আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গরু যে অক্সিজেন গ্রহণ করে, এতোদিন ধরে তা জেনে আসলেও এবার ভারতের রাজস্থান রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী বাসুদেব দেবনানি এক অনুষ্ঠানে দাবি করেছেন, গরু নাকি এমন এক প্রাণী, যে শ্বাস-প্রশ্বাসে অক্সিজেন গ্রহণ করে আবার অক্সিজেনই ত্যাগ করে! জয়পুরে একটি অনুষ্ঠানে গরুর উপকারিতার ‘বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা’ দিতে গিয়েই গরুকে ‘সুপারপাওয়ার’ বলেও আখ্যা দেন তিনি।
শনিবার জয়পুরের অক্ষয় পাত্র ফাউন্ডেশন আয়োজিত হিঙ্গোনিয়া গো-পুনর্বাসন কেন্দ্রের এক অনুষ্ঠানে বাসুদেব দেবনানি গরু মাহাত্ম্য বোঝাতে গিয়ে বলেন, ‘গরু পরিবেশ থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে ও অক্সিজেনই পরিবেশে ফিরিয়ে দেয়। গরুই পৃথিবীর একমাত্র প্রাণী, যার এই সুপার পাওয়ার রয়েছে। এই বিজ্ঞানসম্মত বিষয়টি সবার বোঝা উচিত।’
রাজস্থানের শিক্ষামন্ত্রী এখানেই থেমে থাকেননি। তিনি আরও বলেন, ‘গরুর কাছে গেলে সর্দি-কাশির মতো রোগ ভালো হয়ে যায়।’ দেবনানির আরেক দাবি, “গরুর গোবরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘বি’ রয়েছে।” তিনি পুরো দেশে গরু সংরক্ষণ ও উন্নয়নে যুবকদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
সম্প্রতি গৃহপালিত এই প্রাণীটিকে নিয়ে অনেকবারই প্রকাশ্যে রাজনীতি হয়েছে। তবে এমন মন্তব্য, তাও একজন মন্ত্রীর কাছ থেকে সম্ভবত এর আগে আসেনি। মন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পর ক্ষোভে ফেটে পড়েছে দেশটির শিক্ষামহল। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর এমন মন্তব্যে ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।
তবে মন্ত্রীর দাবির উল্টো কথা বলছে জাতিসংঘ। আন্তর্জাতিক এই সংগঠনটির খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা (এফএও) ২০০৬ সালের একটি প্রতিবেদনে জানাচ্ছে, সমাজে গরু উপকারী প্রাণী। কিন্তু গরুর পাচনতন্ত্রের মাধ্যমে বাতাসে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে। গরুসহ অন্যান্য গৃহপালিত পশু ১৮ শতাংশ গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, একটি গরু বছরে ৭০ থেকে ১২০ কিলোগ্রাম মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করে। এই মিথেন একটি গ্রিনহাউজ গ্যাস। কার্বন ডাই-অক্সাইডের ২৩ গুণ বেশি ক্ষতিকর এই মিথেন। এর ক্ষতির কার্যকারিতা এক বছরে ২৩০০ কিলোগ্রাম কার্বন ডাই অক্সাইডের সমান। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের দাবি, খোলা বাতাসে ১০০০ লিটার পেট্রল পুড়লে যে দূষণ হয়, একটি গরু বছরে সেই পরিমাণ মিথেন উৎপন্ন করে। জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, একটি গাড়ি এক বছরে বাতাসে যা দূষণ করে, তার থেকে অনেক বেশি ক্ষতিকর গ্রিনহাউজ গ্যাস উৎপন্ন করতে পারে একটি গরু।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্যে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ক্ষমতায় আসার পর অনেক স্থানেই গরু জবাই, গরুর মাংস ক্রয়-বিক্রয় ও খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বীর কাছে গরু পবিত্র প্রাণী বলে পরিচিত হলেও, বর্তমানে এটি ভারতের একটি রাজনৈতিক ইস্যু। আর এই গরুর মাংস খাওয়া ও গরু জবাইয়ের ‘অভিযোগে’ বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও সামনে এসেছে।