প্রতিবেদক : বর্তমান প্রজন্মকে আদর্শচ্যুত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বুধবার আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নিজের সরকারি বাড়ি গণভবনে ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে গিয়ে এসব কথা বলেন। ছাত্র আন্দোলনে নিজের সম্পৃক্ততার ঘটনাগুলোও তুলে ধরেন তিনি।
নিজের সময়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “৬২ সাল থেকে যখন আজিমপুর স্কুলে পড়তাম, স্কুলের হেডমাস্টার সাহেব খুব কড়া ছিলেন। তাই অনেক সময় দেয়াল টপকে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসতাম মিছিল-মিটিংয়ে যোগ দিতে।”
ওই সময়ের মিছিলের সঙ্গে এখনকার মিছিলের পার্থক্যও বলেন তখনকার ছাত্রলীগের সংগঠক শেখ হাসিনা।
“এখন তো মিছিলের জায়গা খুবই কম। আমরা মিছিল করতাম সেই পুরান ঢাকায়। ঢাকা সেন্ট্রাল জেলের সামনে থেকে আমরা মিছিল নিয়ে যাবই, যাতে যারা কারাগারে আছে, তাদেরকে উৎসাহিত করা যায়। চকবাজার, মৌলভীবাজার, নবাবপুর হয়ে পুরো এলাকা আমরা ঘুরতাম তখন। লম্বা পথ পাড়ি দিতাম মিছিল করতে করতে। সারাদিন আমরা মিছিলে থাকতাম। এভাবেই কিন্তু আমরা সংগ্রাম গড়ে তুলেছি।”
সাড়ে তিন দশকের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর পদে থাকা শেখ হাসিনা ছাত্রলীগে বিভিন্ন পদে ও ছাত্র সংসদের দায়িত্বে থাকার কথাও বলেন।
“আমি ছিলাম ছাত্রলীগের একজন ক্ষুদ্র কর্মী। বদরুন্নেছা কলেজ যেটা; সে সময় ছিল ইডেন ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ, সেই কলেজে আমি নির্বাচিত ভিপি ছিলাম।”
“ছয় দফা দেবার পর যখন আব্বা, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ সবাই কারাগারে বন্দি। ঠিক ওই সময় নির্বাচন করাটা কঠিন ছিল। কিন্তু সেই নির্বাচনে আমরা জয়ী হয়েছিলাম।”
ওই কলেজে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন শেখ হাসিনা। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।
বিভিন্ন পদে ও ছাত্র সংসদের দায়িত্বে থাকলেও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কোনো পদ না পাওয়ার ‘দুঃখের’ কথাও শোনান শেখ হাসিনা।
সেসঙ্গে তিনি বলেন, “সত্য কথা বলতে কি, পদ পেলাম আর না পেলাম, সে চিন্তা করে রাজনীতি করিনি। আমরা রাজনীতি করতাম জনগণের জন্য, দেশের জন্য, ছাত্রদের সমস্যা আমরা তুলে ধরতাম।”
ছাত্রলীগের দীর্ঘ সংগ্রামের ঐতিহ্য তুলে ধরে বর্তমান নেতাদের উজ্জীবিত করেন শেখ হাসিনা।
“আমাদের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা অর্জন; সব কিছুতেই ছাত্রলীগের ছেলে জীবন দিয়েছে। অনেক আত্মত্যাগ করেছে।”
স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্দোলন-সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা।
দেশের মানুষের কল্যাণ ও সেবার করার পরামর্শ দিয়ে ছাত্রনেতাদের তিনি বলেন, “তোমরা যারা রাজনীতি করছো, নেতৃত্ব দিচ্ছ, যে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আছ, সেই সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ যেন ঠিক থাকে।”
বর্তমানের নানা কর্মকাণ্ডের জন্য সমালোচিত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।
“একটা কথা মনে রাখতে হবে, প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে তোমরা পড়াশোনা কর, নিজের জায়গা, আপন জায়গা; প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ যেন ঠিক থাকে তার ব্যবস্থা করবে।”
প্রত্যেককে অন্তত তিনটি করে গাছ লাগানো, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোর খোঁজ নেওয়া, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের জঙ্গি-সন্ত্রাস-মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।
বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধে আগুনে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আশা করি ভবিষ্যতে তারা আর এই পথে পাড়া দেবে না। পাড়া দিলে জনগণই প্রতিরোধ করবে।”
মতবিনিময়ের শুরুতেই ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাদের সঙ্গে পরিচিত হন শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন এবং সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন।