প্রতিবেদক : যৌতুকের জন্য আত্মহত্যার প্ররোচনায় ১৪ বছরের জেল, আর নির্যাতন করে গুরুতর জখম করলে যাবজ্জীবন সাজার বিধান রেখে নতুন আইন করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘যৌতুক নিরোধ আইন- ২০১৭’ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের সামনে এই খসড়ার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে জানান, ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইন পরে তিন দফা সংশোধন করা হয়েছিল। এবার সব মিলিয়ে এই নতুন আইন হচ্ছে, যাতে যৌতুকের সংজ্ঞাও বদলাচ্ছে।
কোনো এক পক্ষের (বর বা কনে) পিতামাতা বা ব্যক্তি অন্য পক্ষের কাছে কোনো কিছু দাবি করলে এতদিন তা যৌতুক হিসেবে গণ্য হত।
সংশোধিত আইনে যৌতুকের সংজ্ঞা বদলে বর বা বরের পিতা-মাতা বা প্রত্যক্ষভাবে বিয়েতে জড়িত বরপক্ষের অন্য কোনো ব্যক্তির কোনো কিছু দাবি করাকে বোঝানো হচ্ছে।
এর ব্যাখ্যায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “বরপক্ষকেই আসামিভুক্ত করা হয়েছে, কারণ বরপক্ষই যৌতুক নেয়। কনেপক্ষ যৌতুক নেয় এমন উদাহরণ নেই।” ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনে যৌতুক দাবি ও লেনদেনের শাস্তি নির্দিষ্ট করা থাকলেও যৌতুক চেয়ে নির্যাতনের শাস্তির বিষয়ে কিছু বলা ছিল না।
যৌতুকের জন্য আত্মহত্যার প্ররোচনা বা অঙ্গহানি করলে প্রস্তাবিত আইনে ‘কঠোর শাস্তির বিধান’ যুক্ত করা হয়েছে বলে জানান সচিব। “আত্মহত্যার প্ররোচণার জন্য ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। জরিমানার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি।
“মারাত্মক জখম করার জন্য যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, সেই সঙ্গে অর্থদণ্ডের বিধান করা হচ্ছে।”
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ আইনের খসড়া করার সময় যৌতুকের জন্য আত্মহত্যার প্ররোচনার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রাখার সুপারিশ করলেও শেষ সময়ে তা কমিয়ে এনে মন্ত্রিসভায় তোলা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, যৌতুকের জন্য সাধারণ জখম করলে এক থেকে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়। ভিকটিমের ক্ষতি বিবেচনায় অর্থদণ্ডসহ আমৃত্যু ভরণপোষণ দেওয়ার রায়ও আদালত দিতে পারবে।
যৌতুকের লেনদেন বা সহযোগিতার জন্য এক থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান থাকছে নতুন আইনে। আগের আইনে এই অপরাধে পাঁচ বছর কারাদাণ্ডের কথা বলা থাকলেও জরিমানার পরিমাণ নির্দিষ্ট করা ছিল না।
যৌতুক নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ বা মামলা করলে তাও নতুন আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এজন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে বলে শফিউল আলম জানান।