আন্তর্জাতিক : পুলিশের কেন ভুঁড়ি থাকবে? এই প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টে এক ব্যক্তি জনস্বার্থে মামলা দায়ের করেছেন। তিনি বলছেন, কঠিন শারীরিক পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পাওয়ার পর কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশ কর্মীদের অনেকেরই নানা আকারের ভুঁড়ি হয়ে যায়। ফলে তারা শারীরিকভাবে ফিট থাকেন না। তাই মানসিকভাবেও তারা অসতর্ক হয়ে পড়েন।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ কর্মীদের অনেকেই স্ফীতোদর; অর্থাৎ তাদের ছোট – বড় নানা মাপের ভুঁড়ি রয়েছে। তার মানে অবশ্য এটা নয় যে, তারা কেউই আর দৌড়ঝাঁপ করে চোর ডাকাত ধরতে পারেন না।
কলকাতার রাস্তায় ঘুরলেও এ রকম পেটমোটা পুলিশ চোখে পড়াটা বেশ স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে সেই পুলিশের ভুঁড়ি নিয়ে যে কেউ আদালতে মামলা করে দেবে, এটা বোধহয় কেউই ভাবেননি।
মামলাকারী বলছেন, পুলিশের ভুঁড়ি থাকাটাই অস্বাভাবিক। এতে শারীরিক সক্ষমতা যেমন কমে যায়, তেমনি মানসিকভাবেও সতর্ক থাকতে পারেন না আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার ব্যাপারে।
পুলিশ আইন আর ভুঁড়িওয়ালা পুলিশ কর্মী এবং অফিসারদের ছবিও জমা দিয়েছেন ওই মামলাকারী কমল দে, যিনি বিএসএফের সাবেক জওয়ান।
কমল দে বলছিলেন, পুলিশের ভুঁড়ি নিয়ে কেন মামলা করলেন তিনি। তার ভাষায়, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে শারীরিক সক্ষমতা আবশ্যিক। শারীরিকভাবে ফিট থাকলেই তারা মানসিকভাবেও সতর্ক থাকবেন। সেটা আইনে বলা আছে; বাস্তবেও সেটাই হওয়া উচিত। একদিকে যখন সন্ত্রাসবাদের আশঙ্কা বাড়ছে, আর জনগণের তুলনায় এমনিতেই পুলিশের সংখ্যা কম, সেখানে পুলিশের তো আরও বেশি সতর্ক থাকা উচিত। কিন্তু বাস্তবটা যে অন্য রকম, সেটা আমি নানা ছবিসহ জমা দিয়েছি কোর্টে। যেসব পুলিশকর্মীর ছবি তুলেছি, তারা যদি সতর্ক থাকতেন তাহলে ওইসব ছবি আমি তুলতেই পারতাম না।”
আদালতের কাছে তার আবেদন পুলিশ কর্মীদের শারীরিকভাবে ফিট থাকতে বাধ্য করা।
পুলিশের চাকরি পেতে হলে কঠিন শারীরিক পরীক্ষা দিতে হয়। আর প্রশিক্ষণের সময়েও কঠোর শারীরিক কসরৎ শিখতে হয়। কিন্তু মামলাকারীর অভিযোগ, প্রশিক্ষণ শেষে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই স্বাস্থ্যরক্ষা আর শরীরচর্চার দিকে আর মন দেন না পুলিশ কর্মীরা। তাই অনেকেরই ভুঁড়ি বেড়ে যায়।
চাকরি পাওয়ার পরে পুলিশকর্মীরা কেন নিজেদের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে সচেতন থাকেন না? পশ্চিমবঙ্গের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ মহাপরিচালক নপরাজিত মুখার্জি বলেন, “আদালতে যে মামলাটা হয়েছে, সেটা তো বিচার্য বিষয়, আমার কিছু বলা উচিত না। তবে এটা বলতে পারি যে একটা বয়সের পর পুলিশকর্মীদের মধ্যে নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এমনিতেই পুলিশের চাকরিটা খুব স্ট্রেসের। তার ওপর ফিট না থাকলে কাজে তো ক্ষতি হয়ই। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে লোকবলের এতো অভাব যে, একেকজনের ওপরে কাজের ভীষণ চাপ থাকে। আমি নিজের কার্যকালেও নিয়মিত শরীরচর্চার লিখিত আদেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু কাজের চাপে অনেকেই কঠোর রুটিন অনুযায়ী শরীরচর্চাটা হয়তো করে উঠতে পারেন না।
হাইকোর্ট পুলিশের ভুঁড়ি নিয়ে দায়ের হওয়া মামলাটি গ্রহণ করে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে। এতে জানতে চাওয়া হয়েছে, পুলিশ সদস্যদের শারীরিক সক্ষমতা ও মানসিক সতর্কতা বজায় রাখতে কি কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে? চার সপ্তাহের মধ্যে পুলিশের ভুঁড়ি নিয়ে সেই রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা।