প্রতিবেদক : বিজ্ঞান লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার তদন্ত ‘চুড়ান্ত পর্যায়ে’ রয়েছে জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, শিগগিরই আদালতে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে গ্রন্থমেলার নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তদন্ত শেষ পর্যায়ে। আমরা শিগগিরই আদালতে প্রতিবেদন জমা দেব।”
হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে চিহ্নিত ও শনাক্ত করা হয়েছে জানিয়ে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “এ ঘটনায় সন্দেহভাজন আটজনকে গ্রেপ্তার করেছি, মূল আসামি মুকুল রানা খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়ায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। বাকিদেরও খুব শিগগিরই গ্রেপ্তার করা যাবে বলে আশা করছি।”
দুই বছর আগে একুশে বইমেলা চলাকালেই বইমেলা থেকে মাত্র কয়েকশ গজ দূরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির কাছে ফুটপাতে কুপিয়ে হত্যা করা হয় অভিজিৎ রায়কে।
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে স্ত্রী বন্যা আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে মেলা থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরই আক্রান্ত হন অভিজিত; বন্যাও হামলার শিকার হয়ে একটি আঙুল হারান।
অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে মুক্তমনা ব্লগসাইট পরিচালনাকারী অভিজিৎ থাকতেন যুক্তরাষ্ট্রে। লেখালেখির কারণে জঙ্গিদের হুমকিতে থাকার মধ্যেও গত বছর বইমেলার সময় স্ত্রীকে নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি।
অভিজিতের বাবা ওই ঘটনার পর শাহবাগ থানায় যে মামলা করেছিলেন, গত দুই বছরে তার প্রতিবেদন জমা দিতে ১৫ বার সময় বাড়িয়েছে তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মামলার তদন্তকারী এক কর্মকর্তা বলেন, ঘটনায় সঙ্গে সরসরি যুক্ত কয়েকজনকে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
“আমরা আটজনকে সাসপেক্ট হিসেবে গ্রেপ্তার করেছি। আরও পাঁচ জন মাঠপর্যায়ে এই হত্যায় যুক্ত ছিল, তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
অভিজিৎ হত্যার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক ব্লগার, লেখক, প্রকাশক, হিন্দু পুরোহিত, খ্রিস্টান পাদ্রি, লালনভক্তসহ মুক্তমনা ও অসাম্প্রদায়িক বহু মানুষ হত্যা ও হামলার শিকার হলেও অভিজিৎ হত্যার তদন্ত নিয়ে দীর্ঘদিন তেমন কোনো আশার কথা শোনাতে পারেনি পুলিশ।
গতবছর ১৯ জুন পুলিশের পক্ষ থেকে একটি সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করা হয়, যেখানে অভিজিৎ ও তার স্ত্রী বন্যা আহমেদের অনুসরণকারী হিসেবে এক তরুণকে চিহ্নিত করে বলা হয়, ওই যুবক নিষিদ্ধ সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের অপারেশন বিভাগের ‘গুরুত্বপূর্ণ সদস্য’ শরীফুল।
যেদিন ওই ভিডিও প্রকাশ করা হয়, তার আগে ভোররাতে ঢাকার খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া বাঁশপট্টি এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে শরীফের নিহত হওয়ার খবর জানায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, ৩০ বছর বয়সী এই যুবক সাকিব, সালেহ, আরিফ ও হাদী নাম ব্যবহার করে পরিচয় গোপন করে আসছিলেন। তাকে ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা ছিল।
এরপর ২১ অগাস্ট সেই একই ভিডিওতে আরও দুজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করে পুলিশ। পাশাপাশি আরও ছয়টি সিসিটিভি ভিডিও প্রকাশ করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মাসুদুর রহমান সে সময় বলেছিলেন, তারা ছয়জনকে চিহ্নিত করেছেন, যাদের মধ্যে একজন ‘এনকাউন্টারে’ মারা গেছে। বাকিদের তথ্য জানতেই ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।
আনসারউল্লাহ বাংলাটিমের ছয় সদস্যের একটি দল অভিজিতের উপর হামলায় জড়িত ছিল বলেও সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল।
শরীফ নামের এক সন্দেহভাজন নিহত হয় কথিত বন্দুকযুদ্ধে শরীফ নামের এক সন্দেহভাজন নিহত হয় কথিত বন্দুকযুদ্ধে পুলিশের সিসিটিভি ভিডিওতে দুই সন্দেহভাজন পুলিশের সিসিটিভি ভিডিওতে দুই সন্দেহভাজন ‘নিশ্ছিদ্র নজরদারি’
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ‘নিশ্ছিদ্র নজরদারি’ নিশ্চিত করতে পুলিশের এসবি, ডিবি, এবং কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানিয়েছেন।
ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “ধর্মীয় উস্কানিমূলক বই যেন মেলায় না আসে সেজন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
এই নজরদারি মুক্তচিন্তার লেখকদের জন্য বাধা হবে কি না– সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে কমিশনার বলেন, মুক্তচিন্তা ও নিরাপত্তা দুটি আলাদা বিষয়।
“আমরাও মুক্তচিন্তার বাইরে নই। তবে কোনো লেখনীতে সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দেওয়া হলে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী তা অপরাধ।”
মেলায় দর্শক-প্রকাশকদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
“নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই এবার তিনটি প্রবেশ পথ ও তিনটি বের হওয়ার পথ রাখা হয়েছে। এছাড়া তিনটি কন্ট্রোল রুম ও পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরাও থাকছে।”