প্রতিবেদক : মৃত্যুর পর আপনার রেখে যাওয়া অর্থসম্পদের কী হবে, তার বন্দোবস্ত নিয়ে হয়তো ভেবে রেখেছেন। কিন্তু আপনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ও অনলাইনে রেখে যাওয়া বিপুল তথ্যের কী হবে, তা নিয়ে ভেবেছেন কখনো?
গত দুই দশকে ধীরে ধীরে জীবনযাত্রা এতটাই আধুনিক হয়েছে যে বলতে গেলে আমাদের জীবন অনেকটা অনলাইনভিত্তিক হয়ে গেছে। সেটা অতিবাহিত সময় হোক আর ক্লাউড স্টোরেজে রাখা হাজারো ফাইল হোক। মানুষের মৃত্যু হলেও এগুলো থেকে যাবে। হয়তো অনিরাপদ অবস্থায়। তাই আপনার অবশ্যই ভাবা উচিত, মৃত্যুর পর আপনার বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট এবং সেই সব অ্যাকাউন্টে থেকে যাওয়া তথ্যের কী হবে।
ফেসবুক: ফেসবুকে ‘লেগ্যাসি কন্টাক্টস’ নামের বিশেষ সুবিধা আছে, যার মাধ্যমে আপনি আপনার বিশ্বস্ত কাউকে অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ দিতে পারবেন। তিনি আপনার ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট করতে পারবেন, প্রোফাইলের ছবি পরিবর্তন করতে পারবেন, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করতে পারবেন। তবে আপনার বার্তাগুলো পড়তে পারবেন না। এতে আপনার গোপনীয়তা বজায় থাকবে। বিকল্প হিসেবে আরেকটি কাজ করা যেতে পারে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে পরিচিত কেউ আপনার মৃত্যুর সনদ দেখালে আপনার অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলা হবে।
গুগল: গুগল অ্যাকাউন্টে আপনি ১০ জন এমন ব্যক্তিকে যুক্ত করতে পারবেন, যাঁরা গুগলের ইন-অ্যাকটিভ সুবিধার মাধ্যমে আপনার অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবেন। সুবিধাটি নির্বাচন করার পর কয়েক মাসের জন্য আপনি যদি অ্যাকাউন্টে প্রবেশ না করেন, তবে নির্বাচিত ওই ব্যক্তিদের ই-মেইলে আগে থেকে ঠিক করে দেওয়া বার্তা চলে যাবে। তখন তাঁরা আপনার অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবেন। ইন-অ্যাকটিভ অবস্থায় বা আপনার মৃত্যুর পর তাঁরা আপনার ই-মেইলসহ চ্যাট-হিস্ট্রি দেখতে পারবেন এবং বিভিন্ন তথ্য নামিয়েও নিতে পারবেন। গুগল আপনাকে আপনার অ্যাকাউন্ট সম্পূর্ণ মুছে ফেলার অধিকারও দেয়।
টুইটার: ফেসবুক বা গুগলের মতো টুইটারে এমন সুবিধা নেই। আপনার মৃত্যুর পর আপনার অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলার জন্য অবশ্যই পরিবারের কাউকে টুইটার কর্তৃপক্ষকে মৃত্যুর সনদপত্র বা তার সমমানের নথি দেখাতে হবে। একইভাবে কেউ যদি তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে না পারেন, তাহলেও এমন একজনকে তাঁর স্বত্বাধিকার প্রমাণ করতে হবে।
লিংকড-ইন, স্ন্যাপচ্যাট, টাম্বলার: এই তিনটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মৃত্যুর ‘প্রস্তুতিমূলক’ কোনো সুবিধা দিচ্ছে না। তবে অ্যাকাউন্ট পরিচালনার কিছু সুবিধা আছে, যা সাহায্য করতে পারে। লিংকড-ইনের ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলার জন্য অবশ্যই পরিবারের কাউকে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে। স্ন্যাপচ্যাট বলছে, মৃত ব্যক্তির কোনো এক আত্মীয়কে মৃত্যুর সনদপত্র নিয়ে আবেদন করতে হবে। টাম্বলারেও একই নিয়ম।
অনলাইন ডেটা: অনলাইনে ডেটা সংরক্ষণে নিরাপত্তার বিষয়টি বেশ জটিল। ব্যবহারকারী যদি তাঁর ডেটা এনক্রিপ্ট করেন, তাহলে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান চাইলেও সেই ডেটাগুলো উদ্ধার করতে পারবে না। তাই সবচেয়ে সহজ উপায় হলো বিশ্বস্ত কাউকে অবশ্যই ডেটা সংরক্ষণের তথ্য দিয়ে রাখা।
মারিফুল হাসান, সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস