প্রতিবেদক : আখেরি মোনাজাতে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনার মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগতীরে শেষ হল এবারের বিশ্ব ইজতেমায় প্রথম পর্ব। রোববার বেলা ১১টায় আখেরি মোনাজাত শুরু হয়, ৩৫ মিনিটের এ মোনাজাত পরিচালনা করেন তাবলিগ জামাতের মারকাজের শুরা সদস্য মাওলানা মুহাম্মদ সাদ। তিনি আরবি ও উর্দু ভাষায় মোনাজাত করেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গভবনের দরবার হলে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে বসে নিকট আত্মীয়দের নিয়ে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া
মোনাজাতে মুসলিম জাহানের কল্যাণ কামনা করা হয়। মোনাজাত প্রচারের জন্য গণযোগাযোগ অধিদপ্তর ও গাজীপুর জেলা তথ্য অফিস বিশেষ ব্যবস্থা নেয়।
গত শুক্রবার ভোরে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল ৫২তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এই পর্বে অংশ নেন ঢাকাসহ ১৭ জেলার মুসলমানরা।
চার দিন বিরতি দিয়ে ঢাকা ছাড়াও আরও ১৫ জেলার মুসলমানদের অংশগ্রহণে ২০ জানুয়ারি শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যামে শেষ হবে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের এই বার্ষিক সম্মিলন।
এর বাইরে দেশের বাকি ৩২টি জেলার মানুষ আগামী বছর দুই পর্বে ইজতেমায় অংশ নেবেন।
আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে ভোর থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। মোনাজাতে অংশ নিতে ভোর থেকে কুয়াশার মধ্যে তুরাগতীরের পথে পথে শুরু হয় মানুষের ঢল।
মোনাজাতের আগে ইজতেমা ময়দানে চটের সামিয়ানার নিচে বয়ান শোনেন লাখো মানুষ। ময়দান ভরে যাওয়ায় আশেপাশের অলিগলি ও রাস্তায় পাটি, খবরের কাগজ, পলিথিন বিছিয়ে তাতেই অবস্থান নেন অনেকে।
ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে বহু নারীও এসেছিলেন মোনাজাতে অংশ নিতে। ময়দানে ঢোকার অনুমতি না থাকায় তারা আশপাশের বিভন্ন কারখানা ও আবাসিক ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়ে মোনাজাতে হাত তোলেন।
ইজতেমার মাঠে পৌঁছাতে না পেরে হাজার হাজার মানুষকে কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিতে দেখা যায়। অনেকে বিমানবন্দর গোল চত্বর কিংবা উত্তরা থেকেও আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন।
লাখ লাখ মানুষের সঙ্গে ইজতেমা ময়দানের পূর্ব পাশে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে বসে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল।
মাওলানা সাদ মোনাজাতে স্রষ্টার কাছে সবার অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং সব বিপদ-আপদ থেকে রক্ষার জন্য আর্জি জানান।
আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরাসহ আশপাশের এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কারখানা, বিপণিবিতান ও অফিস ছিল বন্ধ। মোনাজাত শেষে ইজতেমাস্থল থেকে বাড়ি ফেরার সুবিধবার জন্য করা হয় বিশেষ পরিবহনের ব্যবস্থা।
তারপরও সবার একসঙ্গে বাড়ি ফেরার তাড়াহুড়ায় টঙ্গীর কামারপাড়া সড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী- কালীগঞ্জ সড়কের আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু ও আশপাশের সড়ক-মহাসড়ক এবং সংযোগ সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় ব্যাপক যানজট।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন আর রশিদ জানান, সবাই বাড়ি ফেরা পর্যন্ত ছয় হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন।