প্রতিবেদক : পদ্মাসেতু মামলায় বিশ্ব ব্যাংকের হারের পর বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর আস্থা ফেরাতে বিশ্ব ব্যাংককে ‘পদক্ষেপ নিতে হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলে, “বিশ্ব ব্যাংককে আমাদের আস্থা অর্জন করতে একটা ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশ মনে করতে পারে যে, কোনো অন্যায় হলে বিশ্ব ব্যাংক তার প্রতিকার করে।”
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের জন্য চুক্তি করেও বিশ্ব ব্যাংক পরে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে তা বাতিল করে। তাদের বাদ দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নেই এখন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ তদারকির পাঁচ কোটি ডলারের কাজ পেতে কানাডীয় কোম্পানি এসএনসি-লাভালিনের কর্মীরা বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে সে দেশের আদালতে মামলা হয়েছিল। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কানাডার আদালত গত ১০ ফেব্রুয়ারি ওই মামলার তিন আসামিকে খালাস দেয়।
রায়ে বলা হয়, মামলায় প্রমাণ হিসেবে যেগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলো ‘অনুমানভিত্তিক, গাল-গল্প ও গুজবের বেশি কিছু নয়’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই বলে আসছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগ তোলা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ এবং এতে বাংলাদেশিরাও জড়িত ছিলেন। সম্প্রতি সংসদে তিনি বলেন, হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন আটকেছিলেন নোবেলজয়ী বাংলাদেশি মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাতে বাংলাদেশের এক সম্পাদকেরও ভূমিকা ছিল।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে ‘দুর্নীতির মিথ্যা গল্প’ বানানোর নেপথ্যে ‘প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের’ খুঁজে বের করতে হাই কোর্ট বুধবার একটি রুলও জারি করেছে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সন্দেহের বশে বিশ্ব ব্যাংক যে আচরণ করেছে, তার প্রতিকার চায় বাংলাদেশ।
“আপনারা জানেন, ১৪ দল এক বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। প্রতিকার ক্ষতিপূরণ দিয়েও হতে পারে। যে সব কর্মকর্তা আমাদের বিরুদ্ধে এই অবিচার করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েও প্রতিকার করতে পারে।”
বাংলাদেশের কাছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে, যাদেরকে দোষারোপ করেছে- তাদের কাছে বিশ্ব ব্যাংককে ক্ষমা চাইতে হবে বলে সংসদে দেওয়া বক্তব্যে এখনো অটল আছেন বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ওই মামলার কারণে ক্ষতিগ্রস্তরা চাইলে বিশ্ব ব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নিতে পারেন।
“বাংলাদেশ যখন বিশ্ব ব্যাংকের সদস্য হয়, তখন বিশ্ব ব্যাংকের সাথে একটি এগ্রিমেন্ট হয়। ঋণ বাতিল করলে বিশ্ব ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না বলে কোনো বিধান সেই চুক্তিতে আছে বলে আমার মনে হয় না।
“এটাও আমি স্পষ্টভাবে বলছি, বিশ্ব ব্যাংক আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কেউ যদি মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে কারও সম্মানহানি করে, তাহলে ওই ব্যক্তি নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নিতে পারেন।”
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং সম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন আইনমন্ত্রী। বিচার প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ওই অনুষ্ঠান হয়।
অনুষ্ঠানে বিচারকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, “সহকারী জজ হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন, এরপর অনেক সময় চলে গেছে। এর মধ্যে পৃথিবী পাল্টে গেছে। এই কোর্স আপনাদেরকে যুগোপযোগী হতে সাহায্য করবে।”
বিচার বিভাগ বর্তমান সরকারের আমলে ‘সম্পূর্ণ স্বাধীন’ দাবি করে আনিসুল হক বলেন, “বিচারিক কাজে হস্তক্ষেপ করতে আমরা সরকার গঠন করিনি। আমরা চাই মানুষ ন্যায়বিচার পাক, বিচার বিভাগ স্বাধীন না হলে সেটা সম্ভব না। গত ৪৬ বছরে অনেকক্ষেত্রে আমরা সেই ন্যায় বিচার পাইনি।
“এখন বিচার বিভাগের যে কাজ (মানুষকে ন্যায় বিচার প্রদানে), সেটা আপনারা করবেন। বিচার বিভাগ স্বাধীন হতে হলে বিচারকদের ব্যক্তিগত জীবনে আর্থিক স্বাধীনতা দরকার। এ কারণে আমরা ছোট্ট একটা অবদান হিসেবে বেতন বাড়িয়েছি।”
বিচারকদের কাজের সুযোগ সুবিধা বাড়াতে আদালত ভবন নির্মাণসহ সরকারের অন্যান্য উদ্যেোগের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন মন্ত্রী।
৪২ জন প্রশিক্ষণার্থীর অংশগ্রহণে এই কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক এবং বিচার প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদ উপস্থিত ছিলেন।