প্রতিবেদক : চুক্তির প্রায় এক বছর হয়ে গেলেও বাংলাদেশ থেকে এখনো কর্মী নেওয়া শুরু করেনি মালয়েশিয়া। তবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, চাহিদাপত্র চলে এসেছে। যেকোনো সময়ই কর্মী যাওয়া শুরু হবে। আর চলতি বছরেই পাঁচ থেকে সাত লাখ কর্মী যাবে বলে তিনি ধারণা করছেন।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘অভিবাসীদের অগ্রন্থিত গল্প: স্বপ্ন ও বাস্তবতা’ শীর্ষক বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। অভিবাসনবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু) এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এর আগে ২০১৫ সালের জুনে মালয়েশিয়া বলেছিল, বাংলাদেশ থেকে আগামী তিন বছরে তারা ১৫ লাখ কর্মী নেবে। কিন্তু এখনো কর্মী যাওয়াই শুরু হয়নি। গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি জি টু জি প্লাস (সরকারি ও বেসরকারিভাবে) পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকার সমঝোতা স্মারকে সই করে। কিন্তু এর ১২ ঘণ্টার মধ্যেই মালয়েশিয়া জানায়, এই মুহূর্তে তারা আর কোনো কর্মী নেবে না। সাত মাস পর সেপ্টেম্বরে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে সব খাতে কর্মী নেওয়ার ঘোষণা দেয় মালয়েশিয়া। কিন্তু চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কর্মী যাওয়া শুরু হয়নি। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
তবে মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘মালয়েশিয়া সব খাতে কর্মী নেবে। এবার কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া হবে ডিজিটাল। তাদের যত লোক লাগবে, তারা দূতাবাসে চাহিদাপত্র পাঠাবে। প্রত্যেক কর্মীর জন্য আলাদা চুক্তিপত্র হবে। তবে যে যেই কাজে যাবেন, তাঁকে তিন বছর সেই কাজেই থাকতে হবে।’ মালয়েশিয়া নিয়ে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের অভিযোগ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘এমন কিছু হবে না।’
১৫০ জন অভিবাসীর জীবনকাহিনি নিয়ে রামরু থেকে প্রকাশিত বইটির মোড়ক উন্মোচন করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অভিবাসীরা জাতিগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তাঁদের কারণেই আজ রিজার্ভ শক্তিশালী। তবে অভিবাসীদের যেমন সাফল্য আছে, তেমনি দুঃখ আছে। তবে বর্তমান সরকার অভিবাসী ও তাঁদের পরিবারের কল্যাণের জন্য কাজ করছে। নতুন নতুন বাজার চালুর চেষ্টা চলছে।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে পাঁচ থেকে আট লাখ টাকা খরচ করে অনেকে বিদেশে যান। কিন্তু বেতন মাত্র ১২ হাজার টাকা। যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁদের হিসাব করা উচিত, এই টাকা তিন বছরে উঠবে কি না। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগী বা দালালদের কথায় অনেকে প্রতারিত হন। দুই দেশেই এই দালালেরা আছে। আমরা এগুলো বন্ধ করতে চাই। যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁরা কত দিনের জন্য যাচ্ছেন, কী করবেন—এসব ব্যাপারে চুক্তি থাকতে হবে।’
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রিফাত আহমেদ বলেন, ‘অভিবাসীদের সফলতা-ব্যর্থতা বুঝতে এই বইটি একটি দলিল হয়ে থাকবে। এটা একটা আইনি দলিলও।’
বইয়ের সম্পাদক রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘দুই দশক ধরে আমরা অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করছি। নানা গবেষণায় তাঁদের বিষয়গুলো পরিসংখ্যানে পরিণত হয়েছে। আমরা চেয়েছি, তাঁদের কথাগুলো তাঁদের কণ্ঠে আসুক। সে কারণেই এই বই। এতে তাঁদের আত্মবিশ্বাসের কথা যেমন আছে, তেমনি আছে হতাশার কথাও।’
অনুষ্ঠানে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সেলিম রেজা, ডিএফআইডির কর্মকর্তা জোয়েল হারডিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফখরুল আলম, সুমাইয়া খায়ের, সেন্ট্রাল উইমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পারভীন হাসান প্রমুখ বক্তব্য দেন।