প্রতিবেদক : পাঠ্যবইয়ে ভুলের জন্য দায়ীদের শুধু দপ্তর বদল বা বদলি নয়, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত বইয়ে কীভাবে এসব ভুল হল তাও খতিয়ে দেখবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটি বৈঠকে এ বিষয়ে একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির সদস্য সামশুল হক চৌধুরীকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে । তার সঙ্গে সদস্য হিসেবে আছেন আলী আজম ও মোহাম্মদ ইলিয়াছ।
বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, “পাঠ্যপুস্তকে যেসব ভুল বা অসঙ্গতি রয়েছে তা গণমাধ্যমে বিচ্ছিন্নভাবে উঠে এসেছে। তাই মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে মাঠ পর্যায় থেকে এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য বলা হয়েছে। দেশের সব জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দিতে বলা হয়েছে। তারা পাঠ্যপুস্তকের ভুল ও অসঙ্গতিগুলো সমন্বিত আকারে কেন্দ্রে পাঠাবেন।”
তিনি আরও বলেন, “কমিটি মনে করে এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। বদলি করে বা দপ্তর পরিবর্তন করে লোক দেখানো শাস্তি দিয়ে এক্ষেত্রে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।”
বৈঠকে প্রাথমিকের জন্য পৃথক শিক্ষা বোর্ড গঠনের পাশাপাশি এনসিটিবির আদলে প্রাথমিকের জন্য পৃথক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান জাহাঙ্গীর হোসাইন।
বছরের প্রথম দিন চার কোটি ৩৩ লাখ ৫৩ হাজার ২০১ জন শিক্ষার্থীর হাতে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার বই ও শিক্ষা উপকরণ তুলে দেয় সরকার।
শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই যাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ভুল-ত্রুটি ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
একটি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে একটি ইংরেজি শব্দের বানানে ভুল। একটি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে একটি ইংরেজি শব্দের বানানে ভুল। এর জের ধরে ৬ জানুয়ারি নতুন শিক্ষাবর্ষের সব বই পরিমার্জনে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন করে এনসিটিবি।
এরপর ১০ জানুয়ারি এনসিটিবির ডিজাইনার সুজাউল আবেদিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দাবি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এনসিটিবির প্রাথমিক উইংয়ের ২৪টি পদের ২০টিতেই নিজেদের ‘অযোগ্য’ কর্মকর্তাদের বসিয়ে রাখায় প্রাথমিকের বইয়ে ভুল থেকে গেছে।
অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলছেন, গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দেরিতে পাণ্ডুলিপি জমা দেওয়ায় তা যাচাই-বাছাই না করেই ছাপাখানায় পাঠাতে ‘বাধ্য হয়েছেন’ তারা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা এনসিটিবি থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বই ছাপিয়ে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তা বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়।
সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণীতে ২০১৭ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহ সংক্রান্ত ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়, ভারতীয় প্রতিষ্ঠান শীর্ষসাই ছাড়া বাকি ২৯টি প্রতিষ্ঠান শতভাগ বই সরবরাহ করেছে। শীর্ষসাইয়ের ৪৬ ভাগ বই এখনও হাতে পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম বন্দরে এসব বই এসে পৌঁছেছে, দুই-এক দিনের মধ্যে মাঠপর্যায়ে বিতরণের সম্ভাবনা রয়েছে।
বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমিটি বিদ্যালয়ের শুন্য পদগুলোতে দ্রুত নিয়োগ, প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে বিদ্যালয়গুলোতে দুই শিফট চালু এবং বিদ্যালয় পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদারসহ কেন্দ্রীয়ভাবে বিদ্যালয় পরিদর্শনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে।
বৈঠকে জানানো হয় যে, বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তির অর্থ রূপালী বাংকের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে।
শিশুকল্যাণ ট্রাস্টের স্কুলের কর্মকাণ্ড দেখতে কমিটি
১৯৮৯ সালে গঠিত পথকলি ট্রাস্ট এবং পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় পরিচালিত স্কুলগুলোর কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখতে পৃথক একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনকে আহ্বায়ক এবং মো. নজরুল ইসলাম বাবু ও মো. আবুল কালামকে এর সদস্য করা হয়েছে। শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের কার্যক্রম ও সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবে এই কমিটি।
বৈঠকে বলা হয়, এই ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত স্কুলগুলোর জন্য মোটা অংকের অর্থ বরাদ্দ থাকলেও তা যথাযথভাবে ব্যবহার হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া এই ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার পরে দেশে ২৮ হাজার স্কুল খোলা হয়েছে। তাই এই ট্রাস্টের অধীনে আর কোনও স্কুল রাখার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে হয় না। গঠিত সাব-কমিটি এসব বিষয় খতিয়ে দেখবে।
কমিটির সভাপতি মো. মোতাহার হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, সামশুল হক চৌধুরী, মো. নজরুল ইসলাম বাবু, মো. আবুল কালাম, আলী আজম, মোহাম্মদ ইলিয়াছ ও উম্মে রাজিয়া কাজল।