প্রতিবেদক : কিশোর-কিশোরীদের স্বাভাবিক বিকাশে যতটুকু শারীরিক পরিশ্রম প্রয়োজন, এক-তৃতীয়াংশের ক্ষেত্রে তা অনুপস্থিত বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। ‘জার্নাল পাবলিক হেলথ’-এ প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের ৩৪ শতাংশ প্রতিদিন ৬০ মিনিটেরও কম সময় কায়িক শ্রম বা ব্যয়ামের সুযোগ পাচ্ছে।
যার অর্থ বাংলাদেশের প্রধান নগরীর প্রতি তিনজনে একজন কিশোর বা কিশোরী শারীরিকভাবে খুব একটা সক্রিয় নয়।
তুলনামূলকভাবে নিস্ক্রিয়দের মধ্যে কিশোরীর (৪৫ শতাংশ) সংখ্যা কিশোরদের (২৪ শতাংশ) চেয়ে বেশি বলেও অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের ওই তিন গবেষক তুলে এনেছেন।
আটটি বিদ্যালয়ের ৭৯৮ জন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ওই তিন গবেষক ঢাকার কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য নিয়ে এ আশঙ্কার চিত্র পেয়েছেন।
গবেষকদের একজন বাংলাদেশি ড. আসাদুজ্জামান খান কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির স্কুল অব হেলথ অ্যান্ড রিহেবিলিটেশন সায়েন্সেসের সঙ্গে যুক্ত; নিকোলা বার্টন কাজ করছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব হিউম্যান মুভমেন্ট অ্যান্ড নিউট্রিশন সায়েন্সেসে।
তাদের সঙ্গে আছেন কুইন্সল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ইনস্টিটিউশন অব হেলথ অ্যান্ড বায়োমেডিকেল ইনোভেশনের এস জি ট্রস্ট।
স্কুলে যাতায়াত, ক্রিকেট খেলা ও গৃহস্থালি কাজকে ঢাকার কিশোর-কিশোরীদের সবচেয়ে পরিচিত শারিরীক কার্যকলাপ হিসেবে গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর মধ্যে ৪২ শতাংশ কিশোরের দিনের সবচেয়ে বড় পরিশ্রম হয় যাতায়াতে; ৩৩ শতাংশ খেলে ক্রিকেট। অন্যদিকে ঘরের কাজে প্রয়োজনীয় পরিশ্রম হয় ৩০ শতাংশের।
তবে বাংলাদেশি কিশোরী-কিশোরীদের সক্রিয়তা ভারত, শ্রীলঙ্কার চেয়ে বেশি তবে বাংলাদেশি কিশোরী-কিশোরীদের সক্রিয়তা ভারত, শ্রীলঙ্কার চেয়ে বেশি
দেখা গেছে, যেসব কিশোর-কিশোরী হেঁটে স্কুলে যাওয়া-আসা করে এবং যাদের বাড়িতে খেলাধুলার সরঞ্জাম আছে, তারা অন্যদের তুলনায় শারীরিকভাবে বেশি সক্রিয়।
যাদের বিদ্যালয়ে বড় মাঠ আছে এবং যাদের মা চাকরিজীবী, তাদের ছেলেরা বেশি সক্রিয় হয়।
মেয়েদের মধ্যে সক্রিয়রা স্কুলে বিভিন্ন খেলাধুলায় সম্পৃক্ত থাকে; তাদের মায়েরাও অন্যদের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত হন বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
কৈশোরে দৈনন্দিন শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বাড়ানোর ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এই গবেষণায় কিশোরী স্বাস্থ্যের দিকে বেশি মনোযোগ দিতেও সুপারিশ করা হয়েছে।
ঢাকার কিশোর-কিশোরীদের সক্রিয়তার এ হারের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের মিল আছে। সেখানকার এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশটির ৩৭ শতাংশ স্কুলগামী কিশোর-কিশোরী শারীরিকভাবে প্রয়োজনীয় মাত্রায় সক্রিয় নয়।
এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় বাংলাদেশের ৫৯ শতাংশ কিশোর প্রয়োজনের তুলনায় কম সক্রিয় বলে জানানো হয়েছিল।
ওই গবেষণায় ভারতের ৭০ শতাংশ, পাকিস্তানের ৮৪ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ৪৬ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রের ৭৩ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ার ৮১ শতাংশ কিশোরের তুলনায় বাংলাদেশের কিশোরদের শারিরীক সক্রিয়তার হার বেশি বলে দেখানো হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কৈশোরে নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ মুটিয়ে যাওয়া কমানো, পরিপাক ও হৃদযন্ত্রের সক্ষমতা বৃদ্ধি, অস্থিমজ্জার উন্নতি, ভালো মানসিক স্বাস্থ্যর পাশাপাশি পড়ালেখায় ভালো করতেও উৎসাহ যোগায়।