প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ‘অলস’ অর্থ থেকে পাঁচ বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে ‘বাংলাদেশ সার্বভৌম সম্পদ তহবিল’ গঠনের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে সরকার। এই তহবিল গঠিত হলে সরকার এর অর্থ ‘জনস্বার্থে যে কোনো কাজে’ ব্যবহার করতে পারবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘বাংলাদেশ সার্বভৌম সম্পদ তহবিল’ গঠনে অর্থ বিভাগের প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
শফিউল আলম জানান, এই তহবিলের অনুমোদিত মূলধন হবে ১০ বিলিয়ন ডলার। বছরে দুই বিলিয়ন ডলার করে পাঁচ বছরে এই ১০ বিলিয়ন ডলার হবে। এই তহবিল গঠনে আইন তৈরির পাশাপাশি কাঠামোও তৈরি করা হবে।
“প্রাথমিকভাবে দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারে এই তহবিল গঠন করা হবে। আমাদের রিজার্ভ যিদি ৩০-৩২ বিলিয়ন ডলারের হয়, ওখান থেকে আমরা দুই বিলিয়ন ডলার নিলে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে না।”
অনেক দেশেই এ ধরনের তহবিল আছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, “এটা আমাদের বড় প্রয়োজন হয় যখন বিদেশিদের সাথে ম্যাচিং ফান্ড করি, আমাদের ডলার দিতে হয়।
“দেখা গেল যে… কোনো বিদেশি ব্যাংক আমাদের লোন দিল এবং বলা হল যে সরকার এত পারসেন্ট সমপরিমাণ ডলার দেবে, তখন এটা সাপোর্ট দেওয়ার জন্য আমাদের কোনো ব্যবস্থা থাকে না। এটা যদি হয় তাহলে আমাদের জন্য একটা ভালো সুবিধা হবে যে আমরা এখান থেকে ওই টাকাটা পুণর্ভরণ করতে পারব।”
এই তহবিলের বহুমুখী ব্যবহার হতে পারে জানিয়ে সচিব বলেন, সরকার ‘জনস্বার্থে’ যে কোনো বিনিয়োগে এর অর্থ ব্যবহার করতে পারবে। যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে তা কাজে লাগানো যাবে।
আইন ও কাঠামো তৈরি হলে সার্বভৌম সম্পদ তহবিল গঠনের এই প্রস্তাব পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, “বর্তমানে বাইরের ব্যাংক থেকে ইনফরমালি লোন নেওয়া হয়। এখন একটা সিস্টেমের মধ্যে আসবে। আইন হলে বিস্তারিত জানা যাবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ উত্তরোত্তর বাড়ছে, সোমবার এর পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার।
খাদ্য মজুদ সন্তোষজনক থাকায় এই বিপুল পরিমাণ ডলার অলস রাখার সমালোচনা হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। তা বিনিয়োগে আনতে সুপারিশও করে আসছেন অর্থনীতিবিদরা।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিভিন্ন সময়ে রিজার্ভ কাজে লাগানোর কথা বলে এলেও গত ডিসেম্বরে সাংবাদিকদের সামনে প্রথমবারের মত তিনি সার্বভৌম সম্পদ তহবিল করার পরিকল্পনা প্রকাশ করেন।
সেদিন তিনি প্রাথমিকভাবে ১০০ কোটি ডলার নিয়ে ৫০০ কোটি ডলারের এই তহবিল করার কথা বললেও মন্তিসভায় তোলা প্রস্তাবে ওই অর্থের পরিমাণ দ্বিগুণ করা হয়েছে।
মুহিত সেদিন বলেন, বড় প্রকল্পের জন্য বিদেশ থেকে টাকা ঋণ না করে সরকার এই তহবিল থেকে অর্থ নিতে পারবে। তাতে ঋণের সুদ বাংলাদেশ ব্যাংক পাবে; অর্থও দেশে থাকবে। বিষয়টি দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী সে সময় জানান, রিজার্ভ থেকে একটি অংশ সরিয়ে এই ‘সভরেইন ফান্ড’ হবে, যাতে সরকার বড় প্রকল্পে প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যবহার করতে পারে। সুদের হার কী হবে, কীভাবে অর্থ শোধ করা হবে, সেসব বিষয় পরে ঠিক করা হবে।