারা সৎকর্মের মধ্যে নিজকে সমর্পণ করবে এবং ইসলামের বিধি-বিধান মোতাবেক ইহকালীন জীবন অতিবাহিত করবে, আল্লাহতায়ালা তাদের সুখ-শান্তিময় বেহেশত প্রদান করবেন। শুধু তাই নয়, সেসব নেকআমলকারীকে সম্মানজনক পুরস্কার প্রদান করবেন।
এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে নিয়ামতে ভরা জান্নাত; সেখানে তারা স্থায়ীভাবে থাকবে। আল্লাহতায়ালার প্রতিশ্রুতি সত্য। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। -সূরা লুকমান: ৮-৯
দুনিয়ায় যত মানুষ এসেছে, আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের পর তাদের একত্র করে আমলনামার লিখিত প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার করবেন। এ সময় মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, হাত-পা কথা বলবে এবং ন্যায়-অন্যায়ের সাক্ষ্য দেবে।
শেষ বিচারের দিন প্রতিটি মানুষ তার দুনিয়ার কর্মফল অনুযায়ী ন্যায্য প্রতিদান পাবেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের প্রতিফল দেওয়া হবে, আজ কারও প্রতি জুলুম করা হবে না। আল্লাহ হিসাব গ্রহণে তৎপর।’ -সূরা আল মুমিন: ১৭
যে সৎকর্ম করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই করে, আর যে অসৎকর্ম করে, তা তার উপরই বর্তাবে, সূরা হা-মীম সেজদা, ৪৬
ইসলামের দৃষ্টিতে ন্যায়বিচারের দাবি হচ্ছে, কর্ম অনুযায়ী প্রতিফল পাওয়া। সৎকর্ম করলে কাজের হার অনুসারে পুরস্কার প্রাপ্তি আর অসৎকর্ম করলে তার পরিমাণ অনুযায়ী শাস্তি।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।’ -সূরা জিলজাল: ৭-৮
রহমতের নবী মানবজাতিকে অপকর্ম প্রতিরোধের শিক্ষা দিয়ে ইরশাদ, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কাউকে অন্যায় কাজ করতে দেখে, তাহলে সে যেন তার শক্তি দ্বারা তা প্রতিহত করে; যদি সে এতে অক্ষম হয়, তবে মুখ দ্বারা নিষেধ করবে; যদি সে এতেও অপারগ হয়, তবে সে অন্তর দ্বারা ঘৃণা পোষণ করবে।’ –সহিহ মুসলিম
মানুষ ভুল করে আল্লাহর দেওয়া বিধান ও সীমা লঙ্ঘন করে ফেলার পর নিজের ভুল বুঝতে পেরে তওবা করলে তিনি ক্ষমা করে দেন। কোরআনে কারিমে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের কর্মের মন্দ ফল তাদের ওপর আপতিত হয়েছে, এদের মধ্যে যারা জুলুম করে, তাদের ওপরও তাদের কর্মের মন্দ ফল আপতিত হবে এবং এরা (আল্লাহর শাস্তিকে) ব্যর্থও করতে পারবে না। …. বলো, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অন্যায়-অবিচার করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না; আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন, তিনিই তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ -সূরা জুমার: ৫১-৫৩
যদি কেউ ভুলবশত ঘোরতর পাপ করার পর অনুতপ্ত হয়ে তওবা-ইস্তেগফার করে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চায়; তাহলে আল্লাহ দয়াপরবশ হয়ে ওইসব লোককে ক্ষমা করে দেন।
তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিৎ, পরকালীন জীবনের ভয়-ভীতির বিষয়টি মাথায় রেখে পার্থিব জীবনে সব ধরনের অন্যায়-অনাচার ও কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে সর্বদা বিরত রেখে পারলৌকিক জীবন সর্বতোভাবে সুখ-শান্তিময় করার চেষ্টা করা।