আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অক্সফাম গত রোববার ‘অ্যান ইকোনমি ফর দ্য নাইনটি নাইন পারসেন্ট’ বা ‘৯৯ শতাংশের অর্থনীতি’ শিরোনামের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনে ধনী-গরিবের বৈষম্যের নানা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
৩০ ডলার পাব যদি…
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ১০টি করপোরেশন বা বড় প্রতিষ্ঠান ২২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার মুনাফা করেছে। এই বিপুল অর্থ যদি পৃথিবীর সব মানুষকে ভাগ করে দেওয়া হতো, তাহলে প্রত্যেকেই ৩০ ডলার করে পেতেন।
বিশ্বের ১০টি বড় করপোরেশনের বার্ষিক মোট আয় ছোট-বড় ১৮০টি দেশের সরকারি রাজস্ব আয়ের চেয়ে বেশি। এসব করপোরেশনের তালিকায় ওয়ালমার্ট, শেল ও অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে দেশের তালিকায় আছে আয়ারল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, কলম্বিয়া, ইসরায়েল, গ্রিস, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভিয়েতনাম।
ট্রিলিয়নিয়ার আসছে
আগামী ২৫ বছরের মধ্যে ‘ট্রিলিয়নিয়ার’ তৈরি হবে। মানে হলো একজনের সম্পদের পরিমাণ এক লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাত বছরের ব্যবধানে বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ দ্বিগুণ হয়েছে। ২০০৯ সালে মোট ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলারের সম্পদ ছিল ৭৯৩ ধনীর। সেই ধনীদের সম্পদ সাত বছরে বেড়ে মোট ৫ লাখ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৬ সালে মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস যখন প্রতিষ্ঠানটি ছাড়েন, তখন তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৫ হাজার কোটি ডলার। এখন তাঁর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৭ হাজার কোটি ডলার।
প্রবৃদ্ধিই সব নয়
১৯৯৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত জাম্বিয়ায় প্রতিবছর গড়ে ৬ শতাংশের বেশি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু প্রবৃদ্ধির সুফল গেছে ওই দেশের ধনী লোকের কাছে। তাঁরাই সম্পদশালী হয়েছেন। কেননা, এ সময় জাম্বিয়ার দারিদ্র্য হার ৪৩ শতাংশ থেকে ৬৪ শতাংশ বেড়েছে। প্রায় ৪০ লাখ লোক নতুন করে দরিদ্র হয়েছে।
ধনীদের মধ্যে ধনী
২০১৬ সালের ফোর্বস সাময়িকীর হিসাবে, সারা বিশ্বে ১৮১০ জন ধনী আছেন, যাঁদের সম্পদের পরিমাণ কমপক্ষে ১০০ কোটি ডলার। তাঁদের সুপার রিচ হিসেবে বলা হয়। তাঁরা ধনীদের মধ্যে ধনী। এসব সুপার রিচের হাতে বিশ্বের ৭০ শতাংশ মানুষের সম্পদের সমান। এই সম্পদশালীদের ৮৯ শতাংশই পুরুষ। তাঁদের মোট সম্পদের পরিমাণ সাড়ে ছয় ট্রিলিয়ন ডলার।
৯ জনে ১ জন না খেয়ে ঘুমায়
কয়েক দশক ধরেই প্রতিবছর লাখ লাখ লোক দারিদ্র্যকে জয় করেছে। নিজেদের দারিদ্র্য পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়েছে। ১৯৯০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বের ৭০ কোটি লোক দারিদ্র্যসীমা অতিক্রম করেছে। কিন্তু এখনো প্রতি নয়জনে একজন ক্ষুধা পেটে ঘুমাতে যায়। যেন ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়’। বৈষম্য বাড়ছেই। ১৯৮৮ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে বিশ্বের ১০ শতাংশ গরিব মানুষের আয় প্রতিবছর গড়ে ৩ ডলার করে বেড়েছে। অন্যদিকে ওই সময়ে শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর আয় ১৮২ গুণ বেড়েছে। সূত্র: অক্সফাম প্রতিবেদন